ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে
দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫৩৭ মিলিয়ন মানুষ, দাঁতের বয়স ২০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে তারা সকলেই ডাইবেটিস রোগে ভুগছেন। বর্তমানে বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কিনা অনেকেই জানতে চায়। ডায়াবেটিক চলে সাধারণত রক্তের মিষ্টির উপাদান বৃদ্ধি পায়। এবং শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। নিম্নে, ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে নাকি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডায়াবেটিস কি?
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগটি অনেক ভয়াবহ। সাধারণ মানুষের সুগারের মাত্রা ৭ পয়েন্টের নিচে হয়ে থাকে। রক্তে যদি সুগারের মাত্রা ৭ পয়েন্ট এর উপরে চলে যায় তাহলে ডায়াবেটিস বলে গণ্য করা হয়। ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ডায়াবেটিস কেন হয়?
রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়। সাধারণ মানুষের সুগারের মাত্রা ৭ পয়েন্টের নিচে হয়ে থাকে। ৭ পয়েন্ট এর বেশি সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস বলে গণ্য করা হয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমান দীর্ঘদিন বেশি থাকলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না।
এছাড়াও শরীরে থাকা ইনসুলিন সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়ে থাকে। এবং শরীরে কোন অংশে ক্ষত হলে সহজে ভালো হয় না।
ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ:
ডায়াবেটিস হলে আমাদের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। নিম্নে ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
- অতিরিক্ত প্রস্রাব
- তীব্র তৃষ্ণা
- দ্রুত ওজন হ্রাস
- প্রচন্ড ক্ষুধা
- বমি বমি ভাব
- দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভাব
- পেটে ব্যথা
- ঝাপসা দৃষ্টি
- অস্বাভাবিক বিরক্তি
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয় না?
মানুষের খাবারের সমস্যার কারণে বিশেষ করে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। যারা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খায় তাদের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। তবে কিছু খাবার রয়েছে সেগুলো খেলে ডায়াবেটিস হয় না। বিশেষ করে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সাফি সিরাপ এর উপকারিতা
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয় না? সেগুলো হল: সব ধরনের শাক, ডাল, পাতা দুধ, মাশরুম, বাদাম, লাল চাল, লাল আটা, ভুট্টা, খই, সকল ধরনের ফল ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?
ডায়াবেটিস হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়? নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
- খুব তৃষ্ণা পায়।
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।
- কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যায়।
- প্রদাহ জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া।
- ক্লান্ত বোধ হওয়া।
- শরীরের কোথাও ক্ষত হলে শুকাতে দেরি হওয়া
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে:
ডায়াবেটিসের বিভিন্ন টাইপ রয়েছে। টাইপ ১ ও টাইপ ২। টাইপ ১ অবস্থায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করলে ডায়াবেটিস চিরতরের নিরাময় হবে। কারণ এই সময় ডায়াবেটিসের মাত্রা ৭ থেকে ১০ পার্সেন্টের মধ্যে থাকে। এই অবস্থায় চিকিৎসা নিলে এবং সঠিক খাবার খেলে চিরতরে ডায়াবেটিস নিরাময় করা যায়।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হলে, ডায়াবেটিস যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। তাহলে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে।
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?
একজন মানুষের স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মাত্রা ৫.৭ থেকে ৭ পয়েন্ট হয়ে থাকে। যদি এইমাত্র অতিক্রম করে তাহলে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিসের মাত্রা ১৫ পয়েন্ট পার হয়ে যায় তাহলে বিপদ। সেই সময় রোগীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সবসময় ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়?
ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয় অনেকেই জানতে চায়। ডায়াবেটিস হয় সাধারণত রক্তে মাত্রা বৃদ্ধি পেলে। এই কারণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে, বাদাম, শিম জাতীয় খাবার, ভুট্টা, বাঙ্গি, তরমুজ ইত্যাদি খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরও পড়ুনঃ সিজারের পর পেট কমানোর উপায়
অনেক সময় এসব খাবার খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস মাত্রা বৃদ্ধি পায় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন কখন নিতে হয়?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন নিতে হয় অনেক সময়। কারণ অনেক সময় রক্তের শর্করার পরিমাণ আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। যার ফলে কিটোএসিডোসিস ও হাইপারঅসমলার কমা নামের জীবননাশী জটিলতা হয়। এরকম অবস্থায় ইনসুলিন দিতে হয় রোগীকে।
ইনসুলিন ব্যবহার করলে খুব সহজে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে আসে। এবং খুব সহজেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। অনেক সময় শরীরে কোন ধরনের ক্ষত হলে ক্ষত শুকানোর জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি রক্ত দান করতে পারে?
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে অনেকে জানতে চাই, ডায়াবেটিস রোগীরা কি রক্ত দান করতে পারে? হ্যাঁ ডায়াবেটিস রোগীরাও রক্ত দান করতে পারবে।
তবে যেই সময় রক্তদান করবে সেই সময় রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। যদি ডায়াবেটিস রোগী অতিরিক্ত ইনসুলিন নিয়ে থাকে তাহলে রক্তদান করতে পারবে না। এছাড়াও যদি কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে ও রক্তদান করতে পারবে।
ডায়াবেটিস কি চিরতরে দূর করা যায়:
প্রতিটা মানুষের ডায়াবেটিস রয়েছে। কারণ প্রতিটা মানুষের শর্করার মাত্রা রয়েছে। শর্করার মাত্রা ৭ পয়েন্ট এর বেশি হয় তাহলে ডাইবেটিস হিসেবে গণ্য করা হয়। এ কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় চিরতরে ভালো করা যায় না। কারণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে আবার ডায়াবেটিস মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়:
সঠিকভাবে চলাফেরা করলে এবং খাবার খেলে ডায়াবেটিস কমানো যায়। নিম্নে, ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় তুলে ধরা হলো:
- শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণ সালাত খেতে হবে।
- নিয়মিত হাঁটার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে।
- শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- দারচিনি খেতে হবে।
- মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।
- ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে।
- ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- সাদা চিনি
- অতিরিক্ত ভাত
- চিনি জাতীয় খাবার
- মাটির নিচে সবজি
- আম
- আনারস
- তরমুজ
- কলা
- সবেদা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় কি?
সঠিকভাবে চলাফেরা করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় কি? তুলে ধরা হলো:
- সঠিক সময় খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ধূমপান বর্জন করতে হবে।
- এক টানা অধিক সময় বসে কাজ করা যাবে না।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়:
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। বিশেষ কিছু খাবার খেলে ডায়াবেটিস কমানো যায়। নিম্নে, ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- পেঁয়াজ
- নয়ন তারা উদ্ভিদ
- পনির ফুল
- করলা
- দারচিনি
- অ্যালোভেরা
- চর্বিযুক্ত মাছ
- ডুমুর।
এই সাব খাবার খেলে ডায়াবেটিস প্রাকৃতিক ভাবে কমানো যায়।
শেষ কথা: ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে
ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, বর্তমান সময়ের মানুষ অনিয়মিত জীবন যাপন করে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সঠিক ভাবে চলাফেরা করলে ডায়াবেটিস কমানো যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।