কাঁঠাল এর উপকারীতা

কাঁঠাল এর উপকারীতা

কাঁঠাল এর উপকারীতা

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল, এর ইংরেজী নাম হচ্ছে (Jackfruit)। বাংলাদেশের সব স্থানেই কম- বেশি কাঁঠাল পাওয়া যায়।

বসন্ত ও গ্রীস্মের প্রথমে কাঁচা অবস্থায় এবং গ্রীস্ম ও বর্ষায় পাকা অবস্থায় পাওয়া যায়।

এ ফলটি আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে। এর পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক।

কাঁঠালের ৪-৫ কোয়া থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়। এর হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ সমদ্ধ।

২-৩ কোয়া কাঁঠাল আমাদের এক দিনের ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা পূরণ করে।

সেজন্য কাঁঠাল অপুষ্টিজনিত সমস্যা রাতকানা এবং রাতকানা থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য খুবই উপযোগী ফল।

শিশু, কিশোর, কিশোরী এবং পূর্ণ বয়সী নারী- পুরুষ সব শ্রেণীর জন্যই কাঁঠাল খুবই উপকারী ফল।গর্ভবতী এবং যে মা বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য কাঁঠাল দরকারি ফল।

শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব দেখা দিলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়।

শরীরের লাভণ্যতা হারিয়ে ফেলে এজন্য কাঁঠাল প্রতিরোধ করতে পারে। এ ছাড়া কাঁঠালের মধ্যে ভিটামিন ‘সি’ এবং কিছুটা ‘বি’ আছে।

পাকা কাঁঠাল যেমন উপকার রয়েছে, তেমনি কাঁচা কাঁঠালও কম উপকারী নয়।

কাঁচা কাঁঠাল আমিষ ও ভিটামিনসমদ্ধ তরকরি। পাকা কাঁঠালের বিচি বাদামের মতো ভেজে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়।

১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে ৬.৬ গ্রাম আমিষ আছে ও ২৫.৮ গ্রাম শর্করা আছে। সবার জন্যই আমিষসমদ্ধ কাঁঠালের বিচি উপকারী।

এজন্য কাঁঠাল গাছ বেশি লাগানো উচিত। সেই সঙ্গে কাঁঠাল ফলটি খেয়ে ভিটামিন ‘এ’- এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

কাঁঠাল এর উপকারীতা
চিত্র: কাঁঠালের কোয়া

কাঁঠাল এর ২০টি উপকারিতা:

১। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশংকা কম।

২। কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম।

যারা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চ রক্ত চাপের উপশম হয়।

৩। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে, যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

৪। কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন “সি” তৈরি হয় না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন “সি”।

৫। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম।

৬। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে।

এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

৭। টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী।

৮। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল।

৯। কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী উপশম করে। শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান নিষ্কাশিত হয় তা হাঁপানীর প্রকোম নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।

১০। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে কাঁঠালের শেকড়।

১১। কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১২। কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মত হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে।

১৩। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি-৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

১৪। কাঁঠালে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয় রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে।

১৫। ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়।

অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।

১৬। চিকিৎৎসা শাস্ত্র মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়।

১৭। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।

১৮। দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

১৯। এই ফল আঁশালো বিধায় কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে।

২০। কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • কোরবানির ভাগের নিয়ম কোরবানির নিয়ম কানুন

    কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ। কোরআন সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি। কুরবানীর শুরু হয়েছে হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম ও হযরত ইসমাইল আঃ সালামের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে। তারপর থেকেই কুরবানীর শুরু হয়। তবে কোরবানি নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক মতবাদ রয়েছে। কোরবানির ভাগের নিয়ম কোরবানির নিয়ম কানুন। কুরবানী সম্পর্কে আমরা জানলেও কুরবানির ভাগের নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। কুরবানীর…

    শেয়ার করুন
  • দেহে খাদ্য উপাদানের কাজ

    খাদ্য উপাদান ১. প্রোটিনের কাজ: প্রােটিন জীবিত প্রাণী, উদ্ভিদ ও অনুজীবের দেহের অপরিহার্য উপাদান। পিত্তরস ছাড়া মানব দেহের প্রতিটি কোষে এবং দেহতরলে প্রােটিন প্রতিনিয়ত গঠন ও ক্ষয়পূরণের কাজ করে। শারীরিক পরিশ্রমের জন্য প্রােটিন দেহে তাপও উৎপন্ন করে। রক্তরসের রােগ প্রতিরােধকারী এন্টিবডি প্রােটিন দিয়ে তৈরি। প্রোটিনের উৎস: চিনাবাদাম, অন্যান্য বাদাম, সয়াবিন, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছােলার…

    শেয়ার করুন
  • সয়াবিন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

    সয়াবিন তেল হল উদ্ভিজ্জ তেল, যা সয়াবিন বীজ থেকে উৎপন্ন হয়। এই তেল ব্যবহার করা হয় রান্নার কাজে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন খাদ্য। খাওয়ারকে সুস্বাদু করতে খাবারে ভোজ্য তেল ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে প্রায় সকল ধরনের রান্নায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত সয়াবিন তেল ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সয়াবিন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা…

    শেয়ার করুন
  • তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

    তেঁতুল এমন একটি ফল যার নাম শুনলেই প্রতিটি মানুষের জিবে জল চলে আসে। ছেলে অথবা মেয়ে যেই হোক না কেনো তেঁতুলের নাম শুনলেই জিবে পানি আসবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। তেঁতুলের বৈজ্ঞানিক নাম তেঁতুল একটি টক স্বাদের ফল এবং এটি অনেকের কাছে প্রিয়। Tamarindus…

    শেয়ার করুন
  • ছোলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন

    ছোলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ছোলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন: ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ছোলা বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে অতি পরিচিত একটি উপাদান। নিম্নে কাঁচা ছোলা এবং রান্না করা ছোলার উপকারীতা আলোচনা করা হল: হজমে সহায়ক: হজমক্রিয়া সহজ করার জন্য আবশ্যক একটি উপাদান হল ভোজ্য আঁশ। আর…

    শেয়ার করুন