হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হার্ট। হার্ট থেকে রক্ত নালী দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়। এবং পুনরায় রক্তনালী দিয়ে রক্ত হার্ট ফিরে আসে। হৃদপিণ্ড সবসময় পাম্প করে। কিছুক্ষণের জন্য হার্ট পাম করা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়।
বর্তমান সময়ের প্রায় মানুষের হার্ট এর সমস্যা রয়েছে। হার্টের রোগীর খাবার তালিকা। সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। সঠিক সময় সঠিক খাবার খেলে হার্টের সমস্যা দূর হয়। এবং হার্টকে আরো শক্তিশালী করে। এই কারণে সকলেরই, হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।
হার্ট কি?
হার্ট এর অর্থ হৃৎপিণ্ড। হৃদপিণ্ড মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হৃদপিণ্ড সবসময় সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়। হৃদপিন্ডের রক্তে নালীর সাহায্যে সম্পন্ন দেহে রক্ত সরবরাহ করে। এবং রক্তনালির সাহায্যে পুনরায় হৃদপিন্ডের ফিরে আসে। কিছুক্ষণের জন্য হার্ট কাজ করা বন্ধ করলে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
হার্ট এর কাজ কি?
হার্ট বা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনী নারী দিয়ে শরীরের প্রতিটি অংশে প্রবাহিত হয় এবং প্রতিটি অংশ থেকে শিরোনালি দিয়ে রক্ত পুনরায় হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে। হার্ট বা হৃৎপিণ্ড পাম্পের মত কাজ করে।
সব সময় হৃদপিণ্ড সংকোচন এবং প্রসারণ হয়। অবিরাম সংকোচন ও প্রসারণ এর মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।
হার্টের ভালভ কি?
হার্ট একটি পাম্প মেশিন এর মত। হার্ট ফার্ম করার জন্য কিছু মাংসপিণ্ড থাকে। এর মাধ্যমে রক্ত চলাচল হয়ে থাকে। তবে রক্ত চলাচলের জন্য কিছু ভালভ লাগে। হার্টের ভালভ এর কাজ রক্ত সরবরাহ করা। হৃৎপিণ্ডে চারটি ভালো থাকে।
আরও পড়ুনঃ মোটা হওয়ার ঔষধের নাম
ভালো চারটি হল: মাইট্রাল ভালভ, এওটিক ভালভ, পালমোনারি ভালভ ও ট্রাইকসপিড ভালভ। অনেক সময় ভালভ নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় মানুষের হার্ট সমস্যা হয়।
হার্টের ভালভ কয়টি ও কি কি?
হার্টের ভালভ এর কাজ হল রক্ত সরবরাহ করা। ইতিপূর্বে জেনেছি হার্টের ভালভ চারটি। ভালভ চারটি হল: মাইট্রাল ভালভ, এওটিক ভালভ, পালমোনারি ভালভ ও ট্রাইকসপিড ভালভ।
হার্টের সমস্যা হলে কিভাবে বুঝব?
হার্ট মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হার্ট ছাড়া কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ সম্পূর্ণ দেহের রক্ত সরবরাহ করে থাকে হার্ট। তবে বিভিন্ন কারণে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে।
হার্টের সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। যেগুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যায় হার্টের সমস্যা হয়েছে। হার্টের সমস্যা হলে কিভাবে বুঝব? নিম্ন তুলে ধরা হলো।
- বুক ধড়ফড় করা। এবং বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করা।
- দম বন্ধ হয়ে আসা।
- চোয়াল ও ঘাড়ে ব্যথা হওয়া।
- অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়া।
- পেট ফাঁপা এবং বমি বমি ভাব হওয়া।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ কি কি?
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ মানুষের হার্ট ব্লক হচ্ছে। হার্ট ব্লক হওয়ার ফলে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে হার্ট ব্লক হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে। লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:
- বুকে ব্যথা হওয়া।
- আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়া।
- হাঁটা বা উপরে সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়।
- নিশ্বাস নেওয়ার সময় কষ্ট হওয়া।
- বুক জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করা।
- অতিরিক্ত গা ঘাম।
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা:
বর্তমান সময়ে হার্টের রোগীর বাড়ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে খাবারের সমস্যা। এই কারণে হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সঠিক হওয়া প্রয়োজন। সঠিক খাবার খেলে হার্টের রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে। নিম্নে, হার্টের রোগীর খাবার তালিকা তুলে ধরা হলো:
- ফলমূল ও শাকসবজি
- শিম ও মটরজাতীয় খাবার
- বাদম ও বীজ
- মাছ ও সামুদ্রিক খাবার
- লাল চাউল ও লাল আটার মতো খাবার।
- কাম চর্বি যুক্ত খাবার
- অলিভ অয়েলে তেল
- সাদা মাংশ
হার্টের জন্য উপকারী ফল:
ফল অনেক পুষ্টিকর খাবার। ফলে সব ধরনের ভিটামিন থাকে। যার ফলে মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ফল অনেক উপকারী। তবে কিছু ফল রয়েছে, যেসব খেলে হার্টের জন্য উপকারী। নিম্নে হার্টের জন্য উপকারী ফলের তালিকা তুলে ধরা হলো:
- আপেল
- পেয়ারা
- কলা
- কমলালেবু
- নাশপাতি
- তরমুজ
- আনারস
- আঙ্গুর
- পেঁপে
হার্ট ভালো রাখতে কি খাবো?
হার্ট মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। হার্টের কোন সমস্যা হলে মানুষ সম্পূর্ণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারণ হার্ট সম্পূর্ণ দেহে রক্ত পরিচালনা করে। এই জন্য হার্ট ভালো রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য। হার্ট ভালো রাখতে কি খাবো? নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- আমন্ড
- চিনাবাদাম
- আখরোট
- পেকান
- হ্যাজেলনাট
- বিটের রস
- সবুজ শাকসবজি
কলা কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর:
কলা অনেক পছন্দের খাবার। তাই অনেকে দুধ চিন্তায় থাকে। কলা কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর। কলা হার্টের জন্য কোন ক্ষতি করে না। কারণ গলায় পটাশিয়াম বেশি এবং সোডিয়াম কম থাকে যার কারণে কোলেস্টেরল মাত্রা বজায় থাকে।
আরও পড়ুনঃ এন্টিবায়োটিক কি কাজ করে ও এন্টিবায়োটিক এর উপকারিতা
কলা আঁশ হার্টের রোগের ঝুকি কমায়। এবং গলায় থাকা কপার ও আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের পড়া পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা:
হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ রসুন ঔষধি কোন সম্পন্ন খাবার। নিয়মিত রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালন গতি বৃদ্ধি পায়। এবং রক্তের কোলস্টেরল এর মাত্রা বজায় রাখে।
এই কারণে রসুন খেলে হার্টের সমস্যা দূর হয়। হার্টের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেতে হবে। তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
হার্টের জন্য উপকারী সবজি:
নিয়মিত শাকসবজি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে কিছু সবজি রয়েছে যেসব খেলে হার্ট ভালো থাকে। নিম্নে হার্টের জন্য উপকারী সবজি নাম তুলে ধরা হলো:
- বিট। মূলা জাতীয় সবজি
- বাঁধাকপি ও ফুলকপি
- স্কোয়াশ
- মিষ্টি আলু
- শাকপাতা
হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়:
হার্ট মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটির সাথে সম্পূর্ণ শরীরের সম্পর্ক রয়েছে। শরীরের সকল রক্ত সরবরাহ করে থাকে হার্ট। এই কারণে হার্ট সুস্থ থাকা অনেক জরুরী। তবে হাট ভালো আছে বোঝার উপায় রয়েছে। প্রথমে হৃদপিন্ডের গতি দেখতে হবে। প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার পাম করতে হবে।
বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভব হবে না। পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা অনুভব হবে না। শ্বাস প্রশ্বাসের সময় কোন ধরনের সমস্যা হবে না। কোন সাধারণ বিষয় নিয়ে বুক ধড়ফড় করবে না। এসব যদি না হয় তাহলে বুঝবেন আপনার হার্ট ভালো আছে। কোন ধরনের সমস্যা নেই।
হার্টের ঔষধের নাম:
বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের হার্টের সমস্যা রয়েছে। যার জন্য নিয়মিত হার্টের ওষুধ খেতে হয়। নিম্নে, হার্টের ঔষধের নাম তুলে ধরা হলো:
- Mibeta Sr-40 Tablet
- Preclot Tablet
- Vastarele MR60 mg Tablet
- RTV5 Tablet
হার্টের ব্লক দূর করার উপায়:
অনিয়মিত চলাফেরা এবং খাদ্য অভ্যাসের কারণে হার্ট ব্লক হয়ে থাকে। ঠিকভাবে চলাফেরা করলে হার্ট ব্লক দূর করা সম্ভব। বিশেষ করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্ট ব্লক হয়। এই কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
ব্যায়াম করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। এছাড়াও ও হার্ট শক্তিশালী হয়। হার্ট ব্লক দূর করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে লাউ। নিয়মিত লাউ খেলে অতিরিক্ত মোটা হওয়া থেকে বাচায়।
এবং হার্ট ব্লক হৗয়া মতো সমস্যা দূর হয়। এবং সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। হাসিখুশি থাকলে হার্ট ভালো থাকে।
হার্টের রোগীর ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগ থাকলে ভালো হয়ে যায়। হার্টের রোগীর ব্যায়াম করতে হয়। হার্টের রোগীর ব্যায়াম হচ্ছে প্রতিদিন হাঁটা।
আস্তে আস্তে হাঁটার গতি বৃদ্ধি করা। এছাড়াও সাঁতার ও সাইকেলিং করা। নিয়মিত সাঁতার কাটলে হার্ট ভালো থাকে। এবং খুব সহজেই হার্টের রোগ ভালো হয়ে যায়।
প্রাকৃতিকভাবে হার্টের ভালভ শক্তিশালী করার উপায়:
সঠিকভাবে চলাফেরা করলে হার্ট ভালো রাখা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে হার্টের ভালভ শক্তিশালী করা সম্ভব। তার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। এছাড়াও হার্ট মজবুত হয়। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
খাবার সময় অবশ্যই চর্বিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। যুক্ত খাবার খেলে হার্টের সমস্যা হয়। এ কারণে বেশি বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। এবং হার্টের ভালভ শক্তিশালী হয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে ট্রপোনিন কমানোর উপায়:
ট্রপোনিন একটি রাসায়নিক পদার্থ। যা হার্টের ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশী থেকে নির্গত হয়। এটি হয় হার্টের সমস্যা হওয়ার ফলে। অনেকেই জানতে চাই, প্রাকৃতিক উপায়ে ট্রপোনিন কমানোর উপায়। প্রাকৃতিক উপায়ে ট্রপোনিন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
এছাড়াও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার খেলে হাড়ের সমস্যা না হয়। বিশেষ করে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে ট্রপোনিন কমানো সম্ভব।
লবণ হার্টের জন্য ক্ষতিকর কেন?
লবণ হার্টের জন্য ক্ষতিকর। কারণ অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ও স্নায়ুর উপর প্রভাব ফেলে। রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলার কারণে হার্টের উপর চাপ পড়ে।
যার ফলে হার্টের জন্য ক্ষতিকর। রান্না করা লবণের থেকে কাঁচা লবন খেলে হাড়ের সমস্যা বেশি হয়। এ কারণে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। তাহলে হার্ট সুস্থ থাকবে।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার:
কিছু খাবার রয়েছে যেসব খেলে হার্টের সমস্যা হয়। নিম্নে, হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলোর নাম তুলে ধরা হলো:
- কলিজা ও মগজ।
- চিংড়ি মাছ।
- ডিমের কুস।
- চিনি যুক্ত খাবার।
- লবণযুক্ত খাবার।
- অতিরিক্ত ফ্যাট যুক্ত খাবার।
- ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার।
- রেডিমিট খাবার।
শেষ কথা: হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
বর্তমান সময়ে হার্টের রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে অনিয়মিত ভাবে চলাফেরা। বিশেষ করে খাবারের প্রতি উদাসীন হওয়া। তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে হার্টের রোগ ভালো করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা।
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সঠিক থাকলে খুব সহজেই রোগ ভালো করা সম্ভব। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।