লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার উপায়সমূহ

লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার উপায়সমূহ

লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার উপায়সমূহ

লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার উপায়
চিত্র: লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার উপায়।

মনােযােগ দেওয়ার কাজটি বিশ্লেষণ করলে আমরা কতকগুলাে উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাই। মনােযােগ একটি ইচ্ছামূলক প্রক্রিয়া ও আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোন একদিকে মনােযােগী হই। এই মানসিক প্রক্রিয়াটিকে একটি বিশেষ দিকে চালিত করতে হয়। এই প্রক্রিয়া চেতনাকে বস্তুর উপর কেন্দ্রীভূত করে বস্তুর ধারণাকে সুস্পষ্ট করে।

আরও দেখুনঃ জেনে নিন, লেখাপড়ায় কিভাবে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়

চেতনার ক্ষেত্র থেকে অপসারণ করাই হলাে মনােযােগের ধর্ম। মনােযােগ নির্বাচনধর্মী ও একটি বিষয় নির্বাচন করা ও অপরগুলিকে বর্জন করা যখন পাঠ্যবিষয়ের উপর গভীরভাবে মন নিবন্ধ করে, তখন সে অন্যান্য বিষয় যেমন- রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলার শব্দ, পাখির ডাক, ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাকে চেতনার ক্ষেত্র। বর্জন করে না।

মনোযোগের বৈশষ্ট্যিসমূহ (Characteristics of Attention):

১.মনােযােগের সদর্থক (Positive) ও নঞর্থক (Negative) দুটি দিক রয়েছে:

যে বিষয়ের প্রতি মনােযােগ দেয়া হয় তাকে বলা হয় সদর্থক দিক, আর যে বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে নেয়া হয় তাকে বলে নঞর্থক দিক। যেমন- বই পড়ার সময় টিভিতে নাটক প্রচারিত হলে পড়া বাদ দিয়ে নাটক দেখছেন। এক্ষেত্রে নাটক দেখা সদর্থক দিক এবং বই না পড়া নঞর্থক দিক।

২.মনোেযােগর ক্ষেত্র খুবই সীমিত বা সংকীর্ণ:

প্রতিনিয়ত অসংখ্য উদ্দীপক আমাদের ইন্দ্রিয়ে আঘাত হানছে। কিন্তু আমাদের মনােযােগের ক্ষেত্র সীমিত বলে আমরা একই সময়ে মাত্র একটি বিষয়ের প্রতিই মনােযােগী হতে পারি।

৩.মনোযােগের ক্ষেত্রে মানসিক তৎপরতা বিদ্যমান:

মনােযােগ বলতে বস্তু বা বিষয়ের সঙ্গে মনের উপযােজন বােঝায়।

৪.মনোযােগ অস্থির ও সঞ্চরণশীল:

মনােযােগ বস্তু থেকে বস্তুতে ঘুরে বেড়ায়। একই জিনিসের প্রতি আমরা অনেকক্ষণ একই হারে মনােযােগ দিতে পারি না, আবার একই বিষয়ের প্রতি আমাদের মনােযােগ অনেকক্ষণ ধরে রাখতে পারি না। যেমন- যদি একটি ঘড়ি কানের কাছে ধরা যায় আমরা ঘড়িটির টিক্ টিক্ শব্দ শুনি এবং মনে হয় শব্দ একবার তীব্র হচ্ছে, একবার ক্ষীণ হচ্ছে। আসলে আমাদের মনােযােগের অস্থিরতা ও সঞ্চরণশীলতাই এর কারণ।

আরও দেখুনঃ শিশুর দৈহিক বিকাশ কি? শিশুর দৈহিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যসমূহ

৫.মনোযােগ একটি ধারাবাহিক ও একীভূত প্রক্রিয়া:

কতকগুলি বর্ণ বা সংখ্যার প্রতি একসঙ্গে মনােযােগী হলে বিষয়গুলি ধারাবাহিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের দৃষ্টিগােচর হয়।

৬.মনোযােগের ফলে প্রত্যক্ষণে স্পষ্টতা আসে:

মনোেযােগ জ্ঞাতব্য বিষয়ের অস্পষ্টতা দূর করে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে তােলে। যেমন- রেডিওতে একটি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শুনছি, আবার অন্যের সঙ্গে গল্পও করছি। সেই অনুষ্ঠানটির বক্তব্য তখনই আমার কাছে স্পষ্টতর হবে, যখন আমি গল্প করা বাদ দিয়ে শুধু ঐ অনুষ্ঠানটির প্রতি মনােযােগী হবাে।

৭.মনোযােগ হলাে অনুসন্ধানী:

মনােযােগ নিত্য নতুন বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে। সাধারণতঃ বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব না থাকলে বস্তুটি মনােযােগ আকর্ষণ করে না।

৮.মনােযােগ সঞ্চালনমূলক পরিবর্তনের সাথে জড়িত:

মনােযােগ দেয়ার সময় নানারকম অঙ্গসঞ্চালনমূলক পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন- গালে হাত দিয়ে শােনার চেষ্টা করা বা মাথা এগিয়ে দিয়ে শােনার চেষ্টা করা। আবার শােয়া থেকে উঠে বসে শােনার চেষ্টা করা।

৯.মনােযােগ ইন্দ্রিয়ের জাগরণের সাথে সম্পর্কিত:

বিশেষ বিশেষ উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে আমাদের বিশেষ বিশেষ ইন্দ্রিয় মনােযােগ দেয়ার সময় জাগ্রত হয়, সতর্ক হয় এবং তার মাঝে পরিবর্তন আসে। যেমন- কোন কিছু দেখতে চোখ, কোন কিছু শুনতে কান এবং কোন কিছুর স্বাদ অনুভব করতে জিহবা ইত্যাদির পেশিগত পরিবর্তন ঘটে।

১০.মনােযােগের সাথে স্নায়ুঘটিত পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে:

আমরা যখন মনােযােগ দেই, তখন আমাদের উল্লেখযােগ্য স্নায়বিক পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে স্নায়বিক পরিবর্তন সংঘটিত হয় ।

১১.মনােযােগের মধ্যে এক ধরনের প্রস্তুতির ভাব থাকে:

কোন বিষয়ের প্রতি মনােযােগ দেয়ার জন্য আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রস্তুতি সৃষ্টি হয়। যার জন্য বাঁশীর শব্দ শােনা মাত্রই খেলােয়াড় খেলা শুরু করে দেয়।

১২.মনােযােগ হলাে বিশ্লেষণাত্মক ও সংশ্লেষণাত্মক মানসিক প্রক্রিয়া:

আমরা কখনাে কোন বিষয়ের প্রতি সামগ্রিকভাবে, আবার কখনাে আংশিকভাবে মনােযােগী হই। যেমন- কোন একটি গাছের দিকে মনােযােগ দিতে গিয়ে গাছের বিভিন্ন অংশ, তার কাণ্ড, তার শাখা-প্রশাখা, ফল-ফুল প্রভৃতি বিভিন্ন অংশের প্রতি মনােযােগী হতে পারি। আবার এই বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে গাছের যে সামগ্রিক রূপ ফুটে উঠেছে তার প্রতি মনােযােগী হতে পারি।

১৩.স্মৃতি শক্তি বর্ধনে মনােযােগ অপরিহার্য:

মনােযােগ কোন কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার পূর্বশর্ত। কোন কিছু শেখার সময় যদি একাধিক ইন্দ্রিয় আমরা ব্যবহার করি তাহলে মনােযােগ দৃঢ় হয়। ফলে বিষয়টি স্পষ্টভাবে অনেক দিন স্মৃতিতে রাখা সম্ভব হয়।

শেয়ার করুন

Similar Posts

7 Comments

  1. Mijanur Rahman Polash says:

    get update information

  2. Mijanur Rahman Polash says:

    get update information

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *