বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়

বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়?

মানুষ নিজের স্বাথের জন্য অন্যকে বশীকরণ করে থাকে। বশীকরণ করলে মানুষকে নিজের ইচ্ছায় পরিচালনা করা যায়। এই সব মানুষ প্রাচীন কাল থেকে করে আসছে। বর্তমান সময়ে গ্রামে মানষেরা বশীকরণ করে। বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়? অনেকে জানতে চায়।

বশীকরণ সবচেয়ে বেশি করে থাকে ভারতের মানুষেরা। তারা তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অনেক সাধু রয়েছে। সাধুরা মূলত বশীকরণ করে থাকে। নিম্নে, বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়? সে সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বশীকরণ কি?

খারাপ উদ্দেশ্যে বা নিজের লাভের জন্য অন্য মানুষকে প্রভাবিত করাকে সাধারণত বশীকরণ বলা হয়। বশীকরণ শব্দের অর্থ হলো: জাদু, ব্ল্যাক ম্যাজিক, কালো জাদু, টোটকা ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে আমরা জাদু ছাড়াও বংশীকরণের শিকার হচ্ছে। 

অফিস, মিডিয়ার কাছে, সামাজিক জামাতে, শপিংমলে এমনকি নিজের বাড়িতে। বিভিন্নভাবে কথার জালে ভাসিয়ে আমাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। কথার মধ্যে ফাসিয়ে কাজ করানো বর্তমান সময় সবচেয়ে বড় বশীকরণ। তবে বশীকরণ করা হয় তন্ত্র মন্ত্রের মাধ্যমে।

বশীকরণ কেন করা হয়? 

বশীকরণ মানুষ বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্য করে থাকে। যেসব উদ্দেশ্য থাকে সেগুলো প্রায় খারাপ। কারণ ভালো কাজের জন্য কাউকে বশীকরণ করতে হয় না। সাধারণত কোন ব্যক্তিকে নিজের আনুগত্যে আনার জন্য বশীকরণ করা হয়ে থাকে।

বর্তমান সময়ে মেয়েদের প্রেমে ফেলার জন্য বশীকরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বড়লোকের ছেলে বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করার জন্য বশীকরণ করা হচ্ছে। সমাজে কারো সাথে দ্বন্দ্ব থাকলে বশীকরণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে মানসিক রোগী তৈরি করে। সাধারণত এইসব খারাপ উদ্দেশ্যে বশীকরণ করা হয়।

বশীকরণ কিভাবে করা হয়?

বশীকরণ সাধারণ মানুষ করতে পারে না। হিন্দু ধর্মের কিছু সাধু এবং কবিরাজ বংশীকরণ করে থাকে। যার উপর বশীকরণ করা হবে তার সম্পর্কে সাধুদের সঠিক তথ্য দিতে হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী বশীকরণ করে থাকে। যে ব্যক্তির উপর বশীকরাণ করা হয় সেই ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসের প্রয়োজন পড়ে।

এছাড়াও অনেকে খাবারের মাধ্যমে বংশীকরণ করে থাকে। এলাকায় যারা খারাপ মানুষ তারাই সাধারণত বশীকরণ করে থাকে। এটা ইসলাম ধর্মের অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। কারণ বশীকরণ করলে মানুষ তার নিজের জ্ঞানশক্তি হারিয়ে ফেলে। নিজের ইচ্ছা মতন চলাফেরা করতে পারে না।

বশীকরণ কি সত্যি হয়?

প্রাচীন যুগ থেকে বশীকরণ রয়েছে। বংশীকরণ কি সত্যি হয়? অনেকে জানতে চাই। হ্যাঁ বংশীকরণ কাজ হয়। তবে সবাই বশীকরণ করতে পারে না। যারা বিশেষভাবে তন্ত্র-মন্ত্রের পারদর্শী তারা বংশীকরণ করতে পারে। যারা  বশীকরণ করে তাদের অনেক দিন ধরে সাধনা করতে হয়। তারপর তারা বশীকরণের উপর পারদর্শী হয়ে ওঠে।

বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়?

বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়? অনেকের মধ্যে কৌতুহল রয়েছে। বশীকরণ কাজ করে বলে এখনো মানুষের কাছে এই শব্দটি রয়েছে। বশীকরণ করার মাধ্যমে মানুষকে নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করা যায়। বর্তমান সময়ও বশীকরণ দেখা যায়। 

বিশেষ করে সংসার ভাঙ্গা এবং গড়ার জন্য বশীকরণ করা হয়ে থাকে। যদি কারো বউ পছন্দ না হয় তাহলে পরিবার থেকে বশীকরণ করে। এবং তারপর সে নিজের ইচ্ছায় স্বামীর বাড়িতে এক করে।সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে এইসব বেশি দেখা যায়। এখন শহর অঞ্চলের মানুষ এসব কাজের সাথে জড়িত।

মন্ত্রের মাধ্যমে কি সত্যি কাউকে বশ করা যায়?

মন্ত্রের মাধ্যমে কি সত্যি কাউকে বশ করা যায়? এই বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। বিজ্ঞানী মতে কোন মানুষকে মন্ত্রের সাহায্যে বশ করা যায় না। তবে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মানুষকে বশ করা যায় না।তবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা যায়।

বয়ফ্রেন্ড কে বশীকরণ করার মন্ত্র:

বশীকরণ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। এসব কাজ করে থাকে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা। এসব কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মন্ত্র জপ করতে হয়। বয়ফ্রেন্ডকে বশীকরণ করার মন্ত্র হলো: ‘ওঁ ক্লীং কৃষ্ণায় গোপীজন বল্লভায় স্বাহা’। এ মন্ত্রটি নিয়মিত বললে বয়ফ্রেন্ড আপনার কথামতো চলবে।

ভালোবাসার মানুষকে বশীকরণ করার পদ্ধতি:

ভালোবাসার মানুষকে বশীকরণ করতে চায় অনেকে। এর জন্য অনেক জাদুঘরের কাছে গিয়ে থাকেন। তবে এসব করে কোন মানুষকে ভালোবাসা ঠিক না। কারণ ভালোবাসা পবিত্র বন্ধন। যা জোর করে পাওয়া যায় না। কাউকে মন থেকে ভালবাসলে তার প্রতি বিশ্বাস থাকলে বশীকরণ করতে হয় না।

সে যদি আপনার কাছে মানসিক শান্তি পাই তাহলে এমনি আপনার কাছে থাকবে। তার জন্য কোন ধরনের বশীকরণের প্রয়োজন পড়বে না। সব সময় ভালোবাসার মানুষের মর্যাদা দিতে হবে, এবং সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে। তাহলে আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার বশীকরণ হয়ে থাকবে।

প্রাচীন গ্রন্থের বশীকরণ মন্ত্র শিখতে যা যা দরকার:

বশীকরণ সাধারণত হিন্দু ধর্মের মানুষের কাজ। বশীকরণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে থাকে ভারতবর্ষের মানুষেরা। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বশীকরণ মন্ত্র শেখানো হয়। সেখানে তাদের অনেকদিন যাবত সাধনা করতে হয়। তারপর তারা নিজের ইচ্ছামতন মানুষকে বসে আনতে পারে।

তারা ইচ্ছে করলে বশীকরণ মন্ত্র হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। তবে তার জন্য তাদের অনেকদিন ধরে সাধনা করতে হয়। তাদের কাছে প্রাচীন বশীকরণ মন্ত্রের গ্রন্থ রয়েছে। ভারতের কোন কোন স্থানে বশীকরণ শেখানো হয় তুলে ধরা হলো:

  1. সুলতান শাহী, হায়দরাবাদ
  2. মায়ং, অসম
  3. মণিকর্ণিকা ঘাটে তন্ত্র-মন্ত্র, বারাণসী
  4. নিমতলা ঘাট, কলকাতা
  5. কুশভদ্রা নদী, ওড়িশা

যাদুটোনা থেকে নিরাময়ের উপায়:

বিভিন্ন ধরনের খারাপ উদ্দেশ্যে মানুষ যাদু টোনা করে থাকে। যার কারণে মানুষের জীবনে অনেক প্রভাব পড়ে। তবে যাদুটোনা থেকে নিরাময়ের উপায় রয়েছে। উপায় গুলো হলো: 

  1. এক: যদি বুঝতে পারেন আপনার চুল বা কোন কিছু দিয়ে জাদু টানা করেছে। যদি সেটা আপনি পান তাহলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সেটা পুড়িয়ে ফেললে আর জাদুঘর আপনার উপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। 
  2. দুই: কে আপনার উপর জাদু করেছে তাকে যদি ধরতে পারেন তাহলে তাকে চাপ দিতে হবে। সে যেন জাদুটোনা করা বন্ধ করে। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যদি কোন ব্যক্তি যাদুটোনা করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে কোন সমস্যা হবে না। 
  3. তিন: ইসলাম ধর্মে জাদুটোনা নিরাময় করা যায়। যদি কোন ব্যক্তির উপর জাদু টানা পড়া থাকে তাহলে কুরআনের কিছু আয়াত পড়ে ফু দিতে হবে। তাহলে যাদুটোনা ভালো হয়ে যাবে। যাদু টোনা দূর করার জন্য আয়তাল কুরসি, সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এসব পড়ে কাউকে ফু দিলে তার উপর কোনো জাদুটোনা থাকলে দূর হয়ে যাবে।

প্রতারণার আরেক নাম তন্ত্র-মন্ত্র:

বর্তমান সময়ে মন্ত্র তন্ত্র তেমন মানুষের উপর কাজ করে না। কিন্তু অনেক মানুষ রয়েছে মন্ত্র তন্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। বিশেষ করে বাজারে অনেক অহংকার বসে। তারা বিভিন্ন ধরনের তাবিজ বিক্রয় করে থাকে। তারা তাবিজ দিয়ে বলে এই তাবিজ দিয়ে সকল ধরনের কাজ করা যাবে।

এছাড়াও অনেকের জিনের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে সময়ে এসব বেশি হচ্ছে। অনেকে মরা মানুষের মাথা দিয়ে মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখে। তারা বলে এই মাথা দিয়ে সকল ধরনের কাজ করা যায়। যাদের পারিবারিক কোনো সমস্যা থাকে তারা তাদের কাছে যায়।

তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেই। বর্তমান সময়ে প্রতারণার আরেক নাম মন্ত্র তন্ত্র। কিছু না জানলেও মানুষের ব্রেন ওয়াশ করে টাকা আয় করে খাচ্ছে। তবে বর্তমানে মন্ত্র তন্ত্র বলে তেমন কোন কিছুই নেই।

জিনের সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা করা কি জায়েজ?

আল্লাহতালা মানুষ এবং জিন সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। আমরা যেরকম আল্লাহর ইবাদত করি। ঠিক একই ভাবে জিনেরাও আল্লাহর ইবাদত করে। মৃত্যুর পরে তাদেরও হিসাব নেয়া হবে। পবিত্র কুরআনের একাদিক স্থানে বলা হয়েছে, অবশ্যই অবাধ্য জিন মানুষের মতো শাস্তি পাবে।

কিছু কিছু জিন মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। যারা কুরআনের আয়াত দিয়ে জিন হাজির করতে পারে। তাদের কথায় জিন চলাফেরা করে। জিনের মাধ্যমে যদি ভাল কাজ করা হয় তাহলে জায়েজ আছে। আর যদি কেউ বশীকরণ করে তাহলে হারাম। জিন দ্বারা চিকিৎসা করা জায়েজ আছে।

শেষ কথা: বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়?

বশীকরণ অনেক খারাপ একটি কাজ। বর্তমান সময়ের মানুষ বশীকরণ সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেনা। কারণ সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। তবে অনেকে জানতে চাই, বশীকরণ কি সত্যি কাজ হয়? হ্যাঁ বশীকরণ কাজ করে। তবে সবাই বশীকরণ করতে পারে না।

যারা বশীকরণ করে তারা অনেক দিন ধরে সাধনা করে। তারপরে তারা বশীকরণ বিদ্যা আয়ত্ত করতে পারে। এসব করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। তাই এসব করা যাবে না। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts