অনগ্রসর শিক্ষার্থী কারা, অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য
অনগ্রসর শিক্ষার্থী কারা, অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য
অনগ্রসর শিক্ষার্থী:
যে সব শিক্ষার্থী তাদের সহপাঠীদের চেয়ে বুদ্ধিমত্তা এবং লেখাপড়ায় আগে থেকেই পশ্চাৎপদ হয়ে আছে, তাদেরকেই অনগ্রসর শিক্ষার্থী বলে। অর্থাৎ, যে সব শিক্ষার্থীর শ্রেণী উপযােগী গড় বয়স কমপক্ষে এক বছরের বেশি, কিন্তু শিক্ষায় বা বুদ্ধিমত্তায় কম কৃতিত্ত্ব অর্জন করে, তাদেরকেই অনগ্রসর শিক্ষার্থী হিসেবে অভিহিত করা হয়। অনগ্রসর শিক্ষার্থীরা সাধারণত এক প্রচেষ্টায় শ্রেণী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। তারা উপযুক্ত চেষ্টা সত্বেও অকৃতকার্য হয়ে একই ক্লাসে পড়ে থাকে।
আরও দেখুনঃ শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত
এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দু’এক বছর চেষ্টা করার পর হতাশ হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। এই অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের কখনােই বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে একত্রে বিবেচনা করা ঠিক নয়। তাদের জন্য পাঠের আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত । কারণ তাদের সমস্যা গুলাের সময়োচিত ব্যবস্থা নিতে না পারলে তাদের শিক্ষারজীবন সহ সমস্ত জীবনটাই ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে।
অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যাবলি:
অনগ্রসরতা নানা কারনে হতে পারে। আর বিভিন্ন কারনে অনগ্রসরতা হয় বলে, অনগ্রসর শিশুদের সকলের মধ্যে একই রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। তবে অনগ্রসর শিশুদের মধ্যে যেসব সাধারণ বৈশিষ্ট দেখা যায় সেগুলি হলাে-
১.অনগ্রসর শিশুদের প্রধান বৈশিষ্ট্য যা দেখে আমরা তাদেরকে চিনতে পারি, তা হলাে তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা। এই শিশুদের শিক্ষামূলক যােগ্যতা শ্রেনীর অন্যান্য শিশুদের তুলনায় কম হয়। শিক্ষক শিক্ষামূলক অভীক্ষার ফলাফল থেমে কারা অনগ্রসর তা নির্ধারণ করতে পারেন।
২.অনগ্রসর শিশুদের অনেক সময়ে বৌদ্ধিক ক্রিয়া সম্পাদনের গতি শ্লথ দেখা যায়। তারা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেরি করে। এদের স্মৃতিশক্তি অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ হয়।
৩.অনগ্রসর শিশুরা শ্রেণীতে অন্যানাদের সঙ্গে সহজভাবে মিলেমিশে থাকতে পারে না অর্থাৎ তাদের অভিযােজনে সমস্যা থাকে।
৪.এই শিশুদের প্রক্ষোভমূলক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। সহপাঠী ও শিক্ষকের প্রতি অনগ্রসর শিশুরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়া করে। তাদের এরুপ প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়ার পেছনে কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে না।
৫.বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পাঠাবিষয়ের প্রতি অনগ্রসর শিশুদের অনাগ্রহ দেখা যায়। বৌদ্ধিক কাজে উৎসাহের অভাব লক্ষ্য করে আমরা অনগ্রসর শিশু কে, তা নির্ধারণ করতে পারি।
৬.অনগ্রসর শিশুদের সামাজিক এবং বিশেষভাবে পারিবারিক অভিযােজনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা লক্ষ করা যায়।
৭.অনগ্রসর শিশুরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধীর শিখন ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। কোন কিছু শিখতে এরা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় নেয়।
৮.ব্যক্তিগত অসুবিধা প্রকাশ করার ব্যাপারে অন্যের সাহায্য গ্রহণ করতে অনেক সময় এরা অনীহা প্রকাশ করে। এদের মধ্যে অনেকে লাজুক প্রকৃতির হয়।
আরও দেখুনঃ উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়
শিক্ষামূলক অনগ্রসরতা নানা কারণে দেখা দিতে পারে। আমরা জানি যে, ক্ষীণবুদ্ধিমত্তার জন্যও অনগ্রসরতা দেখা দিতে পারে। সেজন্য যখনই কোন অনগ্রসরতার ক্ষেত্র পাওয়া যাবে, তখন দেখতে হবে তার মুলে ক্ষীণবুদ্ধিতা আছে কিনা। ক্ষীণবুদ্ধিতা থাকলে ঐ শিক্ষার্থীর শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র বিশেষধর্মী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু ক্ষীণবুদ্ধিতা ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে অনগ্রসরতা দেখা দেয় তবে তা দুর করার জন্য যথােচিত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।