শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি

বর্তমান সময়ে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ হচ্ছে। এই রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শ্বাসকষ্ট। শ্বাসকষ্ট কোন রোগ না এটা অন্য রোগের উপসর্গ। শ্বাসকষ্ট হলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। বুকের পাঁজর ওঠানামা করে। 

শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি

শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি? আমরা অনেকেই জানিনা। শ্বাসকষ্ট সাধারণত হয়ে থাকে বায়ু দূষণের কারণে। শ্বাসকষ্ট হলে ফুসফুস ছোট হয়ে যায় এবং শ্বাসনালী চিকন হয়ে যায়। 

যার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। নিম্নে, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি? সেগুলো তুলে ধরে আলোচনা করা হলো।

শ্বাসকষ্ট কেন হয়?

শ্বাসকষ্ট কেন হয় আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। সাধারণত শ্বাসকষ্ট হয় হৃদপিন্ডের সমস্যার কারণে। হৃদপিন্ডের সমস্যা হলে রক্তনালী চিকন হয়ে যায়। যার ফলে ফুসফুসে রক্ত জমে এবং ফুসফুস কে ফুসফুসকে অনমনীয় করে তোলে। এছাড়াও অনেক সময় ফুসফুসে পানি জমে।

আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়

এইসব কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। এছাড়াও বায়ু দূষণের কারণে হাঁপানি। হাঁপানি হলে ফুসফুসে বাতাস ঢোকার এবং বের হওয়ার নালি শুরু হয়ে যায়। যার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ফুসফুসে সরবরাহ হয় না। এই কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। বিশেষ করে সর্দি লাগলে শ্বাসকষ্ট বেশি হয়।

শ্বাসকষ্ট কিভাবে বুঝবো?

বর্তমান সময়ে পরিচিত একটি সমস্যা হলো শ্বাসকষ্ট। শ্বাসকষ্ট হলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। বুকের মধ্যে অদ্ভুত শব্দ হয়। বুকের পাঁজর ওঠানামা করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত এবং ঘন হয়ে যায়। এছাড়াও দম বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।

শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি?

প্রতিটা রোগের লক্ষণ রয়েছে। ঠিক একই ভাবে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ রয়েছে। নিম্নে শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:

  1. একটানা অনেকক্ষণ হাচি হওয়া।
  2. ঘন ঘন হাচি হওয়া।
  3. সব সময় সর্দি লেগে থাকা।
  4. ধুলাবালির মধ্যে গেলে অনেক কষ্ট হওয়া।
  5. ঠান্ডা বা গরম লাগলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  6. বুকের মধ্যে শ্বাস আটকে যাওয়া।
  7. শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
  8. খাদ্যের প্রতি অনীহা আসা।

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণ কি?

শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে শ্বাসকটে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এলার্জি এবং হাঁপানি। এছাড়াও হৃদপিন্ডের সমস্যা, ফুসফুসের রোগ, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট হয়।এছাড়াও সর্দি হলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। হাঁপানি হচ্ছে শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়:

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

শ্বাসকষ্ট রোগী আমাদের আশেপাশে অনেক রয়েছে। এর কারণ দিন দিন বায়ু দূষণ হচ্ছে। এসব কারণে মানুষের হাঁপানি রোগ হচ্ছে। যার ফলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি সকলের জানা প্রয়োজন। শ্বাসকষ্টের করণীয় গুলো নিম্ন তুলে ধরা হলো:

  1. শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শান্ত এবং সংযত থাকার চেষ্টা করতে হবে। উত্তেজিত হলে শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যেতে পারে।
  2. যদি শ্বাসকষ্ট হঠাৎ গুরুতর বা জীবন হুমকির পরিস্থিতি শুরু হয় তাহলে জরুরি ওষুধ সেবন করতে হবে। এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  3. আরামদায়ক জায়গায় সোজা হয়ে বসতে হবে। যেন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা না হয়।
  4. রুমের মধ্যে থাকলে জানালা দরজা খুলে দিতে হবে। যেন প্রতাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়।
  5. যদি শ্বাসকষ্টের ওষুধ আপনার কাছে থাকে সাথে সাথে সেবন করুক।
  6. যেসব খাবার খেলে শ্বাসকষ্ট হয় সে সব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শ্বাসকষ্ট হলে কি করা উচিত?

শ্বাসকষ্ট হলে কি করা উচিত আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। শ্বাসকষ্ট হলে রোগীর দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়। না হলে রোগীর জীবননাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে সাথে সাথে তুলে বসাতে হবে। যেন শ্বাস-প্রশ্বাস খুব সহজে নিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত?

এছাড়াও শ্বাসকষ্টের জন্য যদি ইনহেলার ব্যবহার করে তাহলে সাথে সাথে ইনহেলার দিতে হবে। এতে করে শ্বাসনালীতে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হবে। এবং রোগী খুব সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবে। এবং শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কেন?

গর্ভাবস্থায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এর অনেক কারণ রয়েছে। গর্ভবতী অবস্থায় মেয়েদের শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে যার জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গর্ভবতী অবস্থায় জরায়ুর আকার বড় হয়ে যায়। 

যার কারণে পেটের উপর চাপ দেয়, ফলে ফুসফুসের উপর চাপ পড়ে। এতে করে ফুসফুসের অক্সিজেন সরবরাহ স্থান সংকোচন হয়ে আসে। এছাড়াও গর্ভবতী অবস্থায় পেটে রাখার বড় হয়ে যায়। যার ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের উপর চাপ পড়ে। এই সময় শ্বাসকষ্ট হয়।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

শ্বাসকষ্ট স্বাধীনতা বেশি হয় ঠান্ডা লাগলে। এজন্য যেসব খাবার খেলে ঠান্ডা লাগে সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবেনা নিম্ন তুলে ধরা হলো:

  1. ঠান্ডা দুধ
  2. পনির
  3. দই
  4. আইসক্রিম
  5. কচু
  6. কফি
  7. শুকানো ফল
  8. চিংড়ি

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়:

শ্বাসকষ্ট হলে তা সম্পূর্ণভাবে ভালো হয় না। তবে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করলে শ্বাসকষ্ট থেকে দূরে থাকা যায়। এর জন্য নিজের ক্ষমতাও অনুযায়ী শরীর চর্চা করতে হবে। যেসব খাবার খেলে শ্বাসকষ্ট হয় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

বাসার বাহিরে গেলে অবশ্যই মাক্স ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও বাইরের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে পানি খেলে সর্দি লেগে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়:

বর্তমানে বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হলে বুঝতে পারি না। বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায় নিম্ন তুলে ধরা হলো:

  1. বাচ্চার অস্থিরতা।
  2. ঘনঘন শ্বাস নেওয়া।
  3. বুকের মধ্যে শব্দ হওয়া।
  4. অবিরাম কান্না করা।
  5. গলা বসে যাওয়া।

শ্বাসকষ্ট হলে কি খেলে ভালো হবে:

শ্বাসকষ্ট রোগের কোন সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে শ্বাসকষ্ট দমিয়ে রাখা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ভালো করা যায় না। শ্বাসকষ্ট হলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেসব খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেসব খাবার খেতে হবে।

আরও পড়ুনঃ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়

সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া। কারণ কিছু কিছু খাবার খেলে কিছু রোগীর সমস্যা হতে পারে। কারণ অনেকের এলার্জি থাকে। যার কারণ সব ধরনের খাবার খাওয়া ঠিক না।

শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা সবচেয়ে উপযুক্ত:

শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু কোন চিকিৎসা করবে অনেকেই এই নিয়ে সমস্যায় ভোগে। কষ্ট হলে সম্পূর্ণভাবে কোন চিকিৎসায় ভালো হয় না। তবে শ্বাসকষ্ট দমিয়ে রাখা যায়। শ্বাসকষ্ট হলে এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক দুই ধরনের চিকিৎসা করা যায়।

আপনি যেই চিকিৎসায় অভ্যস্ত সেই চিকিৎসা নেওয়া ভালো। তবে মাথায় রাখতে হবে একসাথে এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা যাবে না। যে কোন এক ধরনের চিকিৎসা করতে হবে।

শেষ কথা: শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি

শ্বাসকষ্ট বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত রোগ। তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে শ্বাস কষ্ট হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। আবার অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বংশগতভাবেও হয়ে থাকে। উপরে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ গুলো কি কি তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছে।

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সঠিকভাবে জীবন যাপন করা। তাহলে শ্বাসকষ্ট থেকে দূরে থাকা সম্ভব। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts