রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস / রমজানের করনীয় কি কি
হিজরী বর্ষের সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদা পূর্ণ মাস রমজান। এ মাসের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবেনা। রমজান মাস আসলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) অনেক আনন্দিত হতেন। সাহাবী গন্ধের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিতেন “তোমাদের দরজায় বরকতময় মাস রমজান এসছে।
এছাড়াও সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, “ তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে”। পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস / রমজানের করনীয় কি কি সে সম্পর্কে জান মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রয়োজন।
রমজান মাস একটি বরকতময় মাস। এই মাসে পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। এবং প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য এই মাসের সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। এই কারণে এই মাসের ফজিলত অনেক। এই মাসে ইবাদত করলে হাজার মাসের তুলনায় সয়াব বেশি পাওয়া যায়।
এই কারণে রমজান মাসের ফজিলত অনেক। রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস নিয়ে নিম্ন আলোচনা করা হলো।
রমজানের ফরজ
রমজান মাসে ফরজ ইবাদত সিয়াম পালন করা। কোরআন মাজিদের আল্লাহ তা’আলা বলেন : “হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, এতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো (সূরা বাকার)।”
প্রাপ্তবয়স্ক, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমানের রোজা পালন করা ফরজ। রোজার পুরস্কার আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে প্রদান করবেন।
আরও পড়ুনঃ রমজানের সময় সূচি 2023 ইসলামিক ফাউন্ডেশন
রমজানের ওয়াজিবসমূহ
রমজান মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব দুটি। যথা: ঈদের সালাত পড়া ও সাদকাতুল ফিতর আদায় করা। ঈদের দিন সকালে যে ব্যাক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবেন তিনি তার নিজের ও তার নিজ পরিবারের সকল সদস্যের ফিতরা আদায় করবেন।
যদি কারো সম্পদের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ না হয় তবুও সুন্নাত বা নফল হিসেবে হলেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম।হজরত আবুসাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এর সময় আমরা ঈদের দিনে এক সা পরিমান খাদ্য পণ্য ফিতর হিসেবে প্রদান করতাম।
এছাড়াও আরো উল্লেখ করেন, তখন আমরা আমাদের খাদ্য পূর্ণ ছিল যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনির।
রমজানের সুন্নতসমূহ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যেসব ইবাদত করে গেছেন সেসব আমাদের জন্য সুন্নত। রমজান মাসে বিশেষ সুন্নাত রয়েছে। রমজানের সুন্নত সমূহ হলো:
- সেহরি খাওয়া।
- ইফতার করা ও করানো।
- কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করা।
- শেষ ১০ দিনে ইত্তেকাফ করা।
- শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে সবে কদর তালাশ করা।
রমজানের করণীয় কি কি?
রমজান মাস সকল মাসের তুলনায় মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসে কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। এবং এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। এই কারণে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মাসে আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। রমজানের করণীয় কি কি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- সিয়াম পালন করা।
- তারাবির সালাত আদায় করা।
- বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা।
- আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করা।
- বেশি বেশি ইত্তেগফার করা।
- নফল সালাত আদায় করা।
- গরীব দুঃখীদের মধ্যে দান সদকা করা।
- সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
হিজরী সালের সেরা মাস রমজান। এই মাসের গুরুত্ব সকল মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এই মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সিয়াম পালন করা। রমজান মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করা আল্লাহ তালার অত্যন্ত প্রিয় ইবাদত। রোজার প্রতিদান তিনি নিজ হাতে দিবেন।
আরও পড়ুনঃ ওমানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি
রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। নিম্নে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস কিছু তুলে ধরা হলো:
- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য-সিয়াম ব্যতীত’। কারণ, রোজা আমার জন্যেই এবং আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দিব।” (বুখারি: ১৯০৪)
- হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-বলতেন, ‘মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘাটতি বিভিন্ন গুনাহর ও ফিতনার কাফফারা হলো নামাজ, রোজা ও সদকা।’(বুখারি: ১৮৯৫)
- হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে বান্দা আল্লাহর পথে একটি মাত্র রোজা রাখবে, সে বান্দাকে আল্লাহ বিনিময়ে জান্নাত থেকে ৭০ বছরের পথ দূরে রাখবেন। (বুখারি: ২৮৪০)
- হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিনে রাইয়ান প্রবেশদ্বার দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবেন। রোজাদার ছাড়া কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। বলা হবে, ‘কোথায় রোজাদার গান?’
- হজরত উসমান বিন আবুল আস থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজা বা সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢাল স্বরূপ’।
- ‘কিয়ামতের দিনে কোরআন ও রোজা বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।’
রোজাদারের করনীয়
রমজান মাস সকল মাসের তুলনায় উত্তম। এই মাসে আল্লাহ বান্দার সকল আশা পুরন করে। এই মাসে রোজা পালন করা ফরজ। রোজাদারদের কিছু করণীয় রয়েছে। নিম্নে রোজাদারের করনীয় তুলে ধরা হলো:
- তারাবির সালাত আদায় করা।
- শেষ রাতে সেহরি খাওয়া।
- খেজুর দিয়ে ইফতার করা।
- সময় হওয়ার পর ইফতারের জন্য দেরি না করা।
- সকল ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
- অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করা।
কুরআন পড়লে কি হয়
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম ইবাদত। (বুখারী)। যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের একটি হরফ পাঠ করলো সে ব্যক্তি দশটি নেকি প্রাপ্ত হলো। যে ব্যাক্তি কোরআন শরীফ পাঠ করল, তা অনুবাদ করল হালালকে হালাল জানালো এবং হারাম কে হারাম বলল।
আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এছাড়াও তার স্বজনদের মধ্যে এমন দশজনকে সাফায়েত করে জান্নাতে নেওয়ার সুযোগ দেবেন।
এই কারণে কোরআন পড়লে এত ফজিলত। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করলে এর ফজিলত আরও বৃদ্ধি পায়। এই কারণে, প্রতিটি মুসলমানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। কেয়ামতের দিনে কোরআন আপনার পক্ষে সাকি প্রদান করবে।
আরও পড়ুনঃ লন্ডনে রোজার সময়সূচি ২০২৩ / london ramadan timetable 2023
কুরআনের গুরুত্ব
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম ধর্মে সকল বিষয়ের সঠিক বিশ্লেষণ রয়েছে। আর এই ধরনের সবচেয়ে বড় গ্রন্থ আল কুরআন। আল কুরআনে সকল কিছুর সঠিক বিশ্লেষণ রয়েছে। ইসলাম ধর্মের দলিল স্বরূপ। কোরআন মাজিদে একটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পথ চলার সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর রয়েছে।
এই কারণে, কোরআনের গুরুত্ব অনেক বেশি। পৃথিবীতে একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন। যার শুরু থেকে শেষ অব্দি কোন ভুল নেই। এবং এই কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলার নিজের। এই কারণে, কুরআন মাজীদে কোনো ভুল নেই।
কুরআন নাযিল শুরু হয় কত রমজান?
পবিত্র কুরআন মাজীদ রমজান মাসে নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, কুরআন মাজিদ মানুষের জন্য হেদায়াদ রুপে এবং পথ নির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য মিথ্যা পার্থক্য নির্ণয় কারী হিসেবে নাযিল করেছেন। কুরআন মাজীদ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব।
যা স্বর্গ শেষ নবী ও রাসূল (সা.) এর উপর নাযিল হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোন কিতাব এবং নবী রাসুল আসবেন না।
রমজান মাসের কদরের রাতে কুরআন মাজীদ আল্লাহতালা নাযিল করেন। কদরের রাত হচ্ছে ২০ রমজানের পর বেযুড় রাত। এই সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর উপর কোরআন মাজীদ নাযিল হয় ফেরেশতা জিব্রাইল এর মাধ্যমে। এরপর আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ কোরআন নাজিল হয়।
রমজান মাসে প্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়েছিল ও কোথায়?
রমজান মাসের কদরের রাত্রে কোরআন মাজীদ নাযিল করা হয়। কুরআন মাজীদ নাযিল করা হয় প্রথম আসমানের বাইতুল বায়তুল ইজ্জা নামক স্থানে সম্পূর্ণরূপে। ৬১০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই সেখান থেকে ফেরেস্তা জিব্রাইলের মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর ওপর খন্ড খন্ড ভাবে নাযিল করেন।
ফেরেশতা জিব্রাইল কুরআন নাজিলের জন্য আসমান থেকে জমিনে চল্লিশ হাজার বার আহরণ করেন। সম্পূর্ণ কোরআন নাজিল হতে সময় লেগেছিল ২৩ বছর। এই থেকে বোঝা যায় সম্পূর্ণ কোরআন একবারে নাযিল হয়েছিল।
আল কুরআনের প্রথম সূরা কোনটি?
আমরা অনেকেই জানতে চাই কোরআন মাজিদের প্রথম সূরা কোনটি। অনেকে মনে কোরআনের প্রথম সূরা বাকারা। কুরআন মাজীদের প্রথম সূরা হলো আল ফাতিহা। সূরা আল ফাতিহার আয়াত সংখ্যা সাতটি।
কুরআনের কয়টি অধ্যায়?
পবিত্র কুরআন মাজিদের সূরা সংখ্যা ১১৪ টি। এবং এর অধ্যায় বা পারা ৩০ টি। কোরআন মাজীদের প্রথম সূরা আল ফাতিহা। এবং সর্বশেষ সূরা আল নাস। ৩০ পারা কুরআনের মধ্যে সূরা আল বাকারা সবচেয়ে বড়। এই একটু সূরাই ১ পারা।
শেষ কথা: রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস / রমজানের করনীয় কি কি
হিজরী সনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান মাস। এই মাসের ফজিলত সকল মাসের তুলনায় বেশি। এই মাসের পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। এবং এই মাসে রোজা পালন করা সকলের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এই মাসের ইবাদত সকল মানুষের তুলনায় উত্তম।
আল্লাহ নিজে ঘোষণা দিয়েছেন রমজান মাসের সিয়ামের পুরস্কার তিনি নিজ হাতে দিবেন। এই কারণে রমজান মাসের ফজিলত এত। রমজান মাস মানেই প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য আনন্দের সংবাদ। এই মাসেই সারা বছরের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আল্লাহর এই মাসের নফল ইবাদতের মর্যাদা ফরজের সমান করে দেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।