সুষম খাদ্য কি এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সুষম খাদ্য কি? এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সুষম খাদ্য কি? এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রতিটি প্রাণীই খাদ্য গ্রহন করে থাকে। মানুষও তার ব্যতিক্রম না। খাদ্য আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ রহমত। খাদ্য গ্রহন ছাড়া মানুষের জীবন অচল। আবার সব খাদ্য মানুষের জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে না। কিছু খাদ্য মানুষের শরীরের জন্য উপকারী আবার কিছু খাদ্য মানুষের শরীরের জন্য অপকারী। তাই সকল প্রকার খাদ্য মানুষের গ্রহন করা ঠিক না। আমরা এখন জানব মানব দেহের জন্য খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তার বিস্তারিত রূপ।

সুষম খাদ্য: যে খাদ্যে সকল প্রকার খাদ্য উপাদান একটি নির্দিষ্ট পরিমান ও সঠিক অনুপাতে বিদ্যমান থাকে এবং দেহে যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পুরণ করে তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্যের মধ্যে,খাদ্যের সকল পরিমান উপাদান একটি সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। সুষম খাদ্য মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য গ্রহনে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সুষম খাদ্যের উপাদান: সুষম খাদ্যের মূলত ৬টি (ছয়টি) উপাদান। এই ছয়টি উপাদান যদি কোন খাদ্যের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তবে সেগুলোকে সুষম খাদ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

উত্তম সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো হল:

  • কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা
  • প্রোটিন বা আমিষ
  •  ফ্যাট বা চর্বি
  • ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ
  • খনিজ লবন ও
  • পানি।                                                                                                                         
সুষম খাদ্য
চিত্র: সুষম খাদ্য

নিম্নে সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো আলোচনা করা হল:

  • কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা: কার্বোহাইড্রেট(Carbohydrate) হল ইংরেজী শব্দ। যার বাংলা প্রতিশব্দ হল শর্করা। কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ। যা হল কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বিত রূপ। এটি একটি জৈব যৌগ। যাতে হাইডোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ২:১। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাকে সুগার বা চিনিও বলা হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ হল শরীরে শক্তির যোগান দেওয়া। কার্বোহাইড্রেট শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। কার্বোহাইড্রেট শরীরে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। 

“এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের সম্পূর্ণ দহনে ৪.০ ক্যালরী তাপশক্তি উৎপন্ন হয় ”

শর্করা প্রোটিন ও ফ্যাট সংশ্লেষনে অংশগ্রহন করে থাকে, এজন্য শর্করাকে ”প্রোটিন বাচোয়া” খাদ্য বলে। শর্করার ফলে শরীরে তাপনের উৎপত্তি হয়। যা মানুষকে কাজ করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন এর উৎস কি?

  • প্রোটিন বা আমিষ: অ্যামাইনো এসিডের পলিমার দাড়া বেষ্টিত উচ্চ ভরবিশিষ্ট নাইট্রোজেন যুক্ত জটিল যৌগকে প্রোটিন বা আমিষ বলে। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন সুস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন মূলত কোষ গঠনে সাহায্য করে। অঙ্গের গঠন, কার্যকারীতা ও নিয়ন্ত্রনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম এবং অনেক দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন বিদ্যমান থাকে।

“একটি ডিমের মধ্যে প্রায় ৬ (ছয়) গ্রাম পুষ্টি বিদ্যমান থাকে ”

উদ্ভিদ ও প্রাণীভিত্তিক উভয় খাবারেই প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। তবে দূগ্ধজাত খাবারগুলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে শিম ও শাক-সবজির মধ্যেও প্রোটিন থাকে। বাদাম ও বীজের মধ্যেও প্রোটিন থাকে। প্রোটিন ডায়েটের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

  • ফ্যাট বা চর্বি: সহজ কথায় বলা যায়, চর্বি হচ্ছে প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ যা প্রাণীজ শরীরে স্তর আকারে বা ত্বকের নিচে কোন অর্গানের চারপাশে জমা হয়ে থাকে।

অন্যভাবে বলা যায়, প্রাকৃতিক গ্লাইসেরল এস্টার এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ, যা সাধারনত রুমের তাপমাত্রায় জমাট হয়ে কঠিন অবস্থায় থাকে এবং প্রাণীজ ও উদ্ভিদ জগতের প্রধানতম উপাদান।

আরও দেখুনঃ পানির অপর নাম জীবন নয়, বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।

মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর মধ্যে চর্বি অন্যতম। মস্তিকের শতকরা ৬০ শতাংশ ফ্যাট দিয়ে তৈরি। ফ্যাট দেহের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং শরীরকে বিভিন্নভাবে সুরক্ষিত রাখে। অনেকে মনে করে চর্বি শুধু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

কিন্তু মানব দেহে চর্বির উপকারীতাও রয়েছে।খাদ্য হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দৈনিক ৫০ গ্রাম ফ্যাট প্রয়োজন। মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া সুষম খাদ্য তালিকায় খদ্যের সকল উপাদান থাকা উচিৎ। কোনটাই বাদ দেওয়া ঠিক না।

”১গ্রাম ফ্যাট থেকে প্রায় ৯ ক্যালরী শক্তি পাওয়া যায়”।

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ:

স্বাভাবিক খাদ্যের মধ্যে যে উপাদানগুলো মানুষের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করে তাকে ভিটামিন বলে। ভিটামিন মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। মানব দেহে ভিটামিনের অভাব হলে অনেক রোগ দেখা যায়। মানুষের দেহের মধ্যে তিন ধরনের ভিটামিন সন্জিত থাকে। যেমন:

  • প্রোভিটামিন
  • অ্যান্টিভিটামিন
  • সিউডোভিটামিন
  1. প্রোভিটামিন: এক প্রকার যৌগ থেকে যে ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় তা হল প্রোভিটামিন। প্রোভিটামিন হল ভিটামিন-এ এর বিটা ক্যারোটিন।
  2. অ্যান্টিভিটামিন: আমাদের শরীরে যে যৌগগুেলো ভিটামিনের কাজে বাধার সৃষ্টি করে তাকে অ্যান্টিভিটামিন বলে। যেমন ভিটামিন-বি এর অ্যান্টিভিটামিন হিসেবে পাইরিথিয়ামিন।
  3. সিউডোভিটামিন: যে সকল জৈব যৌগগুলো ভিটামিন এর পরিপূরক, কিন্তু কাজের দিক থেকে ভিটামিন এর সমগুন তাকে সিউডোভিটামিন বলে। মিথাইল কোবালামিন, Vitamin-B2 এর সিউডোভিটামিন।

”মানুষের শরীরের জন্য Vitamin-A, Vitamin-B, Vitamin-C, Vitamin-D, Vitamin-E অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”।

ভিটামিন দেহের বৃদ্ধি করে এবং দেহকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। ভিটামিন-ডি শরীরের অস্থি গঠনে সাহায্য করে থাকে। ভিটামিন-ই গর্ভপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।

সুষম খাদ্যে ভিটামিনের যোগান

  • খনিজ লবন: ভাত ও তরকারীর সাথে আমরা দৈনন্দিন যে লবন খাই, এছাড়াও আরও অনেক প্রকার লবন আছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। খনিজ লবন আমাদের দেহে শর্করা ও আমিষের মত তাপ উৎপন্ন করে। দেহকোষ ও দেহ তরলের জন্য খনিজ লবনের বিকল্প নাই।
  • ক্যারসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, আয়োডিন, লৌহ, সালফার খাদ্যের সাথে দেহে প্রবেশ করে এবং দেহ গঠনে সাহায্য করে। অস্থি, দাত, এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবন অপরিহার্য। খনিজ লবন স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে।

আরও দেখুনঃ শিশুর দৈহিক বিকাশের লক্ষণসমূহ

তাই বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে বলেই দেহ গঠনে খনিজ লবনের গুরুত্ব অপরিসীম।

  • পানি: মানব দেহের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া মানব দেহ অচল।  মানব দেহের রক্ত, মাংস, স্নায়ুপিন্ড,হাড়, দাত, অস্থি, মজ্জা, ত্বক সবকিছুর জন্য পানি অপরিহার্য। পানি মানুষকে বেচে থাকতে সাহায্য করে। এজন্য পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষের পৃথিবীতে বেচে থাকা দুষ্কর। মানুষের দেহের অভ্যন্তরীন যাবতীয় কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

