শিক্ষার্থী শিক্ষক

শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক
শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক

শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক (Teacher as a learner):

উত্তম শিক্ষক অবশ্যই উত্তম ছাত্র হবেন। শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না বরং তিনি সব সময়ই ছাত্রদের ভাল-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে সক্ষম হবেন এবং একারণেই তিনি শিশুদের মনের একান্ত কাছাকাছি থাকবেন।

শিক্ষাদান কার্যক্রমকে সফল করে তােলার জন্য তথা শিক্ষার্থীদের চাহিদা মিটিয়ে তাদের বিকাশকে সুষ্ঠু পথে পরিচালিত করার জন্য শিক্ষকের অন্য বিভিন্ন গুণাবলি অর্জনের সাথে সাথে ছাত্রত্ব গ্রহণের বৈশিষ্ট্যটিরও চর্চা করতে হবে। এটি শিক্ষাদানকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-

১. জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলি একটির সাথে অপরটি সম্পর্কিত। শিক্ষক কেবল নিজ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হলেই চলেনা, তাকে অন্য বিষয় সম্পর্কেও জানতে হয়। জ্ঞানের বিভিন্নমুখী ধারার সাথে শিক্ষকের পরিচয় থাকলে তিনি সার্থকভাবে শ্রেণী পাঠদান সম্পন্ন করতে পারেন।

২. শিক্ষা একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানাের জন্য শিক্ষককে প্রতিনিয়ত নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হতে হবে। অধ্যয়নের মাধ্যমেই তা সম্ভব।

৩. নিজ বিষয় ও অন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষকের জ্ঞান থাকলে শিক্ষকের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় থাকে। দৃঢ় বিশ্বাস সম্পন্ন শিক্ষক নির্ভয় হন, তার মধ্যে কোন দোদুল্যমানতা কাজ করে না।

৪. শিক্ষার্থীরা সব সময় শিক্ষককে সর্বপ্রকার জ্ঞানের অধিকারী হিসাবে বিবেচনা করে। তাই সব ব্যাপার শিক্ষকের কাছ থেকে জানার আগ্রহ তাদের প্রবল থাকে। শিক্ষক তাদের কল্পনাপ্রসূত প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে শিক্ষক সম্পর্কে তাদের বিরূপ ধারণা গড়ে ওঠে।

আরও দেখুনঃ একজন আদর্শ শিক্ষকের কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার

৫. সমসাময়িক পরিবর্তনশীল বিশ্বের নানা খবর শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির মাধ্যমে অবগত হচ্ছে। তাদের অনুসন্ধিৎসা ক্রমাগত বাড়ছে। কাজেই শুধু নিজ বিষয় বা বিদ্যালয়ের পাঠ্য বিষয় সংক্রান্ত জ্ঞান থাকলেই শিক্ষকের চলবেনা, পরিবর্তনশীল বিশ্বের নানা খবরাখবর তাকে রাখতে হবে এবং এগুলাের উপযুক্ত ব্যাখ্যা তাকে জানতে হবে।

এক্ষেত্রে শিক্ষককে অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী হতে হবে। তার অনুসন্ধানী মনই তাকে এ ধরনের বিষয়গুলাে সম্পর্কে তথ্য সমৃদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসার জবাব দিতে সহায়তা করবে।

শিক্ষকতার মতাে মহান পেশায় নিয়ােজিত ব্যক্তিকে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে হিসেবী হলে চলবেনা। পুঁথিগত বিদ্যা ও সার্টিফিকেট প্রাপ্তিই জ্ঞান অর্জনের একমাত্র মানদণ্ড নয়, একথাটি শিক্ষককে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। জ্ঞান অর্জন কোন সীমা বা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয় একথাটি মনে রেখে শিক্ষককে বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডারের জগতে নিয়ত অবগাহন করতে হবে।

শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক (Teacher student interaction):

প্রাচীনকালে জ্ঞান আহরণই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞান দান করতেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

আরও দেখুনঃ অনগ্রসর শিক্ষার্থী কারা, অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য

ফলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের প্রধান কাজ হলাে জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসাবে তৈরি করা এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তােলা। আধুনিক শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শিক্ষার্থী আর শিক্ষকের স্থান শিক্ষার্থীর পাশে তার সহায়ক হিসাবে।

সুতরাং আধুনিক মনােবিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আরও দেখুনঃ একজন ছাত্রের অনগ্রসরতা দূর করার উপায়সমূহ

শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যাবলি:

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলাে হলাে:

১. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাত্মতার মনােভাব গড়ে তােলা।

২. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযােগিতা বৃদ্ধি করা।

৩. শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনােযােগ, আগ্রহ, প্রেষণা, মনােবল ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।

৪. শিক্ষার্থীদের বিবিধ সমস্যা সঠিকভাবে অনুধাবন ও নিরসন করা।

৫. শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহানুভূতিপূর্ণ মনােভাব সৃষ্টি করা।

৬. শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশ এবং তাদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *