মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিকঃ মোবাইল মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। মোবাইল ছাড়া বর্তমান সময়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মোবাইল আবিষ্কার করেন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার ১৯৭৩ সালে। সেই সময় মোবাইল শুধু কথা বলার জন্য ব্যবহার করা হতো।
কিন্তু বর্তমানে মোবাইলের অনেক পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে এখন সকল ধরনের কাজ করা যায়। এর ভালো দিক এবং খারাপ দিক দুটোই রয়েছে।
বর্তমানে মানুষ ক্ষতিকর দিক গুলোর দিকে আগ্রহী হচ্ছে। নিম্নে, মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
মোবাইল এর বাংলা নাম কি?
মোবাইল এর বাংলা নাম কি? সেই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তবে মোবাইলের অনেকগুলো নাম আমরা জানি। সেগুলো হল: মোবাইল, স্মার্টফোন, হ্যান্ডসেট, অ্যান্ড্রয়েড ফোন, বাটন ফোন ইত্যাদি। মোবাইলের বাংলা মুঠোফোন। কারণ এটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চলাফেরা করা যায়।
মোবাইল ফোনের প্রথম নাম কি?
মোবাইল ফোন আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৩ সালে। কিন্তু মোবাইল ফোন প্রথম বাজার খারাপ করা হয় ১৯৮৩ সালে। সেই সময় ফোন টির নাম ছিল, আট হাজার এক্স মডেলের নাম সর্বপ্রথম মোবাইল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)। মোবাইলের প্রথম থেকে নাম ছিল মোবাইল ফোন।
মোবাইল ফোনের প্রভাব:
বর্তমান সময়ে মোবাইল মানুষের জীবনের অত্যান্ত জরুরী যন্ত্র। করণ মোবাইলের মাধ্যমে সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া বর্তমানে তথ্য আদান-প্রদান করার কাজে মোবাইল ব্যবহার করা হয়। তবে মোবাইল ফোনের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ অপটিক্যাল ফাইবার কি? এবং অপটিক্যাল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্য
বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে আমাদের মানসিক অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তবুও আমাদের নিজের প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। মোবাইল ছাড়া বর্তমানে কোন কাজ করা অসম্ভব। তাই মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব থাকার পরেও আমাদের ব্যবহার করতে হয়।
স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যবহার করা হতো কথা বলার জন্য। তবে বর্তমানে স্মার্টফোন আসার ফলে সকল ধরনের কাজ মোবাইল দ্বারা করা সম্ভব হচ্ছে। স্মার্টফোন আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। স্মার্টফোন আসার ফলে অনেক উপকার হয়েছে এবং অনেক ক্ষতিও হয়েছে।

স্মার্ট ফোন আমাদের জীবনের অনেক ধরনের পরিবর্তনে নিছে। স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে আমরা অনেক ধরনের সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাই। স্মার্টফোন জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- হার্ট এটাকের সম্ভাবনা নির্ণয়
- অবস্থান নির্ণয়
- নাইট ভিশন ফিউচার
- অপরাধ দমন
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে
- ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সকল তথ্য পাওয়া যায়।
স্মার্ট ফোন দিয়ে এর উপরে কাজগুলো করা সম্ভব। যার ফলে কোন ধরনের সমস্যা হলে তার অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এবং কোন ধরনের অপরাধ হলে সাথে সাথে অপরাধীকে সনাক্ত করা যায়। এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন ধরনের টিপস পাওয়া যায়।
বেশি মোবাইল চালালে কি ক্ষতি হয়?
মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারি না। তবে বেশি মোবাইল ফোন চালালে অনেক ধরনের ক্ষতি হয়।। নিম্নে বেশি মোবাইল চালালে কি ক্ষতি হয় তুলে ধরা হলো।
- চোখ জ্বালা করে।
- দৃষ্টি শক্তি কমে যাবে।
- কানে কম শোনা।
- শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া।
- জীবাণুর আক্রমণ।
- ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
- দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায়।
- চিন্তাশক্তি কমে যায়।
দিনে কত ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করা উচিত?
বর্তমানে মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। স্মার্ট ফোন থেকে নীল রশ্মি চোখের উপর পড়ে। যার ফলে চোখের অনেক ক্ষতি হয়। একজন মানুষের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা ফোন ব্যবহার করা উচিত।
তবে কিছুক্ষণ দেরি করে করে ফোন ব্যবহার করলে তেমন সমস্যা হয় না। তবে একটানা অনেকক্ষণ ফোন ব্যবহার করা যাবে না। ৪০ মিনিট এক ঘন্টা এরকম সময় পরপর বিরতি নেওয়া উত্তম।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল ঠান্ডা রাখার সফটওয়্যার
এরপর ভালোভাবে চোখ মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আবার ফোন ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে ফোন ব্যবহার করলে তেমন চোখের ক্ষতি হয় না। তবে মোবাইল কম ব্যবহার করা উচিত।
মোবাইল থেকে কি রশ্মি বের হয়?
মোবাইল ফোন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভের ভিত্তিতে কাজ করে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আমাদের ব্রেনের ক্ষতি করে থাকে। এছাড়াও মোবাইল থেকে এক ধরনের রশ্মি বের হয় যা আমাদের চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মোবাইল থেকে বের হয় নীল রশ্মি। যা আমাদের চোখের রেটিনার ক্ষতি করে।
শিক্ষার্থীদের ফোন আসক্তির প্রভাব:
বর্তমান সময়ে সকলেই ফোন ব্যবহার করছে। ফোন ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবনে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ফোন আসক্তির প্রভাব অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত এক বছরে ফোন আসক্তির হার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক বেড়ে গিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা ফোন ব্যবহার করার ফলে অনেক ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা ফোন ব্যবহার করার ফলে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ কমে গিয়েছে। অনেকের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এর সাথে চোখের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না।
এসব প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর অনেক ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসছে। কারণ যে সময় জ্ঞান অর্জনের কথা সেই সময় বিভিন্ন ধরনের বিনোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। এতে করে মানসিক এবং শারীরিকভাবে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মোবাইল থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের সুবিধা ও অসুবিধা:
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। তবে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য মোবাইল ফোন থাকা অত্যন্ত জরুরি। মোবাইল ফোনের অসুবিধার তুলনায় সুবিধা অনেক বেশি। নিম্নে, শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের সুবিধা তুলে ধরা হলো:
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করা যায়।
- মোবাইল ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করা যায়।
- পিডিএফ আকারে বই পাওয়া যায়। যা শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পড়তে পারে মোবাইলের মাধ্যমে।
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা যায়।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে সহপাঠের সাথে শিক্ষা বিষয় তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
- খুব সহজেই কোন কিছুর ছবি তুলে তথ্য নেওয়া যায়।
- ডিকশনারি ব্যবহার করে বাংলা ভাষার অনুবাদ করা যায়।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ভালো দিকগুলো:
মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজে অনেক ধরনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারে ভালো দিক গুলো তুলে ধরা হলো:
- ঘরে বসে বিভিন্ন লোকের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
- সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের খবর নেওয়া যায়।
- ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়া যায়।
- তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
- যে কোন সাহায্যের জন্য খুব কম সময়ে সাহায্য চাওয়া যায়।
- লোকেশন ব্যবহার করে খুব সহজে গন্তব্য স্থল খুঁজে পাওয়া যায়।
- মোবাইলের মাধ্যমে বিনোদন পাওয়া যায়।
- ঘরে বসে কেনাকাটা করা যায়।
- নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়।
মোবাইলের অপকারিতা কি কি?
প্রতিটা জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা থাকে। ঠিক একই ভাবে মোবাইলের অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে মোবাইলের অপকারিতা কি কি তুলে ধরা হলো:
- চোখে কম দেখা।
- কানে কম শোনা।
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
- রাতে ঘুম না হওয়া।
- অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি।
- শুক্রাণু কমে যাওয়া।
- মানসিক ভারসাম্য হারানো।
- কর্ম ক্ষমতা কমে যাওয়া।
- ঘাড়ে ব্যথা।
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
- চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া।
- পর্নো-আসক্তি।
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়:
মোবাইল ফোনের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। তবে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা জানি মোবাইল আমাদের অনেক ক্ষতি করে তবু আমাদের ফোন ব্যবহার করতে হবে।

কারণ ফোন ছাড়া কোন কাজ করা বর্তমানে যায় না। মোবাইল ফোনের অনেক ক্ষতি রয়েছে। ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে হয়। মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- মোবাইল ফোন ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে।
- গেম খেলা বন্ধ করতে হবে।
- সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলো বন্ধ করতে হবে।
- একটানা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ফোন ব্যবহার করতে হবে।
- মোবাইল ফোনে ডাটা কম রাখতে হবে। এতে করে কম ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন।
- মোবাইল ব্যবহার করার সময় নাইট মোড চালু করতে হবে।
- সামাজিক প্ল্যাটফর্ম গুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
- খেলাধুলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
- অতিরিক্ত সাউন্ড দিয়ে গান শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়:
মোবাইলের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে আমরা সকলেই জানি। তবুও আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ফোনের আসক্ত। যারা মোবাইল আসক্তি তারা বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া বা গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
আরও পড়ুনঃ মিউজিক ভিডিও বানানোর নিয়ম
এসব থেকে বিরত থাকলে মোবাইল আসক্তি কমে যাবে। বর্তমানে মোবাইল আসক্তি সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মাঠে খেলাধুলা বন্ধ। মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতে হবে। এবং বাসায় ওয়াইফাই থাকলে ওয়াইফাই লাইন বন্ধ করতে হবে।
এই ভাবেই মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে মোবাইল আমাদের ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল ছাড়া জীবন অচল।
শেষ কথা: মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মোবাইল ফোন আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র। মোবাইল ছাড়া আমাদের জীবন ভাবা অসম্ভব। সকল কাজে মোবাইল ফোনের প্রয়োজন রয়েছে।
তবে মোবাইল প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ মোবাইল ফোন আমাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি করে থাকে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।