কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
|

কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত => আমরা সকলেই জানি প্রত্যেক মুসলমানের উপর মহান আল্লাহ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি কোন কারনে এই ওয়াক্তের নামাজ সময়মত না পড়া হয় তখন তাকে কাজা নামাজ বলা হয়।

কাজা নামাজ পড়া আবশ্যক আমরা অনেকেই হয়তো এই কাজা নামাজ এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নয়, অনেকেই হয়তো আমরা কাজা নামাজ টিকে ফরজ নামাজের মত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি না। আমাদেরকে জানতে হবে যে এটি আমাদের ওপর ফরজ হওয়া নামাজেরই একটি বিশেষ অংশ।

চলুন জেনে নেয়া যাক কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

(১) নামাজ কাজা হলে কি করতে হবে?

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে কোন ব্যক্তি নামাজ কাজা করবে এটি চিন্তাই করা যেত না। কারণ তারা প্রতিটি নামাজ নির্ধারিত ওয়াক্তেই আদায় করে নিত। মুসলিম ধর্মের প্রথম শর্ত হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। যদি কোন কারনে এ ওয়াক্তের নামাজ ছুটে যায় তখন তা কাজা নামাজ বলে গণ্য হয়।

ওয়াক্তের যে নামাজ কাজা হবে তার দিনের যেকোনো ভাগে অবশ্যই আদায় করে নিতে হবে। আর উক্ত কাজা নামাজে ফরজ ও ওয়াজিব নামাজটি আদায় করতে হবে কাজা নামাজের ক্ষেত্রে সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করার কোন প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুনঃ বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়

কারণ ফরজ নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক আর সুন্নাত ও নফল অতিরিক্ত ইবাদতের মধ্যে পড়ে। আর কোনভাবেই বিনা কোন ওজোরে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা করা যাবে না। এটি কবিরা গুনাহ ইচ্ছাকৃত নামাজ কাজা করলে তার কোন ক্ষমা নেই।

(২) কাজা নামাজ কত রাকাত পড়তে হয় ?

কাজা নামাজ মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নামাজ আল্লাহর হক কাজা নামাজ যত রাকাতই হোক না কেন তা না আদায় করা পর্যন্ত আপনি জিম্মাদারী। কাজা নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত ধরা বাধা নেই। কারণ এটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করে যে সে কত রাকাত নামাজ কাজা করেছে।

ধরুন কোন ব্যক্তির ফজরের নামাজ কাজা হয়েছে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির করণীয় যখনই তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে তখনই ফরজ সালাত আদায় করে নেয়া। আর না হয় যোহরের আগে কিংবা দিনে যে কোন ভাগে উক্ত কাজা নামাজ টি সে আদায় করে নিবে।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে তার কাজা নামাজ পড়তে হবে দুই রাকাত ফরজ। কারণ কাজা নামাজের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফরজ ও ওয়াজিব নামাজটি আদায় করতে হয় এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজা নামাজ আদায় করতে হয়।

(৩) সারা জীবনের কাজা নামাজ আদায় করার সহজ উপায় ?

কাজা নামাজ হতে পারে এক ওয়াক্তের একদিনের অথবা দীর্ঘ সময়ের যদি কোন ব্যক্তির কয়েক দিন কয়েক মাস অথবা কয়েক বছরের নামাজ কাজা হয়ে থাকে তখন তাকে “ওমরি কাজা “বলা হয়। যদি কোন ব্যক্তি ওমরি কাজা আদায় করতে চায় তবে তাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি অল্প অল্প করে দৈনিক তার কাজা নামাজগুলো আদায় করে নিতে হবে।

এমনটি হতে পারে যে সে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরবর্তী সময়ে প্রথম এক বছর ফজরের ফরজ নামাজটি আদায় করে নেবে। এভাবে ভাগ ভাগ করে যতদিন তার মনে না হয় যে তার ওমরি কাজা নামাজ আদায় করার শেষ হয়েছে ততদিন সে নামাজ আদায় করতে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ ঈদ অর্থ কি? ঈদের দিনের সুন্নত কাজ গুলো কি কি?

এবং মহান আল্লাহর আল্লাহর নিকট মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। পরবর্তীতে যেন সে আর নামাজ কাজা না করে। যদিও অনেক সময় সাপেক্ষ বিষয় কিন্তু তা আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। এভাবে সারা জীবনের কাজা নামাজ আদায় করতে হবে।

(৪) কত বছর বয়স হলে নামাজ আদায় করতে হবে ?

ইসলাম ধর্মে প্রথম শর্ত হলো নামাজ। এই নামাজ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট একটি বয়স রয়েছে প্রতিটি মুসলমানের জন্য সাত বছর বয়স হলে নামাজ মহান আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়স হলে নামাজের জন্য তাদেরকে তাগিদ দাও।

এবং দশ বছর বয়স হলে যদি সন্তান নামাজ না পড়ে তবে তার সাথে বিছানা পরিত্যাগ কর। ছেলেদের স্বপ্নদোষ এবং মেয়েদের বয়সন্ধিকাল এর পরেই তাদের ওপর নামাজ ফরজ হয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের প্রতিটি ইবাদত আমলনামায় লেখা শুরু হয়।

তাই নির্দিষ্ট বয়স পরবর্তীকালে প্রতি মুসলমানকে নামাজ আদায় করতে হবে। এক কথায় বলা যায় যে ছেলে ও মেয়ে উভয় বালেগ হওয়ার পরপরই তাদের উপর নামাজ আদায় করা ফরজ হয়ে যায়।

(৫) মুসলমানরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কেন আদায় করে ?

নামাজ আল্লাহর আদেশ। এই একটি কারণেই মুসলমানদের জন্য নামাজ আদায়ের জন্য যথেষ্ট পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে। নামাজ বেহেস্তের চাবি মুমিন ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য যাচাই করার এই একমাত্র মাধ্যম হলো নামাজ।

নামাজের মাধ্যমেই মানুষের রিজিক বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে তার জন্য ইহকাল ও পরকাল দুটোই সহজ করে দেয় মহান আল্লাহ তাআলা। নামাজের মাধ্যমে পরকাল প্রশস্ত হয় হাশর ও কবর দুটোই সহজ হয়ে দাঁড়ায়।

কেয়ামতের দিন যখন আমরা আমাদের কৃতকর্মের হিসাব দিব তখন এই নামাজ আমাদের জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। কোন ব্যক্তি যদি ঈমান মজবুত রেখে সকল নিয়মকানুন মেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে সে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজেই লিপ্ত হতে পারে না। তার মধ্যে প্রতিনিয়ত আল্লাহর ভয় কাজ করবে।

মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য। আর এই ইবাদতের অন্যতম মাধ্যমে হলো নামাজ কায়েম করা। তাই প্রতিটি মুসলমানই ইমান এনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করে থাকে।

(৬) কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম কি ?

যদি কোন ব্যক্তির জিম্মায় কাজা নামাজ থাকে তবে যেদিন বা যে সময় নামাজটি কাজা রয়েছে তা উল্লেখ করে নিয়ত করে নামাজটি আদায় করে নিবে। আর যদি মনে না থাকে তাহলে এই নিয়ত করবে যে আমি জীবনের সর্বপ্রথম জোহরের ফরজ সালাতটি আদায় করছি।

এভাবে তার জিম্মায় থাকা সকল কাজা নামাজ সে আদায় করে নিবে। কোন ব্যক্তি চাইলে নফল নামাজের পরিবর্তে কাজা নামাজ গুলো আদায় করতে পারে। কারণ নফল ইবাদত বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু কাজা নামাজ আদায় করা আবশ্যক।

আরও পড়ুনঃ ওযুর দোয়া, ফরয ও সুন্নতসমূহ

কাজা নামাজের ক্ষেত্রে নিয়তের সময় মূল নামাজের নিয়তই অনুকরণ করতে হবে। যদি সফরের সময় কারো কসর নামাজ কাজা হয়ে থাকে, তবে বাড়ি ফিরে তাকে কাজা কসর নামাজটি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাত এর জায়গায় দুই রাকাত আদায় করতে হবে।

তেমনি ঘরে কাজা হওয়ার নামাজ কেউ যদি সফরে গিয়ে আদায় করতে চায় তবে তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি আমাদের ধর্মীয় জীবনে নামাজ আদায় করা যেমন জরুরী তেমনি ভাবে যে সকল নামাজ আমরা সময়মত আদায় করতে না পারি বা আমাদের কাজা নামাজগুলো অবশ্যই আমাদেরকে আদায় করতে হবে।

কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি জিনিসের হিসাব নিবে যা আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যেককে নামাজ কায়েম করার তৌফিক দান করুন। লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।

শেষকথাঃ কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

আপনাদের বুঝার সুবিধার জন্য আমরা কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি এই পোস্টের মাধ্যমে। আশা করি কাজ নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে এখান থেকে সুষ্পষ্ট ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।

আমাদের লিখার মাঝে কোন রকম ভুল ত্রুটি রয়েছে বলে মনে হলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট  করে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত আপনার কমেন্টের রিপ্লাই করার চেষ্টা করবো ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *