ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়
একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তার ব্রেস্ট। বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট এর কারণে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ নারীদের বর্তমানে ব্রেস্ট টিউমার হচ্ছে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর নারীদের ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ব্রেস্ট টিউমার।
পশ্চিমা বিশ্বের নারীদের ব্রেস্ট টিউমার বেশি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদেরও এই সমস্যা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট টিউমার একটি আতঙ্কের নাম। এই কারণে, ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়, জেনে থাকা সকলের প্রয়োজন।
কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট টিউমার সনাক্ত করতে পারলে খুব দ্রুত চিকিৎসা করা সম্ভব। তাহলে খুব সহজেই টিউমার এর সঠিক চিকিৎসা করা যায়। যদি টিউমারের স্থায়িত্ব বেশি হয় তাহলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ব্রেস্ট টিউমার কি?
আমরা অনেকেই ব্রেস্ট বা স্তন টিউমার সম্পর্কে জানি না। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের নির্দিষ্ট বৃদ্ধি রয়েছে। মানব দেহের বৃদ্ধির কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে কোষ এর বৃদ্ধির মাধ্যমে। যখন কোন স্থানের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে তখন তাকে টিউমার বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ সকালে হাঁটার উপকারিতা বা সকালে খালি পেটে হাঁটার উপকারিতা
ঠিক একই ভাবে, যদি ব্রেস্ট এর কোষ গুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে তাহলে ব্রেস্ট টিউমার হয়। সঠিক সময় টিউমার চিকিৎসা না করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ
নারীদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ব্রেস্ট বা স্তন। তবে বিভিন্ন কারণে নারীদের ব্রেস্ট টিউমার হয়ে থাকে। ব্রেস্ট টিউমার হলে বাংলাদেশের মেয়েরা সহজে প্রকাশ করে না। যার কারণে টিউমার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কারণ, আজও বাংলাদেশের মানুষ সেক্সচুয়াল বিষয় গোপন রাখতে পছন্দ করে।
এই গোপনীয়তা রক্ষা করতে গিয়ে নারীরা ব্রেস্ট টিউমারে ভোগে। আস্তে আস্তে টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এইভাবে ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই, ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে:
- অতিরিক্ত জন হওয়ার ফলে।
- ভুল মাপের ব্রা পরিধান করলে।
- ঠিকমতো বাচ্চাদের দুধ না খাওয়ালে।
- ব্রেস্ট ভালো করে পরিষ্কার না রাখলে।
- বংশগত কারণে।
- শারীরিক মিলনের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে।
- ধূমপান বা মদ্যপান করলে।
ব্রেস্ট টিউমার মানেই কি ক্যান্সার?
মানুষের মধ্যে একটু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে টিউমার মানে ক্যান্সার। কিন্তু এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। যেমন অনেকে বলে ব্রেন টিউমার আবার অনেকে বলে ব্রেন ক্যান্সার। দুইটা একই নয়। টিমার হচ্ছে একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু ক্যান্সার একটি ঝুকিপূর্ণ। নিম্নে টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো:
টিউমার হচ্ছে কিছু অস্বাভাবিক কোষের সমাবেশ। শরীরের কোন অংশে যদি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে তাহলে সেখানে টিউমার হয়। টিউমার হওয়ার ফলে ওই স্থান উচু হয়ে থাকে। এবং উচু স্থান শক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যান্সার সম্পন্ন আলাদা। ক্যান্সার হচ্ছে শরীরের কোন অংশে ঘায়ের সৃষ্টি করা।
ক্ষতস্থানে বিশেষ করে ক্যান্সার হয়ে থাকে। টিউমার থেকেও ক্যান্সার হয়ে থাকে। টিউমার কে ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপ বলে মনে করা হয়। যদি অনেকদিন যাবত ব্রেস্ট টিউমার হয়ে থাকে তাহলে ওই স্থানে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থকে। তবে টিউমার ও ক্যান্সার সম্পন্ন ভিন্ন রোগ।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রতিটা রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। ঠিক একই ভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজের মেয়েরা এই ব্যাপার গুলো নিয়ে খুব লজ্জাবোধ করে। যার কারণে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ কোন রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে খুব সহজে সুস্থ হওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ:
- ব্রেস্ট টিউমারের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে, ব্রেস্ট এর মধ্যে শক্ত পিন্ড অনুভব হওয়া।
- স্তনের নির্দিষ্ট কোন স্থানের রং পরিবর্তন হওয়া বা চুলকানো।
- স্তনের বোটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন। যেমন: বোটা শক্ত হয়ে যাওয়া, ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বা অতিরিক্ত কালো হওয়া।
- স্তন ব্যথা হওয়া বা স্তনের বোটায় ঘায়ের সৃষ্টি হওয়া।
উপরে যেসব লক্ষণের কথা বলা হলো এসব ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এই ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ব্রেস্ট টিউমার থেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা
ব্রেস্ট ক্যান্সার সাধারণত হয়ে থাকে ব্রেস্ট টিউমার থেকে। বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সতর্কতা অবলম্বন না করা। কারণ ব্রেস্ট মেয়েদের একটি সেনসিটিভ অঙ্গ। যদি কোন ভাবে কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে ক্যান্সারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
সাধারণত ব্রেস্ট ক্যান্সারের যদি কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ঘরে বসে করা অসম্ভব। তবে কিছু থেরাপি দেওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু থেরাপির নাম উল্লেখ করা হলো:
- হরমোন থেরাপি
- ইমিউনো থেরাপি
- কেমোথেরাপি
- ব্র্যাকিথেরাপি
সাধারণত এইসব থেরাপি দিয়ে ক্যান্সার ভালো করার স্বভাব। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের থেরাপি দেওয়া উচিত নয়। কারণ ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়
বর্তমান সময়ে একটি পরিচিত রোগ হচ্ছে ব্রেস্ট টিউমার। এই টিউমার হয়ে থাকে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের। কারণ এই সময় স্তনের উপর অনেক ধরনের প্রভাব পড়ে। এছাড়াও বাচ্চা হওয়ার কারণে স্তনের বৃদ্ধি ঘটে। এসব কারণেই স্তন টিউমার হয়ে থাকে। ব্রেস্ট টিউমারের যেসব লক্ষণ রয়েছে সে সব থেকেই ব্রেস্ট টিউমার চেনা যায়।
ব্রেস্ট টিউমারের যেসব লক্ষণ উপরে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো থেকেই ব্রেস্ট টিউমার চেনা যায়। তবে ব্রেস্ট টিউমার নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায় হল:
- বর্তমান সময়ে ম্যামোগ্রাম নামক এক ধরনের বিশেষ এক্স-রে রয়েছে। যার সাহায্যে শুধু ব্রেস্ট এক্সরে করা হয়। উপরের যেসব লোকক্ষণে কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো যদি দেখতে পান তাহলে ম্যামোগ্রাম এক্স-রে করতে হবে। তাহলে টিউমার হয়েছে নাকি কনফার্ম হতে পারবেন।
- এছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিটি মেডিকেল এবং ক্লিনিকে গাইনী বিভাগ রয়েছে। ব্রেস্ট টিউমারের যদি কোন লক্ষণ দেখতে পান তাহলে অবশ্যই গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে টিউমার হয়েছে নাকি কনফার্ম হতে পারবেন।
ব্রেস্ট টিউমারের ঘরোয়া চিকিৎসা
বর্তমান সময়ে প্রায় নারীদের ব্রেস্ট টিউমার হচ্ছে। অনেকে কম খরচে চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে। তবে অন্য সকল চিকিৎসা ঘরা পদ্ধতি করলেও ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা ঘরোয়া ভাবে করা যায় না। কারণ, এই রোগটি অনেক জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকদিন যাবত ব্রেস্ট টিউমার থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যদি ব্রেস্টি টিউমারের কোন লক্ষণ দেখা পান তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এবং সেখান থেকেই চিকিৎসা করে টিউমার ভালো করবেন। যদি বিনা খরচে চিকিৎসা করতে চান তাহলে রোগীর জটিলতা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সময়ে ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হচ্ছে। এই কারণে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্রেস্ট টিউমার টিপস
ব্রেস্ট মেয়েদের একটি স্পর্শকাতর স্থান। এই স্থানে টিউমার হলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। ব্রেস্ট টিউমার একটি জটিল রোগ। এই কারণে ব্রেস্ট টিউমার হলে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ব্রেস্ট টিউমার থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পেতে চাইলে যে সব টিপস অবলম্বন করতে হবে। নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- ব্রেস্ট টিউমারের যেকোনো দুটি লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
- নিয়মিত স্তন স্ক্রিনং করতে হবে।
- খাদ্য তালিকায় খাবার রাখতে হবে।
- চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন যাপন করতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
সাধারণত এইসব বিষয় মেনে চললে ব্রেস্ট টিউমার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এবং উপরের বিষয় অনুযায়ী চলাফেরা করলে সুস্থভাবে জীবন করতে পারবেন।
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ
বর্তমান সময়ে মেয়েদের একটি পরিচিত রোগ ব্রেস্ট টিউমার। এই টিউমার খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। কারণ বেশিরভাগ সময় এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই কারণে যতদূত সম্ভব ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা করতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার ধরা পড়লে মেডিসিনের মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব।
যদি টিউমারের আকার বৃদ্ধি হয় তাহলে অপারেশন করতে হয়। ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। কারণ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জায়গায় অপারেশনের খরচ বিভিন্ন রকম। তবে স্বাভাবিক মানের কোন ক্লিনিকে অপারেশন করালে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মত খরচ হয়।
আরও পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
অপারেশন খরচ ছাড়াও প্রাসঙ্গিক কিছু খরচ রয়েছে। যেমন রিপোর্ট করা ওষুধ কিনা ইত্যাদি। উপরে যেই টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হলো এটা বাংলাদেশের চিকিৎসা খরচ। বর্তমানে অনেকে ভারতে যায় ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন করতে। তাদের খরচ অনেক বেশি হয়।
কারণ ভারত যেতে অনেক কাগজপত্র ঠিক করতে হয়। এবং যাতায়াত খরচ। ছাড়াও চিকিৎসা খরচ। তবে বাংলাদেশের এসব চিকিৎসা খুব ভালোভাবেই হচ্ছে।
স্তন বিশেষজ্ঞ কাকে বলে?
বর্তমানে প্রতিটি হাসপাতালে গাইনি বিভাগ রয়েছে। তারা মেয়েদের সকল বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ। যারা মেয়েদের স্তন নিয়ে গবেষণা করে তাদেরকে স্তন বিশেষজ্ঞ বলা হয়। তারা অবশ্যই ডাক্তার। বর্তমানে অনেক স্তন বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তারা স্তন এর বাইরের অংশ দেখেই সকল কিছু বলে দিতে পারে।
শেষ কথা:ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়
বর্তমান বিশ্বে ব্রেস্ট টিউমার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথম অবস্থায় এই রোগটি দেখা যেত পশ্চিমাবিশ্বে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ও এই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যাটি বিশেষ করে হয়ে থাকে অসচেতন ভাবে চলাফেরার কারণে। সঠিকভাবে চলাফেরা করলে ব্রেস্ট টিউমার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষ করে ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলে ব্রেস্ট টিউমার হলে খুব সহজে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া যায়। তাহলে ঝুঁকি অনেক কম হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
