রমজানের স্বাস্থ্য টিপস

রমজানের স্বাস্থ্য টিপস

রমজানের স্বাস্থ্য টিপস প্রতি এক বছর পর পর ফিরে আসে পবিত্র রমজান মাস। আল্লাহ সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে রমজান ।এ কারণে হঠাৎ করে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন চলে আসে। সুস্থভাবে রমজান পালনের জন্য প্রয়োজন শরীর সুস্থ রাখা আর শরীর সুস্থ রাখতে প্রয়োজন রমজানের স্বাস্থ্য টিপস।

রমজানের রাতে ও সেহরির সময় বেশি করে পানি,ডাল, মাছ, শাক-সবজি, ডিম একটু ঝোল করে খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত তেল ও মসলার তরকারি খাওয়া যাবে না। পানি বেশি করে খাবেন এবং ইফতারে স্যুপ জাতীয় খাবার খাবেন।

রমজানের স্বাস্থ্য টিপস এ কি কি করা উচিত আর কি কি করা উচিত নয়

১। রমজানের ইফতারের খাদ্য মেনুতে বেশি করে পানি জাতীয় খাবার ও ফলমূল খাওয়া উচিত। যেমনঃ খেজুর, পানি,শরবত,কলা, শসা,পেঁপে, কাঁচা ছোলা,ভেজা চিড়া,পায়েস,হালিম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।রাতে ও সেহেরিতে ডাল,ভাত,শাকসবজি,মা্‌ছ মাংস ডিম একটু পাতলা ঝোল করে খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত তেল মশলা খাওয়া যাবে না।

 ২। ইফতারের খাদ্য তালিকায় স্যুপ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।

 ৩। রমজানে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় পরিমাণ মতো ইফতারি খাবার খাবেন, কারণ অতিরিক্ত খেলে সমস্যা হবে।

 ৪। রোজা রেখে শরীর দুর্বল থাকে তাই অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না।

 ৫। হজমে সমস্যা হয় এসব খাবার থেকে রোজায় বিরত থাকতে হবে।

 ৬। রমজানে ইফতার ও ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এসব খাবার    বদহজম ও গ্যাসের সৃষ্টি করে।

 ৭। রমজানে বেশি বেশি মেসওয়াক করবেন।

.৮। খেজুর তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং দেহকে রিহাইড্রেট করে পানি। তাই ইফতারে  খাদ্য তালিকায় খেজুর ও পানি অবশ্যই রাখা প্রয়োজন।

 ৯। ইফতারের সময় আইসোটনিক ড্রিংক পান করুন। কারন এটি মিনারেল সল্ট এবং ভিটামিনের উৎস।

১০। ইফতারের সময় বেশি ভোজনের প্রবণতা প্রতিরোধ করুন। কারণ রোজা ও সংযম শেষে পরিমিত পরিমাণে খাবারের মেন্যু নির্ধারণ করা উচিত।

  ১১। ইফতার ও সেহরির সময় লবণাক্ত খাবারে ডিহাইড্রেশন এবং তৃষ্ণা বাড়ে।

  ১২। ইফতারের পর সুষম খাবার খাওয়া উচিত ।

সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে রমজানের স্বাস্থ্য টিপস জানা দরকার

রমজান মাস এলেই তেলে ভাজা খাবার ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এ সকল খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই শরীরের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে রমজানের স্বাস্থ্য টিপস জেনে থাকা দরকার।

১। রমজানে সঠিক ভাবে সেহরি করুন। 

রমজানে রোজা রাখতে সঠিক ভাবে সেহরি খেতে হবে। কারণ সেহরি খাওয়ার মধ্যে অনেক ফজিলত রয়েছে। ভোর রাতে খাবার খেয়ে রোজা করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। সেহরি খাওয়ার জন্য টেবিল আগেই গুছিয়ে রাখুন। তাহলে রাতে ঘুম ভেঙে উঠে সেহরি খেতে কষ্ট কম হয়।

২। রমজানে চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।

চর্বি জাতীয় খাবার বলতে অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার কে বোঝায়। যেমনঃ অতিরিক্ত তেল সম্পৃক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার। রমজানে এসব চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।

৩। রমজানের নবীজি সাঃ এক তৃতীয়াংশের নিয়ম অনুসরণ করা।

রমজানে নবীজির এক-তৃতীয়াংশের কিছু সুবর্ণনীয় নিয়ম অনুসরণ করা অবশ্যই পালনীয়। নবীজী বলেন, ‘এক-তৃতীয়াংশই আমাদের খাওয়া উচিত।’ কারণ বাকিটুক পাকস্থলীর জন্য ফাঁকা রাখা উচিত, কারণএতে  পাকস্থলী ভালো থাকে।

৪। রমজানে স্বাস্থ্যকর সস জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।

রমজানে রোজা রেখে খাওয়ার সময় অনেক কম থাকায় বেশিরভাগ খাবার রয়েই যায়। তবে ফল এবং সবজি প্রায় খাওয়া হয়না।তাই এগুলো সস জাতীয় খাবারে ডুবিয়ে ইফতারে খেয়ে নেওয়া উচিত।

৫। রমজানে ইফতারের পরে হাটা উচিত।

 রমজানে ইফতারের পরেই শুয়ে না পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করা উচিত। কারণ খাবার খাওয়ার পর শুয়ে পড়লে শরীরে মেদের পরিমাণ বেড়ে যায়।

৬। রমজানে তারাবির নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা।

রমজানে তারাবির নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা উচিত।কারণ নামাজই হচ্ছে উত্তম ব্যায়াম এবং এটি স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যও বটে।ছাড়া নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সবকিছু অর্জন করা যায়। আর রমজান মাসই হচ্ছে বরকতের মাস ,মাগফিরাতের মাস এবং নাজাতের মাস।

৭। রমজানে বিকেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা।

রমজানে রোজা রেখে বিকেলে বেশি ক্লান্তি আসে তাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া যাবে না কারণ এতে শরীর বেশি খারাপ করে।

 রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়

রমজানের ডায়াবেটিস রোগীদের ইফতারের পরিপূর্ণ আহার এবং বেশি করে পানি পান করা উচিত। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের বেশিক্ষণ উপবাসে থাকা ঝুঁকি রয়েছে।ডিহাইড্রেশন এর রাতে এই সময় তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত।

আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই সময় আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।রোজা রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপকে প্রভাবিত করে, তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের সামঞ্জস্য করে নিতে হবে, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের।

সুগার উঠানামা কমাতে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত সুগার টেস্ট করা উচিত। রমজানের ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ ফাইবার এবং গ্লাইসেমিক যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।এসব ধরনের খাবারে পেট ভরে থাকে ও খিদে কমায়।মটরশুঁটির ছোলা, ওটস,কুইনো ,ব্রাউন  রাইস ,বিন্স প্রভৃতি এসব ধরনের খাবার।

রমজানের স্বাস্থ্য টিপস পরামর্শ

রমজানের স্বাস্থ্য টিপস গুলো যথাযথভাবে মেনে চলা উচিত। এর পাশাপাশি আমরা ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবো। আমরা সকল ধরনের ভোগ বিলাসিতা, পানাহার থেকে বিরত থাকবো ,আমরা মিথ্যা পরিহার করব। রমজানের সিয়াম সাধনার পাশাপাশি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়, সালাতুত তাসবিহ, তাহাজ্জুতের নামাজ আদায, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজগার,দোয়া ইস্তেগফার ও তাসবীহ তাহলিল পাঠ করব।

আমরা সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করব। আল্লাহর কাছে মোনাজাতে চোখের পানি ফেলে ক্ষমা চাইবো। রমজান মাসে বেশি বেশি দান সদকা করব। কারণ রমজান মাসে এমন একটি ফজিলত পূর্ণ রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ।পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’। (সূরা কদর আয়াত ৪ )।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • রমজানের প্রথম দশ দিনের ফজিলত

    রমজানের প্রথম দশ দিনের ফজিলত ।রমজানে প্রথম দশ দিন হচ্ছে রহমত ।রমজানে প্রথম ১০ দিন থেকেই যদি বান্দা সঠিক নিয়মে রোজা রেখে সংযমে থাকে, রমজানের হক আদায় করে হালাল রুজির সেহরি খায় ও ইফতার করে সুদ ঘুষ থেকে বিরত থাকে। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার না করে, মিথ্যা কথা বলা পরিহার করে এভাবে সংযমে থেকে সারাদিন…

    শেয়ার করুন
  • গ্যাস এসিডিটি বা বদহজম থেকে মুক্তির উপায়

    আমাদের অনেকেরই পেটের গ্যাস, এসিডিটি বা বদহজমের সমস্যা রয়েছে। এই ধরনের সমস্যাগুলি শুধু দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই গাইডে আমরা জানবো প্রাকৃতিক এবং ভেষজ উপায়ে কীভাবে গ্যাস, এসিডিটি এবং বদহজম থেকে মুক্তি পেতে পারি। গ্যাস, এসিডিটি ও বদহজমের কারণ ১. খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা ২. খাবার চিবিয়ে না…

    শেয়ার করুন
  • ঈদুল ফিতরের আমল এবং এর করনীয় ও বর্জনীয়

    ঈদুল ফিতরের আমল রমজান মাসব্যাপী রোজা রাখার পর প্রথম শাওয়ালে হয় ঈদ-উল-ফিতর। চাঁদ রাত বা ঈদুল ফিতরের রাত শাওয়াল মাসেরপ্রথম রাতে পড়ে। ইসলামের অনেক পবিত্র ও ইবাদত পূর্ণ রাতের মধ্যে একটি হল চাঁদ রাত বা ঈদুল ফিতরের রাত। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দেখা, চাঁদ রাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল। চাঁদ দেখা বা তা দেখা…

    শেয়ার করুন
  • ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস

    বাংলাদেশ প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস কে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে শেখ মজিবুর রহমানকে আটক করে। ২৫ শে মার্চ রাত বারো টার পরে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের কিছুক্ষণ আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর…

    শেয়ার করুন
  • শবে কদরের ফজিলত ও আমল

    শবে কদর অর্থ হলো ভাগ্য রজনী যা মর্যাদাপূর্ন রাত।আরবিতে একে  লাইলাতুল কদর বলা হয়। শবে কদরের রাত হচ্ছে সেই রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত ।পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাস হচ্ছে রমজান মাস, আর রাত হচ্ছে শবে কদরের রাত অর্থাৎ লাইলাতুল কদর। এই রাতেই হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে জিব্রাইল…

    শেয়ার করুন
  • সকালে হাঁটার উপকারিতা বা সকালে খালি পেটে হাঁটার উপকারিতা

    আমরা সকলেই জানি সবচেয়ে উত্তম ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। আমরা প্রতিদিনই হাঁটি। তবে শরীর ভালো রাখতে হাঁটার কিছু নিয়ম নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সেই সময় হাঁটলে শারীরিক ব্যায়াম হয়। হাঁটার সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে সকাল। তবে অনেকে কাজের চাপের কারণে বিকালে হাঁটে।  বিকালে হাঁটলেও শরীরের ব্যায়াম হয়। তবে সকালে হাঁটার উপকারিতা বা সকালে খালি পেটে হাঁটার উপকারিতা অনেক বেশি। সারারাত ঘুমানোর পর আমাদের শরীরের…

    শেয়ার করুন