হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ: হিমোগ্লোবিন একটি প্রোটিন যা রক্তের লোহিত কণিকার মধ্যে পাওয়া যায়। হিমোগ্লোবিন প্রোটিন শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এবং ফুসফুস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে থাকে।
হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বাহি লৌহ সমৃদ্ধ মেটালোপ্রোটিন। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে লোহিত রক্ত কণিকার ওজনের ৯৬ – ৯৬% হিমোগ্লোবিন থাকে।
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ, শরীরে লৌহের ঘাটতি। লৌহ হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লৌহ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কম হলে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। নিম্নে, হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হিমোগ্লোবিন অর্থ কি?
হিমোগ্লোবিন রক্তের একটি উপাদান। যা অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। রক্তের তিনটি উপাদান। যথা: লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত কণিকার একটি উপাদান। হিমোগ্লোবিনের কারণে রক্ত লাল দেখায়।
হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন বহন করে থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৪০ সালে।ফ্রেডরিক লুডভিগ হুনফেল্ড জার্মান বিজ্ঞানী।
হিমোগ্লোবিন এর কাজ কি?
হিমোগ্লোবিন রক্তের উপাদান যা লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে থাকে। হিমোগ্লোবিনের কাজ হল ফুসফুস থেকে অক্সিজেন দেহের বাকি অংশে ছড়িয়ে দেওয়া। এবং অক্সিজেন কোষের ব্যবহারের জন্য অবমুক্ত করা। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন অন্যান্য গ্যাস পরিবহন করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ ও মুক্তির উপায়
বিশেষ করে কোষ কলা হতে কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায়। ১.৩৬ হতে ১.৩৭ মিলিলিটার অক্সিজেন ধারণ করতে পারে প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিন। যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ৭০ গুণ।
হিমোগ্লোবিন কমে যায় কেন?
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া শরীরের একাট সাধারণ সমস্যা। শরীরে লোহার পরিমাণ কমে গেলে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এছাড়াও শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন এবং খনিজ এর অভাব হলে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে হিমোগ্লোহনের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
রক্তক্ষরণ ছাড়াই রক্ত কমে যাওয়ার কারণ কি?

রক্তক্ষরণ ছাড়াই রক্ত কমে যাওয়ার কারণ কি আমরা অনেকেই জানিনা। রক্তক্ষরণ ছাড়া রক্ত কমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের উপাদান এর অভাবে রক্ত কমে যায়। রক্তক্ষরণ ছাড়া রক্ত কমে যাওয়ার কারণ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- ভিটামিনের অভাব
- অস্থিমজ্জার রোগ
- দীর্ঘকালীন অসুস্থতা
- বংশগতি
লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন ও হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?
লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায় অনেক সময়। লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে রোগের আক্রমণ। নিম্নে, লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরা হলো:
- শরীরে লোহের পরিমাণ বেড়ে গেলে।
- লিভারে ক্যান্সার হলে।
- জন্মগত হৃদরোগ থাকলে।
- হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যা থাকলে।
- কিডনিতে ক্যান্সার হলে।
- COPD (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ)
রক্তের হিমোগ্লোবিন কত থাকলে ভালো?
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নারী ও পুরুষের ভিন্ন হয়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম।
যদি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এর থেকে কম হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় সবসময় ১৩ থেকে ১৪ গ্রাম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা শরীরে থাকলে কোন ধরনের সমস্যা হয় না। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে
হিমোগ্লোবিন কত হলে ক্লান্ত লাগে:
হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাপ রয়েছে। এর থেকে কম হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছেলে দের ক্ষেত্রে ১২ গ্রামের নিচে হয় তাহলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। কারণ শরীরে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা কমে গেলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। যার ফলে শরীর সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়
যার কারনে নিজেকে ক্লান্ত লাগে। নারীদের ক্ষেত্রে যদি ১১ গ্রামের নিচে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে আসে তাহলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়। এই কারণে, হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আর হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি কখনো হবে না।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি রোগ হয়:
হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত কণিকার একটি উপাদান। যা শরীরের সকল স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। তবে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে গেলে ক্লান্ত লাগে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়ে কি কি সমস্যা হয় নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- রক্তশূন্যতা হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- শ্বাসকষ্ট হয়।
- মাথা ব্যথা হয়।
- ক্লান্তি বোধ হয়।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া।
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া।
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। রক্তে লোহের মাত্রা কমে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তবে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো যায়। তার জন্য
ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হয়। তবে সফল খাবার খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না।
কারণ হিমোগ্লোবিন মাত্র বাড়ানোর জন্য লৌহ জাতীয় খাবার খেতে হয়। এতে করে রক্তের লোহার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আর লোহার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। নিম্নে হিমোগ্লোবিন কি কি খাবার খেলে বৃদ্ধি পায় আলোচনা করা হলো।
হিমোগ্লোবিন কম হলে কি খাওয়া উচিত:
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। নিম্নে, হিমোগ্লোবিন কম হলে কি খাওয়া উচিত এমনে তুলে ধরা হলো:
- লৌহ যুক্ত খাবার। যথা: বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, মুরগির কলিজা, ঝিনুক ইত্যাদি।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। যথা: ডিম, আপেল, ডালিম, বেদেনা, খেজুর, তরমুজ, জলপাই ইত্যাদি।
- ভিটামিন সি। যথা: পেপে, স্ট্রবেরি, সবুজ শাকসবজি, আঙ্গুর, টমেটো, লেবু ইত্যাদি।
- ফলিক এসিড। যথা: সবুজ শাকসকজি, লিভার, শিমের বীজ, বাদাম, ভাত ইত্যাদি।
- ভিটামিন বি ১২
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন মাছে:
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন মাছ খেলে আমরা অনেকেই জানিনা। কিছু মাছ আছে যেগুলো খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেগুলো মাছ হলো: কাতলা, ইলিশ, পমফ্রেট, রুই ইত্যাদি। এসব মাছ খেলে খুব সহজেই হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়।
হিমোগ্লোবিন যুক্ত খাবার:
হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনী একটি উপাদান। কারণ, হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ হয়ে থাকে। এ কারণে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরী। হিমোগ্লোবিন যুক্ত খাবার খেলে হিমোগ্লোবিন মাত্রা ঠিক থাকে।
হিমোগ্লোবিন যুক্ত খাবার হল: মাংস, মাছ,, ডিম, ভিটামিন সি, ভিটামিন সি ১২, শাকসবজি, শস্য জাতীয় খাদ্য, সামুদ্রিক খাদ্য, মাছ, ফলমূল ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে রক্তের সকল উপাদান ঠিক থাকে। তাই নিয়মিত এসব খাবার খাওয়া উচিত।
হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়:
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ অনেক রয়েছে। তবে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৮ গ্রামের নিচে নেমে গেলে রক্ত দিতে হয়। কারণ স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১ থেকে ১৭ গ্রাম।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের ফিলিং খরচ কত, দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয়
এর নিচে যদি নেমে যায় তাহলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। যার কারণে যাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে তাদের থেকে রক্ত দিতে হয়। এতে করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ:
হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ কত আমরা অনেকেই জানিনা। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নারী ও পুরুষের ভিন্ন হয়ে থাকে। পুরুষের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। এবং নারীদের হিমোগ্লোবিনের রেঞ্জ ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম। হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ ১৩ থেকে ১৪ গ্রাম।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ:
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। যার জন্য অনেকেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য ওষুধ খাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন। তবে ওষুধ খেয়ে স্থায়ী ভাবে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় না। এই কারণে উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো।
শরীরে রক্ত কম হলে কি কি সমস্যা হয়:
রক্ত আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কারণ রক্তের মাধ্যমে সকল উপাদান আমাদের শরীরের ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নিষ্কাশন করে রক্ত। শরীরে রক্ত কমে গেলে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিম্নে, সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো:
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়:
- ক্লান্তি বোধ হয়।
- কার্যক্ষমতা কমে যায়।
- শ্বাসকষ্ট হয়।
- মাথাব্যথা হয়।
- হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
- হজম শক্তি কমে যায়।
- খোদা কমে যায়।
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়:
আমাদের শরীরে পুষ্টির উপাদান কমে গেলে রক্ত উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এর জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়ে যাবে। আর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হল ঘরোয়া উপায়।
কারণ, পুষ্টিকর খাবার গুলো আমরা বাসায় খেয়ে থাকি। এসব খাবার খেলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। এবং খুব সহজে ভিটামিন এর সকল উপাদান পাওয়া যায়। এজন্য ঘরোয়া ভাবে খুব সহজে রক্তশূন্যতা দূর করা যায়।
শেষ কথা: হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
হিমোগ্লোবিন মানব দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং কর্মক্ষমতা অনেক অংশে বেড়ে যায়। কারণ, হিমোগ্লোবিন সম্পূর্ণ দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
এই কারণে, হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলে খুব সহজেই হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।