স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত?
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত? সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নয়। অসাধারণ প্রতিভার লোকজনের মস্তিষ্ক সম্পর্কে সাধারন মানুষের অনেক কৌতুহল থাকে। ওইসব মানুষের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে কি অন্যরকম।
বিভিন্ন গবেষণা করে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। গবেষণায় দেখা যায় প্রত্যেকটা মানুষেরই স্মৃতিশক্তি সমান। তার সঙ্গে আরো গবেষণা করে দেখেছেন কিভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায়। কিছু উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানুষ তার জীবনে মস্তিষ্কের খুব সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করে থাকে। মানুষ তার সারা জীবনে মস্তিষ্কের তিন ভাগের এক ভাগ ব্যবহার করে থাকে। বাকি অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়।
মাংসপেশির মতো মস্তিষ্কের যত বেশি চর্চা ও ব্যবহার করা হয় ততো কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটার চেয়েও শক্তিশালী। কিন্তু নিয়মিত চর্চা করতে হবে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত? আজ সেই সম্পর্কে আলোচনা করব।
নিয়মিত ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়। এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে, নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি হয়। যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে। শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে। মন ভালো থাকলে সবকিছুই ভালো লাগে।
শরীর ও মনের সাথে ব্রেনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। শরীর ঠিক থাকলে মস্তিষ্ক ঠিক থাকে। এ কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের অংশগুলোতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং ভলিউম বাড়িয়ে স্মৃতির সঙ্গে জড়িত কর্মক্ষমতার উন্নতি করে।
আরও পড়ুনঃ হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম ও কাজ
মস্তিষ্কের একটা অংশ হলো হিপোক্যাম্পাস যা কোন কিছু শিখা এবং স্মৃতিশক্তি জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
মেডিটেশন করা:
মেডিটেশন করার ফলে স্বাস্থ্য ও মন দুটোই ভালো থাকে। এ কারণে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত মেডিটেশন করা প্রয়োজন। নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয় মেডিটেশন করার ফলে।
এটা শুধু শরীরের জন্য ভালো না এটি আপনার মস্তিষ্ক জন্য উপকারী। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে মস্তিষ্কের গ্রে-ম্যাটার বৃদ্ধি পায়।
আমাদের মস্তিস্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য গ্রে ম্যাটার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে মেদিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিকর খাবার:
নিয়মিত ব্যায়াম এবং মেডিটেশন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় না। তার সাথে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ ব্যায়াম ও মেডিটেশন করার পর আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পড়ে। যার ফলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে আমাদের শরীরে কি থাকে।
শরীর ঠিক থাকার পাশাপাশি কিছু খাবার আছে যেসব খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। খাবার খাওয়ার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা খুব সহজ ব্যাপার। অনেক সময় পুষ্টির অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কোন কিছু মনে রাখা সম্ভব হয়না।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে পুষ্টিকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন নতুন তথ্য মনে রাখবে সাহায্য করে। গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তর করে থাকে। তাই আমরা বেশি করে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন যুক্ত খাবার খেতে পারি।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা কম পরিমাণ চিনি খেয়ে থাকে তাদের চেয়ে যার বেশি পরিমাণ খায় তাদের স্মৃতিশক্তি কম হয়। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং মস্তিষ্কের ঘনত্বের পরিমাণ করা যায়।
চর্বিযুক্ত মাছ খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। মাসে থাকবে থাকে ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড। যা মস্তিষ্কের গঠনের একটি প্রধান একক। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে যার ফলে সহজেই সবকিছু মনে রাখা সম্ভব হয়।
অনেক ধরনের খাবার খেলে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় নিম্নে কিছু পুষ্টিকর খাবারের নাম তুলে ধরা হলো:
- দুধ
- ডিম
- সামুদ্রিক মাছ
- মাছের তেল
- সূর্যমুখী তেল
- গ্রিন টি
- কমলালেবু
- লাউ এবংমিষ্টি কুমড়ার বীজ
- সকল ধরনের বাদাম
- হলুদ
- ভিটামিন ই
- পালং শাক
- অলিভ অয়েল
উপরে যে সব খাবারের উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো খাবার নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও অনেক খাবার হয়েছে যেসব খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। সাধারণ উপরে যে সব খাবারের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো খেলেই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার সম্ভব।
পর্যাপ্ত ঘুম:
সারাদিন কাজ করার পরে শরীর যেরকম ক্লান্ত হয় ঠিক একইভাবে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ কমানোর ফলে মস্তিষ্ক ঠিক আগের মতই সচল হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে রাতে ঘুমাতে হয়।
রাতে যদি ঘুম কম হয় তাহলে বাধ্যক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে মস্তিষ্কের বাধা সৃষ্টি করে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কমাতে হবে। নিয়মিত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক বুড়ো হয়ে যায়। যার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। নিয়মিত ঘুমানোর ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ঠান্ডা পরিবেশ: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত?
গরমে থেকে ঠাণ্ডা পরিবেশে স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিনগুণ বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও ঠাণ্ডা পরিবেশে মাথা ঠান্ডা থাকে। মাথা ঠান্ডা থাকার ফলে আমাদের ব্রেন সতেজ থাকে। যার ফলে সহজেই সবকিছু মনে রাখা সম্ভব হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্রেনের কার্যক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ কারণে ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকলে আস্তে আস্তে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। গরমের সময় আমাদের শরীরের রক্ত গরম থাকে যার ফলে ব্রেন উত্তেজিত থাকে। কোন কিছুই সঠিকভাবে মনে রাখা সম্ভব হয়না।
হাঁটাহাঁটি করা:
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি ব্রেন সুস্থ থাকে। হাঁটাহাঁটি করার ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। যার ফলে ব্রেনের উপর কোন চাপ পড়ে না। ওই সময় কোন কিছু বললে ব্রেন সহজেই মনে রাখতে পারে।
এ কারণে, নিয়মিত ২০ মিনিট হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য এবং ব্রেইনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাঁটাহাঁটি করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পায়ের আঙ্গুল মেসেজ করা:
প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ মিনিট করে পায়ের আংগুল মেসেজ করুন। প্রথমে আঙুলের উপর থেকে নিচের দিকে মেসেজ করুন। পায়ের আঙ্গুল মেসেজ করার ফলে মস্তিষ্কের কোষে সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। নিয়মিতভাবে পায়ের আঙ্গুলে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়। যার ফলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। সুস্থ মস্তিষ্ক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করা:
আমরা সাধারণত প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করে থাকি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি কিছুক্ষণ পড়াশোনা করি। তারপর স্কুল-কলেজের যায়। বিকেলে খেলাধুলা করি। এবং রাতে পড়তে বসি। এটাই হচ্ছে ছাত্রজীবনের রুটিন।
কিন্তু এরোডিন পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে কি কাজ করার ফলে আমাদের ব্রেইনে কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় না। যার ফলে নতুন কিছু শিখতে পারি না। কারণে দৈনিক রুটিন পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের মস্তিষ্ক অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিনের কাজের রুটিন পরিবর্তন করতে হবে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কাজ করার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকে। এবং স্মৃতিশক্তি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। এজন্য প্রতিদিনের কাজের রুটিন পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
নতুন কিছু করা:
মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধির একটা পথ হলো নতুন কোন কাজ করার জন্য মস্তিষ্কে চ্যালেঞ্জ করা। প্রতিদিন নতুন নতুন কাজ করার ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অবসর সময়ে নতুন কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
এসব কাজের মধ্যে ছবি আঁকা বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা এসব কাজ করতে পারেন। এসবের পাশাপাশি গান শুনতে পারেন এবং মুখস্ত করার চেষ্টা করুন। নিয়মিতভাবে সব কাজ করে মস্তিস্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
শেষ কথা: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত?
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত? এ সম্পর্কে আমাদের জেলে থাকা প্রয়োজন। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেলে কোন কিছু মনে রাখা সম্ভব না। মস্তিস্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য উপরে সব আলোচনা করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ কনটেন্ট করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত? সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবে পাবে। মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মস্তিষ্ক আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সম্পন্ন লেখা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।