হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
গরমের সময় হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে। অতিরুক্ত গরমে অনেকেই এই সমস্যায় ভোগে। তবে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানলে এই সমস্যা থেকে বাচা যায়। বর্তমান সময়ে হিট স্ট্রোক অনেক বেড়েছে। কারণ এখণ তাপমত্রা অনেক বাড়ছে।
এছাড়াও বর্তমানে খাবারে অনেক ভেজাল রয়েছে। যার জন্য শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সঠিক ভবে চলাফেরা করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
নিম্নে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। সম্পন্ন লেখাটি পড়লে হিট স্ট্রোক সম্পকে সঠিক ধারণা পাবেন।
সান স্ট্রোক কি?
সান স্ট্রোক হল সূর্যের অতিরিক্ত তাপের ফলে যে স্ট্রোক হয় তাকে সান স্ট্রোক বলে। অতিরিক্ত রোদের কারণে গরম লাগে। শরীরে অনেক তাপ সৃষ্টি হয়। এই তাপ সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক হয়। আর এই চোখ স্ট্রোকে বলা হয় সান স্ট্রোক।
হিট স্ট্রোক কেন হয়?
অতিরিক্ত গরম লাগলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায় তখন এই সমস্যা কে হিট স্ট্রোক বলে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরম লাগলে শরীরের মধ্যে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। এই সময় হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।
স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি?
বর্তমান সময় মানুষের স্ট্রোক এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, বর্তমানে আবহাওয়া অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নিম্নে, স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি? তুলে ধরা হলো:
- হাটতে অসুবিধা হওয়া।
- মাথা ঘুরানো ও ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া।
- কথা বলার সময় সমস্যা হওয়া।
- শারীরিকভাবে দুর্বল লাগা।
- অবশ, শরীরের একপাশ অকেজো হওয়া।
- চোখে অন্ধকার দেখা।
- হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয় কি?
গ্রীষ্মকাল অতিরিক্ত তাপদাহ হয়। এই সময় হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিলে রোগীর প্রাণ সংশয় কমে যায়। নিম্নে হিট স্ট্রোক হলে করণীয় কি? তুলে ধরা হলো:
- হিট স্ট্রোক হলে রোগীদের সাথে সাথে ঠান্ডা পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে।
- যেকোনো উপায়ে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে।
- কিছুক্ষণ পর পর ভিজা কাপড় দিয়ে ঘাম মুছতে হবে।
- রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
Heat Stroke কেন হয়?
স্ট্রোক হলো এক ধরনে রোগ। মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে স্ট্রোক হয়। অতিরিক্ত গরম লাগলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বিঘ্ন ঘটে। সেই সময় Heat Stroke হয়। এই স্ট্রোক হয় বিশেষ করে গরমের সময়।
সানস্ট্রোক কতদিন থাকে?
গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পায়। এই সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। সেই সময় বাহিরে চলাফেরা করতে অনেক অনেক সমস্যা হয়। এই সময় অতিরিক্ত গরমে মানুষের সানস্ট্রোক হয়। সানস্ট্রোক হলে অনেক সমস্যা হয়। তবে এই সমস্যা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
সানস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন প্রয়োজন?
প্রাথমিক চিকিৎসার ফলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। এ কারণে কোন ধরনের দুর্ঘটনা হলে সাথে সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হয়। কারণ, দুর্ঘটনা ঘটার সময় সেই স্থানে ডাক্তার থাকে না। ডাক্তার আসা পর্যন্ত বা ডাক্তারের কাছে রোগীকে নেওয়া যাওয়া বন্ধ জীবিত রাখতে হয়।
আরও পড়ুনঃ হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
সেই সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। ঠিক একই ভাবে সানস্ট্রোক করলে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। স্ট্রোক করলে রোগীর সাথে সাথে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু সঠিক সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা ৮০% কমে যায়। এ কারণে সানস্ট্রোকের প্রাথামক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।
হিট স্ট্রোক এর কারণ ও প্রভাব
বাংলাদেশের আবহাওয়া মানুষ বসবাসের জন্য উপযুক্ত। না আছে অতিরিক্ত গরম না আছে অতিরিক্ত ঠান্ডা। তবে বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে ৪০ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের হিট স্ট্রোক হচ্ছে। হিট স্ট্রোকের ফলে অনেক মানুষের প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে।
বিশেষ করে হিট স্ট্রোক হচ্ছে হঠাৎ করে গরমের কারণে। হিট স্ট্রোকের প্রভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়াও মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। যেমন কথা বলতে না, হাত অথবা পা অকেজ হওয়া। এসব হিট স্ট্রোকের প্রভাবে হচ্ছে।
হিট স্ট্রোক থেকে মুক্তি পেতে কতদিন সময় লাগে?
বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত গরমের ফলে মানুষের হিট স্ট্রোক হচ্ছে। হিট স্ট্রোক হলে সাথে সাথে চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে না। তবে শারীরিকভাবে অনেক সমস্যা হতে পারে।
হিট স্ট্রোক থেকে মুক্তি পেতে কতদিন সময় লাগে সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে শারীরিকভাবে কোন অঙ্গ অকেজো না হলে দুই থেকে তিন দিনের মতো সময় লাগে।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়:
বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত গরম পড়েছে। যার ফলে মানুষের হিট স্ট্রোক হচ্ছে। তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়। নিম্নে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় তুলে ধরা হলো:
- রোদের সময় বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ঢিল কাপড় পরিধান করতে হবে।
- অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে।
- কোন সময় অতিরিক্ত গরম লাগানো যাবে না।
- ঠান্ডা জাতীয় ফল খেতে হবে। বিশেষ করে তরমুজ।
- মাঝে মাঝে কাঁচা আমের জুস খেতে হবে। যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- কিছুক্ষণ পরপর গা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
তাপ ব্যাথা তাপ ক্লান্তি এবং তাপ স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া কি?
অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন: তাপ ব্যথা, তাপ ক্লান্তি এবং তাপ স্ট্রোক। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ব্যথা অনুভব হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত শরীল খাওয়ার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমন কি অনেক সময় তাপ স্ট্রোক হয়।
আরও পড়ুনঃ মোটা হওয়ার ঔষধের নাম
এই সমস্যাগুলো হয় হঠাৎ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে অতিরিক্ত গরম থেকে বিরত থাকতে হবে। সব সময় সচেতন থাকতে হবে। যেন অতিরিক্ত গরম না লাগে। এবং যেসব খাবার খেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ লেবুর শরবত খেতে হবে।
তাপ ক্লান্তি এবং ডিহাইড্রেশন কি একই জিনিস:
তাপ ক্লান্তি এবং ডিহাইড্রেশন একই মনে হলেও দুইটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরে তাপমাত্র বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত গা ঘামে। যার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রায় সকল ধরনের পুষ্টি বের হয়ে যায়।
এই সমস্যাটি হয় গরমের সময়। ডিহাইড্রেশন হয় শরীরে পানি শূন্যতার কারনে। কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন তার চাহিদা তুলনায় কম পানি পান করে তাহলে ডিহাইড্রেশন হয়। ডিহাইড্রেশন এর ফলে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
যার ফলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার সময় কম পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন হয়। তাপ ক্লান্তি থেকে অনেক সময় ডিহাইড্রেশন হয়।
আমি অন্যদের চেয়ে বেশি গরম অনুভব করি কেন?
মানুষের শরীরের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ কোনো ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আবার কোন ব্যক্তির নিম্ন রক্তচাপ। যেসব ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ তাদের গরম বেশি লাগে। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে অন্যদের চেয়ে বেশি গরম অনুভব করবেন।
এছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এমন খাবার খেলে অন্যদের তুলনায় বেশি গরম লাগবে।
মোটা মানুষ কি গরম থাকে?
স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় মোটা মানুষের গরম বেশি। কারণ, মোটা মানুষের শরীরে রক্ত বেশি থাকে। যার কারণে শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকে। এছাড়াও মোটা মানুষের গায়ের চামড়া মোটা হয়। যার কারণে, তাপমাত্রা শরীরের ভেতর থেকে সঠিকভাবে বের হতে পারে না।
যার কারণে মোটা মানুষের শরীর গরম থাকে। এছাড়াও মোটা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ এর মত সমস্যা থাকে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় বেশি থাকে। বিশেষ করে মোটা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ এর প্রবণতা বেশি থাকে। যার ফলে মোটা মানুষের গা গরম থাকে।
অতিরিক্ত গরমে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়?
মানুষের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় অতিরিক্ত গরমে। অতিরিক্ত গরমের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। নিম্নে অতিরিক্ত গরমে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়? তুলে ধরা হলো:
আরও পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময়
- অতিরিক্ত গরমের ফলে হিট স্ট্রোক হয়।
- অতিরিক্ত গা ঘামে।
- শরীরে পানি শূন্যতা দেখা যায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হয়।
- তোকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ঘামাচি হয়।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- তীব্র মাথাব্যথা হয়।
- মাংস দুর্বল হয়ে পড়ে।
হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা:
সকল ধরনের রোগের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা অনেক জরুরী। প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা ৮০% কমে যায়। নিম্নে হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো তুলে ধরা হলো:
- রোগীর গায়ের কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
- হিট স্ট্রোক হলে রোগীদের সাথে সাথে ঠান্ডা পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে।
- বাসায় এসি থাকলে সাথে সাথে চালু করতে হবে।
- যেকোনো উপায়ে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে।
- রোগীর কাঁধে ও বগলে বরফ দিয়ে রাখতে হবে।
- কিছুক্ষণ পর পর ভিজা কাপড় দিয়ে ঘাম মুছতে হবে।
- রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
হিট স্ট্রোক এর ঘরোয়া চিকিৎসা:
বর্তমান সময়ে হিট স্ট্রোকের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কারণ আগের তুলনায় বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে হিট স্ট্রোক এর ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক সময় ঘরোয়া চিকিৎসা করলে হিট স্ট্রোক এর রোগীকে সুস্থ করা যায়। হিট স্ট্রোকের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পকে আলোচনা করা হলো:
- রোগির গায়ের কাপড় খুলতে হবে।
- যত দ্রুত সম্ভব শিতল স্থানে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।
- গরীকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।
- ফান বা পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে।
- প্রচুর পরিমান ঠান্ড পানি পান করাতে হবে।
- যতো দ্রুত সম্ভব রোগীর জ্ঞান ফিরাতে হবে।
- যতো দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
সকল রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করলে স্ট্রোক করা রোগীর ঘরোয়া চিকিৎসা করা যাবে না। কারণ, একটু সমস্যা হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
শেষ কথা:হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
গরমের সময় আসলে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ঠিক মতো চলা ফেরা করতে পারা যায় না। ঠিক মতো খাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে হিট স্ট্রোক হচ্ছে। যার কারণে অনেক সাবধানে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
তবে সাবধানে চলা ফেরা করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমার বিশ্বাস সম্পূণূ লেখা পড়লে হিট স্ট্রোক থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পন্ন লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধ্যনবাদ।