উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু
চিত্র: উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু।

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু:

সাধারনত মেধা-প্রবনতা, সৃষ্টি-ধর্মীতা এবং বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে অধিকাংশ শিক্ষাবিদ উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন বা প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ পরিবার সমাজ ও বিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থী বা শিশুটি সর্বোচ্চ মেধা-প্রবনতার স্বাক্ষর রাখতে পারে তারাই হল উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন বা প্রতিভাবান শিক্ষার্থী।

Martinsion (১৯৭৩) মনে করেন, উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা হল বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে ৩ শতাংশের অন্তর্ভুক্ত। এরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম এবং এদের চাহিদা এত বেশি যে বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম এদের জন্য অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের হয়ে থাকে।

আরও দেখুনঃ শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

এরা খুব দ্রুত শিক্ষা অর্জন করতে পারে,তাদের কার্যক্রমের ধরন হয় মৌলিক এবং তাদের সমবয়সীদের তুলনায় উন্নতমানের।

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য:

যদিও প্রত্যেক উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু এক ধরনের বৈশিষ্টের অধিকারী নয়, তবুও কতগুলো সাধারন বৈশিষ্ট্য আপাততভাবে তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়:

১. এদের ছোটবেলায় দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয়। এরা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে হাটতে শেখে।

২. এদের ভাষার বিকাশও দ্রুত হয়। প্রায় দুইবছর বয়সের মধ্যে অনেক কথায় এরা পরিষ্কারভাবে বলতে পারে।

৩. কৌতুহল প্রবৃত্তি বেশি থাকায় এরা সব জিনিস সম্পর্কে প্রশ্ন করে। এদের জানার আগ্রহ বিশেষভাবে বস্তুর সামগ্রিক দিকের উপর হয়। কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা নিয়ে এরা সন্তুষ্ট থাকতে পারে না।

৪ এরা খুব দ্রুত পড়তে ও গননা করতে শিখে। অনুকরনের দ্বারা এরা খুব সহজে লিখতেও পারে।

৫. এদের অনুরাগের ক্ষেত্র অনেক বিস্তত হয়।

৬. প্রথম বয়সে এরা বাড়ির বিভিন্ন কাজেও খুব বেশি পরিমানে আগ্রহ দেখায় এবং বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিলে খুসি হয়।

৭. এদের রসবোধ (Sense of humour) খব বেশি থাকে এবং খুব সুক্ষভাবে তারা তাদের এই রসবোধকে প্রকাশ করতে পারে। ৮. প্রাক্ষোভিক দিক থেকেও এরা অনেক বেশি পরিপক্ক হয়।

৯. অনেক সময় এরা এদের চেয়ে বেশি বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে, কারন সম বয়সীদের মধ্যে তাদের মানসিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছেলে তারা সব সময় খুজে পায় না।

১০. এরা খুব কম বয়স থেকে যুক্তিসম্পন্ন কথা বলে।

১১. বিদ্যালয়ে লক্ষ্য করা যায় সম্স্ত রকম বিষয়ে এদের বোধগম্যতা বেশি।

১২. এদের মনোযোগের পরিসর বিস্তৃত হয় এবং মনোযোগের স্থায়িত্বও বেশি হয়।

১৩. বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, এরা সারাজীবন ধরে তাদের বুদ্ধির উন্নত মান বজায় রাখে।

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা:

উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষামূলক চাহিদার তৃপ্তি সাধনের জন্য আধুনিক শিক্ষা তাত্বিক ও মনোবিজ্ঞানীরা কয়েকটি পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন। এই পন্থাগুলো শিক্ষকরা অনুসরন করে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারেন।

আরও দেখুনঃ একজন ছাত্রের অনগ্রসর হওয়ার কারণ

১. শিক্ষাপ্রক্রিয়ার দ্রুতিকরন:

শিক্ষাদানের প্রক্রিয়াটিকে সাধারন শিশুদের তুলনায় অধিকতর দ্রুত করে তোলা উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাগত সমস্যা সমাধানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায়। এই প্রক্রিয়াটি নানাভাবে সম্পন্ন করে যেতে পারে।

ক. সাধারন বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা যে বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে বয়সের আগে উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করালে ভাল ফল পাওয়া যায়।

খ. এদের ডবল প্রমোশনের ব্যবস্থা করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

গ. অনেক সময় এদের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত শ্রেনীবর্ষের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

২.পাঠ্যক্রমের সমৃদ্ধিকরণ:

উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা প্রক্রিয়া দ্রুতি করনের পরিবর্তে অনেকে শিক্ষাক্রম সমৃদ্ধিকরণের পন্থাটিকে সমর্থন করেন। সমৃদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াটিকে বিভিন্ন পন্থায় বাস্তবে রূপ দেয়া যেতে পারে।
ক. শ্রেণীতে শিক্ষক এই ধরনের ছেলে মেয়েদের পাঠ্যক্রম এর বাইরে কাজ পড়া ইত্যাদি দিতে পারেন।
খ. শিক্ষক ক্লাসের মধ্যে এদের একটি স্বতন্ত্র দল তৈরি করতে এবং এদের পৃথকভাবে এমন সব কাজ ও সমস্যার ভার দিতে পারেন যেগুলি করতে তাদের উন্নত বুদ্ধি প্রয়োগ করবার দরকার পড়ে।
গ. ক্লাসের পড়া ছাড়াও অতিরিক্ত কোন বিষয় যেমন কোন একটি বিদেশী ভাষাও তাদের শিখতে দেয়া যেতে পারে। ঘ.এদের পড়াশোনার মান যাতে উন্নত হয় এবং এরা স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কাজকর্ম উদ্ভুদ্ধ হয়।
৩. বিশেষ ক্লাস ও স্কুলের আয়োজন:
এদের বিশেষ ক্লাস দু- ধরনের হতে পারে-
প্রথমত: তাদের সাধারন ক্লাসে রেখে স্বতন্ত্রভাবে অতিরিক্ত পাঠ্যক্রম পড়ানো।
দ্বিতীয়ত: এদের একেবারেই আলাদা করে নিয়ে পুরো পাঠ্যক্রমের জন্য স্বতন্ত্র ক্লাস গঠন করা।
শেয়ার করুন

Similar Posts

0 Comments

  1. Mijanur Rahman Polash says:

    thanks

  2. Mijanur Rahman Polash says:

    thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *