একজন ছাত্রের অনগ্রসর হওয়ার কারণ
একজন ছাত্রের অনগ্রসর হওয়ার কারণ
শিক্ষামূলক অনগ্রসরতা নানা কারণে দেখা দিতে পারে। আমরা জানি যে ক্ষীণবুদ্ধিমত্তার জন্যও অনগ্রসরতা দেখা দিতে পারে। সেজন্য যখনই কোন অনগ্রসরতার ক্ষেত্র পাওয়া যাবে, তখন দেখতে হবে তার মূলে ক্ষীণবুদ্ধিতা আছে কিনা।
ক্ষীণবুদ্ধিতা থাকলে ঐ শিক্ষার্থীর শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র বিশেষধর্মী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।কিন্তু ক্ষীণবুদ্ধিতা ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে অনগ্রসরতা দেখা নেয তবে তা দুর করার জন্য যথােচিত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।
আরও দেখুনঃ একজন ছাত্রের অনগ্রসরতা দূর করার উপায়সমূহ
অনগ্রসরতার কারণগুলােকে দুই ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যেতে পারে। যেমন:
ক. সর্বাত্মক অনগ্রসরতার কারণাবলি ও
খ. বিষয়গত অনগ্রসরতার কারণাবলি।
ক.সর্বাত্মক অনগ্রসরতার কারণাবলি:
যখন শিক্ষার্থী সব বিষয়েই পিছিয়ে যেতে থাকে, তখন তাকে বলে সর্বাত্মক অনাগ্রসরতা। এর পেছনে যে সব কারন কাজ করে, সেগুলো হল:
১.দুর্বল স্বাস্থ্য: দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য শিশু অনেক সময় লেখাপড়ায় অনগ্রসর হতে পারে, স্বাস্থ্য দূর্বল হলে শিশু প্রয়ােজন মতে পর্যাপ্ত পরিশ্রম করতে পারে না। এজন্য নিজের অনিচ্ছা সত্তেও লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে।
২.ইন্দ্রিয় জনিত অসুস্থতা: অনেক সময় চোখের বা কানের অসুখের জন্য শিশু ক্লাসে অনগ্রসর হয়ে পড়ে। চোখের সমস্যার কারণে শিশু বোর্ডের লেখা ভালভাবে দেখতে পায় না বা কানে কম শুনলে শিক্ষকের পড়া ভাল করে শুনতে পায় না। ফলে শ্রেনীর অগ্রগতির সাথে সে তাল মেলাতে পারে না।
৩.প্রক্ষোতমূলক প্রতিরােধ: প্রক্ষোতমূলক প্রতিরােধ অনগ্রসরতার একটি বড় কারণ। কোন বিশেষ ঘটনা, আচরণ, ব্যক্তি বা পরিবেশের জন্য শিশুর মধ্যে প্রক্ষোভমুলক প্রতিরােধ দেখা দিতে পারে। এর ফলে তার পড়াশােনা স্বাভাবিক পথে এগোয় না এবং সহজ ও প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না।
৪.দীর্ঘস্থায়ী রোগ: অনেক সময় কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্যও শিশুর মধ্যে অনগ্রসরতা দেখা দিতে পারে। বহদিন কোন রােগে ভুগলে লেখাপড়া ঠিকমতাে হয়ে ওঠে না এবং এর ফলে শিশু অন্য সকলের চেয়ে অনগ্রসর হয়ে পড়ে।
৫.দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি: কোন বিশেষ কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে শিশু, শ্রেনীর পড়ায় অন্য সকলের চেয়ে অনগ্রসর হয়ে পড়ে।
৬.অনুপযােগী পাঠ্যক্রম: পাঠ্যক্রম যদি শিশুর অনুপযােগী হয় এবং শিশুর চাহিদা মেটাতে না পারে, তবে সেটি শিক্ষার্থীর কাছে বিরক্তিকর ও কষ্টকর হয় এবং অনগ্রসরতা দেখা যায়।
৭.ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতি: শিক্ষকের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বিষয়বস্তু ঠিকমতো হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না, ফলশ্রুতিতে তারা পিছিয়ে পড়ে।
৮.প্রতিকূল গৃহ পরিবেশ: প্রতিকূল গৃহ পরিবেশ অনগ্রসতার একটি বড় কারন। মা-বাবা, ভাইবোন, প্রতিবেশী এদর যদি শিক্ষার প্রতি অনুকূল মনোভাব না থাকে তাহলে শিশু লেখাপড়ায় পিছিয়ে যায়।
খ.বিষয়মূলক অনগ্রসরতার কারণাবলি:
যখন কোন বিশেষ একটি পাঠ্যবিষয়ে শিশু পশ্চাদপদ হয়ে পড়ে, তখন সেটিকে বিষয়মূলক অনগ্রসরতা বলা হয়। বিষয়মূলক অনগ্রসরতা কতগুলো বিশেষধর্মী কারনের জন্য হয়।
আরও দেখুনঃ অনগ্রসরতা দূরীকরনে একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব
১.বিশেষ পাঠ্যবিষয়ের প্রতি প্রতিকূল মনোভাব: পিতামাতা ও শিক্ষকের মনোভাব, পরিবেশের প্রভাব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি ব্যাপারগুলো কোন বিশেষ পাঠ্যবিষয়ের প্রতি শিক্ষার মনোভাবকে প্রতিকূল করে তুলতে পারে। ফলে ঐ বিয়টি সম্পর্কে শিশুর প্রক্ষোভমূলক বিরূপতা সৃষ্টি হয় এবং ঐ বিষয়ে শিশু ক্রমশ অনগ্রসর হয়ে ওঠে।
২.ত্রুটিপূর্ণ ও অমনোবৈজ্ঞানিক শিখন পদ্ধতি: ক্রটিপূর্ণ ও অমানােবৈজ্ঞানিক শিখন পদ্ধতি বিষয়মূলক অনগ্রসরতার একটি বড় কারণ। আমাদের দেশে ইংরেজি ও গণিত বহু ছেলেমেয়ে অনগ্রসর হবার একটি বড় কারন হলাে এ বিষয় দুটিতে অমনোবৈজ্ঞানিক শিখন পদ্ধতি অনুসৃত হয়।
৩.শিক্ষকের অদক্ষতা: কোন বিশেষ বিষয়ের শিক্ষক যদি অনুপযোগী ও অদক্ষ হন তাহলে শিক্ষার্থীরা ঐ বিষয়টির প্রতি প্রতিকূল ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে ঐ বিষয়টিতে অনগ্রসরতা দেখা দেয়।
৪.শ্রেণীতে অনুপস্থিতি: বিশেষ কোন বিষয়ের ক্লাসে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার ফলে ঐ বিষয়ে শিক্ষার্থী অনগ্রসর হয়ে উঠতে পারে।