”মানব দেহের প্রায় ৬০-৭০% পানি এবং একজন সুস্থ লোকের দৈনিক  কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে”।

মানুষের শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে পানির বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করলে মানুষের তৃষ্ণা নিবারন হয়। গাছের গোড়ায় পানি না দিলে যেমন গাছ শুকিয়ে যায়, তেমনি পানি পান না করলে আমাদের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন ব্যাহত হয়।

সঠিক নিয়মে পানি পান না করলে আমাদের শরীরের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকভাবে নির্গত হয় না। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একজন মানুষকে প্রতিদিন গড়ে সর্বনিম্ন ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তা না হলে জারন-বিজারন ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে।

নিম্নে খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল:

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:  তেল ও মবিল ছাড়া যেমন যন্ত্র অচল ঠিক তেমনি খাদ্য গ্রহন ছাড়া মানুষ অচল। খাদ্য গ্রহন না করলে মানুষের শরীরে কোন শক্তি পায়। খাদ্য গ্রহন ছাড়া মানুষ যেকোন কাজ করতে ব্যর্থ হবে। খাদ্য গ্রহন হল সকল শক্তির উৎস। আজন্মকাল থেকে মানুষ খাদ্য গ্রহন করে আসছে। কিন্তু সুষম খাদ্য গ্রহনের উপর মানুষের গুরুত্ব খুবই কম। সুষম খাদ্য গ্রহন মানুষের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার প্রতি কেউ খেয়াল করে না।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব: সুষম খাদ্য দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুষম খাদ্য দেহের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে থাকে। সুষম খাদ্য শরীরের ডায়েটকে সঠিক রাখে। সুষম খাদ্য গ্রহন ছাড়া ডায়েট কন্ট্রোল করা অসম্ভব।

স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে ব্যালেন্স ডায়েট সুষম খাবারকে বোঝায়। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন প্রতিটি মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য শরীরকে পুষ্ট রাখে এবং দেহে শক্তি যোগায়। সুষম খাদ্য ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগ কমাতে সাহায্য করে থাকে। সুষম খাদ্যের মধ্যে খাদ্যের সকল প্রকার উপাদান বিদ্যমান থাকতে হবে। আমরা সবাই চেষ্ঠা করব প্রয়োজন মাফিক সুষম খাবার গ্রহন করার।

সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা:  আমাদের কমর্ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সুষম খাবার গ্রহন করতে হবে। কর্মক্ষম থাকার জন্য আমাদের সঠিকভাবে পুষ্টি উপাদান গ্রহন করতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহন না করলে আমাদের শরীর দূর্বল হয়ে গড়ে এবং আমরা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। শিশুর অপুষ্টিজনিত রোগ বৃদ্ধি পায় এবং বিকাশ ব্যাহত হয়।

অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনের ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়, যার কারনে আমাদের সুষম খাদ্য গ্রহন করতে হবে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুর জন্মের ৬ মাস মায়ের দুধে যথেষ্ট। কিন্তু ৬ মাস পরে শিশুকে যথাযথ পরিমান সুষম খাবার দিতে হবে, তা না হলে শিশুর মেধা বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা অনুযায়ী আমরা এটাই বলতে পারি যে, সুষম খাদ্য মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রয়োজন মাফিক সবাই চেষ্ঠা করব সুষম খাদ্য গ্রহন করার।

খাদ্য সম্পর্কিত আরও বিশেষ বিশেষ টিপস পেতে আমাদের সংঙ্গেই থাকুন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

শেয়ার করুন

Similar Posts

23 Comments

  1. Hafizul islam says:

    Very nice post. Aaro update chai.

  2. Hafizul islam says:

    Very nice post. Aaro update chai.

  3. Md. Imran Hossain says:

    very important information.

  4. Md. Imran Hossain says:

    very important information.

  5. Mijanur Rahman Polash says:

    good information

  6. Mijanur Rahman Polash says:

    good information

  7. Md. Abdul Momin says:

    Very Good Information

  8. Md. Abdul Momin says:

    Very Good Information

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *