এলাচের উপকারীতা ও গুণাগুণ

এলাচের উপকারীতা ও গুণাগুণ / সকালে খালি পেটে এলাচ খেলে কি হয়?

আমাদের সকলের ঘরেই এলাচ (Cardamom) পাওয়া যায় সহজে। সুগন্ধি মশলা হিসাবে এলাচের রান্নাঘর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। এটি বিভিন্ন রান্নায় যোগ করে অনন্য গন্ধ ও স্বাদ। এটি গরম মশলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে আমাদের অনেকেই এই মশলার স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জানি না।

স্বাস্থ্যের জন্য এলাচের উপকারিতা শেষ করা যাবে না। গরম মশলা বলতে আমরা যে মশলাগুলোকে বুঝি, তার মধ্যে অন্যতম এলাচ। সে নিরামিষ ধোঁকার ডালনা হোক বা পাঁঠার ঝোল— সুবাসিত করতে দারচিনি, লবঙ্গের সঙ্গে এলাচও থাকে যেন। আবার বিভিন্ন মিষ্টি বিশেষ করে পায়েস জাতীয় খাবারে এলাচ লাগবে অতি অবশ্যই। মশলা চা বা সাধারণ দুধ-চায়েও অনেকে এলাচ দেন।

আরও পড়ুনঃ তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

খাবার পর আবার অনেকে মুখশুদ্ধি হিসাবে এলাচ খান। এটা ভালো অভ্যাস। কথায় বলে দিনে নাকি একটা এলাচ খেলে, অনেক রোগ-জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় আয়ুর্বেদে অতি-সমাদৃত এলাচ।

সকালে খালি পেটে এলাচ খেলে কি হয়?

আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এলাচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন অনায়াসেই। কেননা এই এলাচ বিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পেতে এলাচ মুখে দিন।

এছাড়াও আমাদের দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের কোনও জুড়ি নেই। যাঁদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে, তাঁরা নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলাচ ভেজানো জল খেলে ত্বক টানটান হয়, বলিরেখা কমে।

এখন তাহলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে প্রতিদিন সকাল বেলা নিয়ম করে এলাচ খেলে কি ধরনের উপকারিতা পাবেন সেই সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ কাঁঠাল এর উপকারীতা

এলাচের উপকারীতা ও গুণাগুণ

১.হৃদযন্ত্রের জন্য:

এলাচ হার্টের জন্য অনেক উপকারী। এলাচের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হার্টের জন্যে অনেক ভাল। এলাচ শরীরের কোলেস্টেরল কম করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপেও বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।

২.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:

উচ্চ রক্তচাপের মত বড় ধরনের সমস্যায়ও এলাচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এলাচ উচ্চ রক্তচাপে   ওষুধের ন্যায় কাজ করে।

৩.ডিপ্রেশনে: এলাচ ডিপ্রেশনে বিশাল ভূমিকা রাখে। চায়ের সাথে হালকা পরিমানে এলাচের গুড়া মিশিয়ে পান করলে ডিপ্রেশন অনেকাংশে মুক্তি লাব করে।

৪.হজমের কাজে:

এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বিপাকের ব্যাধি থেকে শরীরকে মুক্তি দেয়। যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের উন্নতি ঘটায়। ফলে হজম ভালো হয় ফলে বুকে জ্বালা বা পেট খারাপ এবং অম্বলের মত সমস্যা থেকেও অনায়াসে রেহাই পাওয়া যায়।

৫.ডিটক্সিফিকেশন:

শরীরে যত বেশি পরিমাণ ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করে, ভেতর থেকে তত বেশি পরিষ্কার ও সতেজ থাকে। এলাচ শরীরে বাইরে থেকে আসা যে কোনো বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয় ও ডিটক্সিফাই করে।

৬.হেঁচকির হাত থেকে রেহাই:

শরীরের যে কোনো মাংসপেশিকে শান্ত করতে এলাচের উপকারিতা অনেক। তাই কোনো কারণে যদি হেঁচকির সমস্যায় পড়েন, তাহলে এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ এলাচ মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে সেটি আসতে আসতে পান করলে উপকার হয়।

৭.ক্ষুধা বৃদ্ধিতে:

এলাচ খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। এলাচের তেল ব্যবহার করলে খাওয়ার প্রতি ইচ্ছে বাড়ে ও খিদেও বাড়ে।

৮.দাঁত ও মুখের জন্যে:

এলাচের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ভেতরের অংশের অর্থাৎ মাড়ি ও দাঁতের খুব উপকার করে। এলাচের ঝাঁঝালো স্বাদ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে ও তরতাজা ভাব আনে।

৯.ক্যানসারে:

এলাচের খাদ্যগুণের কারণে অনেক ধরনের ক্যানসারের টিউমার বা কোষগুলি বাড়তে পারে না। কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে এলাচের গুনাগুণ বিশেষ ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

১০.স্মৃতিশক্তি প্রখর করে:

এলাচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে শান্ত করে ও স্মৃতিশক্তি প্রখর করে তুলতে সাহায্য করে। প্রতি দিন দুধের সঙ্গে দু’টি এলাচ ফুটিয়ে সেটি পান করুন। ফল অবশ্যই পাবেন।

১১.যৌন স্বাস্থ্য:

এলাচের মধ্যে নানান খাদ্য উপাদানের কারণে এটি স্নায়ুকে শান্ত করে ও যৌনইচ্ছাকে বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া, বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ সাহায্য করে।

১২.উজ্জ্বল ত্বকে:

ত্বকের ফর্সাভাব ও ঔজ্জ্বল্যের জন্যে এলাচ দারুণ কাজ করে। ত্বকে ব্রণ ও কালচে ভাব দূর করে। মধু ও এলাচের প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ফল পেতে পারেন।

১৩.ত্বকের এলার্জি:

এলাচে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান ভরপুর। এটি খুব ভালো অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি। ফলে ত্বককে মোলায়েম করে, ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই এলাচ ত্বকের জন্যে একটি ওষুধও। মধু এবং কালো এলাচের মিশ্রণ এলার্জি হওয়া অংশে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।

১৪.রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে:

এলাচে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এগুলি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করে।

১৫.ঠোঁটের জন্যে:

এলাচ দিয়ে ঠোঁটের নানা রকমের বাম, গ্লস বা তেল তৈরি হয় যা ঠোঁটের কোমলভাব ফুটিয়ে তোলে। গোলাপি ভাব বজায় রাখে। ঘরেও প্যাক তৈরি করে সারা রাত ঠোঁটে লাগিয়ে রাখা যায়। এই প্যাক করতে লাগে এলাচের গুঁড়ো, অলিভ অথবা আমন্ড অয়েল এবং একটুখানি অ্যালোভেরা জেল। প্রতি দিন এটি ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

১৬.চুলের যত্নে:

মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এলাচের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে ঝলমলে ও লম্বা করতে সাহায্য করে।

১৭.মাথার ত্বকের জন্যে:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে মাথার ত্বক ভালো রাখে। এলাচ চুলের ফলিকলগুলিকে মজবুত করে। এলাচ ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুলে বা এলাচের গুঁড়ো চুলে লাগানোর পর শ্যাম্পু করলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। এলাচের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকের ইনফেকশনকে দ্রুত সারিয়ে তোলে।

১৮.শ্বাসকষ্টে:

এলাচ বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা ও রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেয়। ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনো রকম সমস্যা থাকলে এলাচ খাওয়া ভালো।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *