ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত
|

ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত

ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাতঃ মানুষ সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই ঘুমানোর প্রয়োজন। কারণ সারাদিন কাজ করার ফলে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘুমালে সেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ইসলাম ধর্ম ঘুমানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে ঘুমালে ঘুম ভালো হয় এবং ঘুমের মধ্যে ইবাদত হয়।

ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত আমাদের জানার প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রত্যেকের মৃত্যুবরণ করতে হবে। আর সুন্নত কাজ করে গেলে মৃত্যুর পর মহানবী (সাঃ) এর সুপারিশ পাওয়া যাবে। নিম্নে, ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ঘুমানোর সঠিক সময়:

সঠিক সময় না ঘুমালে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হয় না। ঘুমানোর সঠিক সময় হচ্ছে রাত ৯ টার পর থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত। ঘুমের জন্য দায়ী মেলাটোনিন হরমোন। এই হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় রাত ৯ টার পর থেকে। এজন্য ঘুমানোর সঠিক সময় রাত ৯ টার পর। সুস্থ মানুষের দিনে ৮ ঘন্টা ঘুমানো যথেষ্ট।

রাতে কোন সময় ঘুমানো উচিত?

রাত্রে সঠিক সময় ঘুমালে কার্ডিওভাসকুলার হেলথের সমস্যা পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে রাতে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সম্প্রতি UK-তে একটি গবেষণা হয়। সেই গবেষণা থেকে জানা যায় রাত ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঘুমানোর সঠিক সময়।

১১ বছরের বাচ্চার ঘুমানোর সময়:

১১ বছরের বাচ্চাদের প্রায় ৯ ঘণ্টার মধ্যে ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে। কারণ এই সময় বাচ্চারা অনেক খেলাধুলা করে। যার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও এই সময় পড়াশোনা করতে হয়। ১১ বছরের বাচ্চার ঘুমানোর সময় সময় হচ্ছে রাত দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে ঘুমানো। 

আরও পড়ুনঃ ব্যায়ামের উপকারিতা কি কি

এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা। কারণ সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে শরীর ঠিক থাকে। এই সময় মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। এ কারণে সকালে পড়াশোনা করবে খুব সহজে মনে থাকে। ১১ বছর বয়সী বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। এবং খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে।

ইসলামে ঘুমানোর নিয়ম:

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এখানে সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে। একই ভাবে ঘুমানোর নিয়ম রয়েছে ইসলামে। ইসলামে ঘুমানোর নিয়ম নিম্নে তুলে ধরা হলো:

  1. ঘুমানোর আগে ওযু করতে হবে।
  2. পশ্চিম দিকে অথবা উত্তর থেকে মাথার উপরে ঘুমাতে হবে।
  3. ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমাতে হবে।
  4. ঘুমানোর আগে দোয়া পড়তে হবে।

উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো যাবে কি না?

পশ্চিম বা উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো নিষেধ। এই কথা কোন হাদিসের উল্লেখ নেই। এটি হারাম অথবা মাকরুহ বা অপছন্দনীয় এমন কথা মহানবী (সাঃ) এর হাদিসের পাওয়া যায়নি। কারণ আল্লাহ সব দিক তৈরি করেছেন। এই কারণে আল্লাহর কাছে সকল দিক সমান।

তবে মুসলমান ব্যক্তি ইন্তেকাল করলে উত্তর দিকে মাথা রেখে কবর দেওয়া হয়। যার কারণে আমরা সকলেই উত্তর দিকের সম্মান করে থাকে। যদি সম্ভব হয় পশ্চিম ও উত্তর দিকে পা না রেখে ঘুমানো ভালো। তবে ওই দিকে পা রেখে ঘুমালে পাপ হবে এমন কথার উল্লেখ নাই।

কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত নয়?

অনেক ব্যক্তির ঘুমালে সমস্যা হয়। বিশেষ করে ঘুমের সমস্যা, অনিদ্রা, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়া। তবে সব সমস্যা হয় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম না জানার কারণে। এছাড়াও ভারতের একটি গবেষণা দেখা গিয়েছে উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমালে এই সমস্যা হয়।

আরও পড়ুনঃ প্যারালাইসিস কেন হয়? প্যারালাইসিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

কারণ পৃথিবীর উত্তর মেরুতে চুম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে। উত্তরা দিকে মাথা রেখে ঘুমালে দুই মেরু মিলে যায়। যার ফলে ঘুমের সমস্যা হয়। এছাড়াও মৃত্যুর পর মানুষকে উত্তর দিকে মাথা রেখে মাটি দেওয়া হয়। এসব দিক ভেবে উত্তর দিকে মাথা না রেখে ঘুমানো ভালো।

লাইট অন করে ঘুমালে কি ক্ষতি হয়?

লাইট অন করে ঘুমালে কি ক্ষতি হয়? আমরা অনেকেই জানিনা। লাইট অন করে ঘুমালে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিক্স হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণায় তথ্য বেরিয়ে আসে লাইট অন করে ঘুমালে চোখ থেকে এক ধরনেরস্নায়বিক উদ্দীপনা তৈরি হয়।

এই উদ্দিপনা মস্তিষ্কের সেই অংশটিকে সঞ্চারিত হয় যেখান থেকে হরমোন এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এইসব কারণে অনেক পরিবর্তন আসে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ক্যান্সার এছাড়াও স্মৃতি শক্তি কমে যায়। এই কারণে লাইট অন করে ঘুমানো উচিত নয়।

কোন দিকে ঘুমানো সুন্নত:

ঘুম হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত। কারণ ঘুম না হলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং আস্তে আস্তে আমাদের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এই কারণে ঘুম আল্লাহর নিয়ামত। হবে ঘুমানোর কিছু সুন্নাত রয়েছে। অনেকেই জানতে চাই কোন দিকে ঘুমানো সুন্নত। ডান কাত ঘুমানো সুন্নত।

কোন কোন সময় ঘুমানো নিষেধ:

নির্দিষ্ট কিছু সময় রয়েছে যে সময় ঘুমালে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয়। সেই সময়টি হল মাগরিব ওয়াক্ত থেকে এশার ওয়াক্ত পর্যন্ত। এই সময় ঘুমানো মাকরূহ। এই বিষয় ইসলামিক স্কলাররা মত দিয়েছে। এই সময় কোন ভাবে ঘুমানো ঠিক না। এতে করে শরীরের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত:

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহতালা মহানবী (সাঃ) এর মাধ্যমে মানুষের কাছে বাত্রা পুছিয়েছে। তিনি যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সব করলে আমাদের ক্ষতি হয়। এবং যেসব কাজ করতে বলেছে সেসব করলে আমাদের অনেক উপকার হয়। ঘুমানোর সুন্নতগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:

  1. ঘুমানোর আগে ওযু করা।
  2. বিছানা ঝেড়ে নেওয়া।
  3. আয়তালকুসরী পাঠ করা।
  4. বাকারা সুরার শেষের দুই আয়াত পড়া।
  5. সূরা ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়া।
  6. খাবারের পাত্র ঢেকে রাখা।
  7. চোখে সুরমা লাগানো।
  8. ডান কাত হয়ে ঘুমানো।
  9. লাইট অফ করা।
  10. তাসবিহ পাঠ করা।

রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়:

রাত্রে ঘুমানোর আগে করনীয় কি আমাদের জানা সকলের প্রয়োজন। উপরে যেসব সুন্নাতের কথা বলা হয়েছে এগুলোই রাতে ঘুমানোর করণীয়। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এতে করে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়।

এতে করে ঘুম ভালো হয়। ঘুমানোর আগে পানি পান করলে ঘুম ভালো হয়। সবচেয়ে ভালো হয় রাতে ঘুমানোর আগে গ্লাস দুধ পান করা। এতে করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় এবং ঘুম ভালো হয়।

ঘুমানোর আগে আমল:

ইসলাম ধর্মে ঘুমানোর আগে ও কিছু আমল রয়েছে। সঠিকভাবে ঘুমালে ঘুমের মধ্যেও আল্লাহর ইবাদত হয়। ঘুমানোর আগের আমল গুলো নিম তুলে ধরা হলো:

  1. সুরা ফাতিহা
  2. দরুদ শরিফ
  3. আয়াতুল কুরসি
  4. সুরা ইখলাস সুরা নাস
  5. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
  6. সুরা হাশরের শেষ আয়াত
  7. সুরা তওবার শেষ দুই আয়াত সুরা ফালাক
  8. সুরা কাফিরুন

ঘুমানোর আগে পড়া সব থেকে উত্তম আমল। তাই এই আমল করা আমাদের উচিত।

ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময়:

ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময় হচ্ছে, সূর্য ওঠার আগে। এই সময় আবহাওয়া থাকে এবং আলো কম থাকে। সকালে তৈরি করে ঘুম থেকে উঠলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মস্তিষ্ক এবং চোখের উপর প্রভাব পড়ে। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে শরীর ঠিক থাকে। 

এই কারণে সূর্য ওঠার সর্বনিম্ন আধাঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত:

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একজন সুস্থ ব্যক্তি রাতে ৬ ঘন্টা ঘুমালে সুস্থ থাকতে পারে। তবে শিশুদের নয় থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমাতে হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ কমে যায়।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা:

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো উপকারিতা অনেক। সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে হলে রাত দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে।

এই সময় মানুষের মধ্যে অনেক দুশ্চিন্তা শুরু হয়। যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটে। তাই সুস্থ থাকার জন্য রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমানো উচিত। এবং সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা উচিত।

শেষ কথা: ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত

সারাদিন কাজ করার ফলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘুমালে সেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবে ঘুমানোর আগে অনেক সুন্নত কাজ রয়েছে। যেগুলো করে ঘুমালে ঘুমের মধ্যেও ইবাদত হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts