বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় কত ডলার

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?

কোন দেশের মোট অর্থবছরের আয় দিয়ে ওই দেশের মোট জনসংখ্যা কে ভাগ দিয়ে জনপ্রতি যত টাকা পাওয়া যায় সেটাই মাথাপিছু আয়। প্রতিটা দেশেরই মাথাপিছু আয় এবং  মাথাপিছু ঋণ রয়েছে। মাথাপিছু আয় হিসাব করা হয় প্রতি বছরে। চলুন জেনে নেই, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?  বাংলাদেশের একটি উন্নয়নশীল দেশ। যা কিছুদিন আগেও নিম্ন আয়ের দেশ ছিল।

দিন দিন বাংলাদেশের আয়ের উৎস বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে আধুনিকতা। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পন্ন। চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ অর্থনীতি কাকে বলে? অর্থনীতির সংজ্ঞা এবং অর্থনীতি শব্দের অর্থ কি

মাথাপিছু আয় কি?

মাথাপিছু আয় বলতে বোঝানো হয় প্রতিটা মানুষের আয়। প্রতিদিন আমরা যত টাকা আয়  করা হয় সেটা আমাদের দৈনিক আয়। প্রতি মাসে যত টাকা আয়  করা হয় সেটা মাসিক আয়। ঠিক একইভাবে প্রতি বছর যত টাকা আয় করা হয় সেটা  বাৎসরিক আয়। তবে প্রত্যেকটা মানুষের মাথাপিছু আয় ভিন্ন।

একটি দেশে যতগুলো মানুষ বসবাস করে সবার আয়ের মোট পরিমাণে সেই দেশের মোট আয়। এই আয়ের হিসাব করা হয় প্রতি বছরে।  প্রতি বছর আয় কম বেশি হয়ে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে আয়ের  কম বেশি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের আয়ের উৎস:

প্রতিটা পরিবারের যেরকম আয়ের উৎস রয়েছে। ঠিক একই ভাবে প্রতিটা দেশেরও আয়ের উৎস রয়েছে। কিন্তু এই আয় দেশ নিজে করে না। এই আয়ের হিসাব করা হয় কোন দেশের মোট যতগুলো লোক বসবাস করে তাদের সকলের আয়ের সমষ্টি। কিন্তু এক্ষেত্রে সকলের আয় সমান থাকে না।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষি। এছাড়াও আরো অনেক খাত থেকে বাংলাদেশের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের আয়ের বড় উৎস হলো:

  1.  কৃষি
  2.  চা
  3.  চিংড়ি
  4.  পোশাক শিল্প
  5.  রেমিটেন্স

কৃষি:

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের সবচেয়ে বেশি আয় আসে  কৃষিখাত থেকে। আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন কৃষির ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। বিদেশি রপ্তানি করে যে টাকা পাওয়া যায় সেটাই বাংলাদেশের আয়।

বর্তমান সময়ে পাঠ, গম, ধান, তোলা ইত্যাদি অন্য দেশের রপ্তানি হচ্ছে। যা থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে কৃষি বাংলাদেশের একটি বড় আয়ের উৎস।

চা:

চা বাংলাদেশের একটি বড় আয় এর উৎস।  বাংলাদেশের চা উৎপাদন হয় সিলেট বিভাগে। সিলেটের আবহাওয়া উৎপাদনের চা জন্য অনেক ভালো। কারণ, চা উৎপাদন করতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন। সিলেট এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়।

যার ফলে চায়ের উৎপাদন ভালো হয়। এবং গুণগতমান অনেক ভালো হয়। বর্তমানে চা বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক  অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে। যা বাংলাদেশের আয়ের একটি বড় অংশ।

চিংড়ি:

বর্তমান সময়ে চিংড়ি মাছের সাদা সোনা বলা হয়। কারণ, প্রতি কেজি চিংড়ি মাছের দাম  ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ি চাষ হচ্ছে। যা বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কয়েক বছর থেকে এই আয়ের উৎস বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের  মোট রাষ্ট্রীয় চিংড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই আয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

পোশাক শিল্প:

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব কম। এসব কারণে বাংলাদেশে কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। এর শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে পোশাক শিল্প মালিকেরা। যাতে করে দেশের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের  বৃহত্তর জনগোষ্ঠী  পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।

যাতে করে পোশাক শিল্প মালিকেরা অনেক কম সময় প্রচুর পরিমাণ মোশার উৎপাদন করতে পারছে। বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস পোশাক শিল্প।

রেমিটেন্স:

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস  রেমিটেন্স। বাংলাদেশর অনেক লোক বর্তমানে বিদেশে চাকরি করে। তাদের টাকা দেশে পাঠায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। তবে এই আয়ের উৎস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও দরিদ্র দেশ ছিল। মাথাপিছু আয় এর তুলনায় ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু আধুনিকতার কারণে এই সমস্যাটি দূর হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের সারিতে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে এই উন্নতি বহাল থাকবে।

আরও পড়ুনঃ আমাদের জিডিপি ছিল পুরো ইউরোপের চেয়েও বেশি

মাথাপিছু আয় বের করার নিয়ম:

মাথাপিছু আয় বলতে বোঝানো হয় প্রতিজন মানুষের আয়। ধরুন আপনার পরিবারে 10 জন মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আয় করে। যদি ওই পরিবারের মাথাপিছু আয় বের করতে বলা হয় তাহলে তিনজনের টাকা ১০ জনের মধ্যে ভাগ করতে হবে। তারপর জনপ্রতি যত টাকা করে পাবে সেটাই মাথাপিছু হয়। ঠিক একইভাবে প্রতিটি দেশের মাথাপিছু আয় বের করা হয়।

ধরুন বাংলাদেশের মোট আয় ১০০০০০ কোন টাকা। এবং বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১০০০ জন। তাহলে তাদের মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয় বের করার নিয়ম হচ্ছে, মোট জনসংখ্যা দিয়ে মোট আয় ভাগ করা।

মাথাপিছু আয় (১০০০০০/১০০০) = ১০০ টাকা। এই ১০০ টাকায় মাথাপিছু আয়। ঠিক একইভাবে বিশ্বাস সব দেশের মাথাপিছু আয় বের করা সম্ভব।

মাথাপিছু ঋণ কি:

প্রতিটা দেশের মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মাথাপিছু ঋণ রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে দেশে যখন বড় বড় প্রজেক্ট এর কাজ করা হয় সেই সময় দেশের অর্থের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। ঠিক সেই সময় বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। বিশ্ব ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ঋণ দিয়ে থাকে। প্রতিটা দেশের কম বেশি  ঋণ থাকে।

যখন কোন  দেশের আয়ের তুলনায় ঋণ বেশি হয় তখন মাথাপিছু ঋণ বৃদ্ধি পায়। মাথাপিছু ঋণ সবসময় সমান থাকে না। মাথাপিছু ঋণ সকলে সামনে প্রকাশ করা হয় না। এতে করে দেশের সরকারের চাপের মুখে পড়তে হয়।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এর বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দিন দিন বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান এর উন্নতি হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৩৩ ডলার বেশি।

এই থেকে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মাথাপিছু আয় দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ হচ্ছে সকল কিছুতে প্রযুক্তির দেখা মিলছে। যার কারণে খুব কম সময় সকল ধরনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় । সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

শেষ কথা: বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?

প্রতিটা দেশের মাথাপিছু আয় হিজাব করা হয় বছরের শেষে। মাত্র কিছু আয়ের হিসাব থেকেই দেশের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। তখন দেশের মাথাপিছু আয় কমে যায় তখন মানুষের মধ্যে  অভাব দেখা যায়। যার ফলে দেশের মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা যায়।

এসব সমস্যা হলে দেশ পরিচালনা করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়। তবে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে বর্তমান সময়ে। কারণ কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার ফলের  কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পন্ন। এ কারণে মাথাপিছু আয় কমে গেল মানুষের খাদ্য সংকট দেখা যাবে না।

তবে দেশের উন্নতি জন্য মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts