গরুর খামারের লাভ কেমন
গরুর খামারের লাভ কেমন: আমাদের অনেকের মধ্যে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সঠিক তথ্য না জানার কারণে ব্যবসা শুরু করতে পারছে না। বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে খামার করা। বিশেষ করে গরুর খামার করা। বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই গরুর খামার করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
গরুর খামারের লাভ কেমন অনেকের ধারণা নেই। যার কারণে গরুর খামার শুরু করতে পারছে না। বর্তমানে গরু পালন করে বছরে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। কারণ দিন দিন গরুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে, গরুর খামারের লাভ কেমন তুলে ধরা হলো।
গরুর খামারের লাভ কেমন?
প্রতিটি খামারে লাভ রয়েছে। তবে লাভের পরিমাণ নির্ধারণ হয়ে থাকে খামারের আকারের উপর ভিত্তি করে। সাধারণত একটি গরু মোটা তাজা করে বিক্রয় করতে সময় লাগে ৬ মাস। যদি একটি গরু ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়। তারপর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খাওয়াতে হয়।
তারপর সেই গরু বিক্রয় হয় সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে ২.৫ লাখ টাকার মত দামে। তবে এর জন্য সঠিক জাত নির্ণয় করতে হবে। এবং সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। যদি একটা গরুতে এই পরিমাণ লাভ আসে তাহলে দশটা গরু থাকলে কত টাকা লাভ আসবে। এ থেকে বোঝা যায় গরুর খামারের অনেক লাভ।
সবচেয়ে লাভজনক গরু কোনটি?
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক জাতের গরু রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিদেশী জাতের গরু রয়েছে যেগুলো খুব সহজেই বড় হয়। আর কিছু গরু রয়েছে যেগুলো একটি নির্দিষ্ট আকারে থাকে। এসব গরু পালন করে তেমন লাভ আসে না। এজন্য গরুর খামারে উন্নত জাতের গরু পালন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার নিয়ম? খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও গরুর খামার দুই ধরনের করা যায়। গরু মোটা তাজা করুন এবং গাভী পালন। বর্তমান সময়ে বর্তমান সময়ে গরু মোটাতাজাকরণ খামার বেশি রয়েছে। তবে সবচেয়ে লাভজনক হচ্ছে গাভী পালন। গাভী পালন করলে খামার শুরুর পর আর তেমন ইনভেস্ট করতে হয় না।
গরু পালন করা সবচেয়ে সহজ কোনটি?
অনেকেই মনে করে। গরু পালন করা খুব সহজ। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ কারণ গরুর সঠিক পরিচয় না করলে করুক পালন করে লাভ করা অসম্ভব। গরু পালন করতে হলে সব সময় গরুর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সঠিক পরিমাণ খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলেই খামার করে লাভ করা যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে দুই ধরনের খামার গড়ে উঠেছে। গরু মোটাতাজা করণ এবং গাভী পালন। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে গরু মোটাতাজাকরণ। কারণ গাভী পালন করলে দুগ্ধ দহন করতে হয়। কিন্তু গরু মোটাতাজা করনে এই কাজ করতে হয় না।
শুধু গরুকে খাওয়ানো এবং গোসল করালেই হয়। এ কারণে বোঝা যায় গরু মোটাতাজাকরণ খামার অনেক সহজ। প্রথম অবস্থায় খামারকরলে গরু মোটাতাজা করুন করা উচিত।
কোন জাতের গরু বেশি বড় হয়:
বর্তমান সময়ে মানুষ গরুর খামারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কারণ গরু পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। তবে গরুর জাত সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গরুর খামার করে লাভ করা অসম্ভব। বর্তমানে অনেক জাতের গরু দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ ডুমুর ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সবচেয়ে বড় জাতের গরু হচ্ছে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহিওয়াল, সিন্ধী, সংকর, অস্ট্রেলিয়া গরু। যেসব গরু অনেক বড় হয়। এবং এসব জাতের গাভীর অনেক দূর দিয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিদেশী অনেক জাতের গরু বাংলাদেশ আনা হচ্ছে।
কোন গরু পালনে লাভ বেশি:
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার গড়ে উঠেছে। কারণ ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে দেশের চাহিদা পূরণ করছে দেশের খামারগুলো। এই কারণে গরুর দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমান সময়ে মানুষ দুই ধরনের খাবার করছে। যথা: গরু মোটাতাজাকরণ এবং গাভী পালন।
গরু মোটাতাজাকরণ:
গরু মোটাতাজাকরণ খামার করা অনেক সহজ। কারণ গরু মোটাতাজা করুন খামারে গরুকে সঠিকভাবে খাওয়াতে হয়। এবং গরুকে গোসল করাতে হয়। এবং কোন ধরনের রোগ হলে চিকিৎসা করতে হয়। গরু মোটাতাজাকরণ খামারে গরুকে মূল টাকা থেকে খাওয়াতে হয়।
গাভী পালন:
গাভী পালন অনেক লাভজনক ব্যবসা। তবে গাভী পালন অনেক কঠিন কাজ। তবে গাভী পালন করলে গাভীর টাকা দিয়ে খামার পরিচালনা করা যায়। কারণ প্রতিটি গরু থেকে দুধ পাওয়া যায়। সেই দুধ বাজারে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে গরুর খাবার কেনা যায়।
এছাড়াও প্রতিবছর একটি করে বাচ্চা পাওয়া যায়। যেগুলো পুরোপুরি লাভ। এই কারণে বোঝা যায় গরু মোটাতাজা করণের থেকে গাভী পালন বেশি লাভের। তবে গাভী পালন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কারণ দুধ দহন করতে হয়। এবং বাচ্চার সঠিক পরিচর্যা করতে হয়।
গরুর জাত চেনার উপায়:
গরুর খামার করার আগে গরু সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কারণ সঠিক গরু বাছাই করতে না পারলে খামার করে লাভ করা অসম্ভব। কারণ কিছু গরু তেমন বড় হয় না এবং দুধও দেয় না। এ কারণে গরুর জাত চেনা অত্যন্ত জরুরী। আপনি ইচ্ছা করলে গরুর জাত খুব সহজে চিনতে পারবে না।
গরুর জাত হিসেবে গরুর গঠন আলাদা হয়ে থাকে। কোন গরুর গায়ের রং ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার কোন গরুর জিহ্বা সাদা হয়ে থাকে। যেগুলো গরুর জিহ্বা সেগুলো গরু অনেক বড় হয় এবং দুধ বেশি হয়। এছাড়াও আরো অনেক ভাবে গরু চেনা যায়। গরুর জাত হিসেবে তাদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে।
কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়:
বর্তমান সময়ে মানুষ গাভী পালনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কারণ গাভী পালন সবচেয়ে লাভজনক খামার। তবে গাভী পালনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গরুর জাত নির্ধারণ করা। কারণ সব গরু দুধ বেশি দেয় না। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি দুধ হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের গরু।
গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে?
গরু পালন করা এবং গরুর খামার করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতেই গরু রয়েছে। তবে সেগুলোকে খামার বলা যায় না। খাবার হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট জাতের গরু পালন করার মাধ্যম। এই কারণে গরুর খামার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন।
গরুর খামারের আকার অনুযায়ী কত টাকা লাগবে সেটা নির্ধারণ করা যায়। গরুর খামার করতে সর্বপ্রথম খামার তৈরি করতে হয়। সাধারণত গরুর খামার তৈরি করতে ২ তেকে ২.৫ লাখ টাকা লাগে। এই টাকার মধ্যে তাও ছোট আকারের খামার তৈরি হবে। এরপর গরু কিনতে হবে।
সাধারণত গরু পালন করতে গরু কিনতে হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দামের গরু। যদি আপনি পাঁচটি গুরু দিয়ে শুরু করেন তাহলে ৫ লাখ টাকা লাগবে। এবং গরুকে খাওয়ানোর জন্য টাকার প্রয়োজন। এই থেকে বোঝা যায় ছোট আকারের খামার করতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মত লাগবে।
গরুর খামার পরিকল্পনা:
গরুর খামার করার আগে গরুর খাবার পরিকল্পনা সঠিক হতে হবে। কারণ সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোনভাবে খামার করে টিকে থাকতে পারবেন না। কারণ খামার শুরু করলেই সাথে সাথে লাভ আসে না। কারণ প্রথম অবস্থায় অনেক খরচ হয়। এছাড়াও গরু রোগ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।
এসব সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে গরুর খামার শুরু করতে হবে। যদি মনে করেন এক বছরের মধ্যে ডবল লাভ করবেন তাহলে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। গরুর খাওয়ার করতে হলে অনেক ধৈর্য সহকারে টিকে থাকতে হবে। তাহলে গরুর খামার করে সফল হওয়া সম্ভব।
গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায়:
গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায় রয়েছে। তবে তার জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। সাধারণত গরুর খামার করে লাভ করতে হলে গরুর পরিচর্যা নিজে করতে হবে। কারণ গরুকে সঠিক সময় সঠিক খাবার না দিলে গরু মোটাতাজা হয় না। এছাড়াও গরুর অনেক সময় রোগ হয়।
সেগুলো নিজেকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ বর্তমানে অনেক ভাইরাস জনিত রোগ হচ্ছে গরুর। এসব ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাচ্ছে। এ কারণে গরুর খামার করলে নিজেকেই দেখাশোনা করতে হবে। এবং কাজ করার জন্য সাথে মানুষ রাখতে হবে। তাহলে খামার করে লাভ করা সম্ভব।
গরুর খাবার কি কি?
অতীতে মানুষ শুধুমাত্র গরুকে খড় এবং ঘাস খাওয়াতো। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে গরুর খাবারের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের খাবার খাওয়ানো হয় গুরুদের। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং জিংক খাওয়ানো হয়। গরুর খাবার কি কি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- ঘাস
- খড়
- ভুসি
- খোল
- ফিড
- ডাল
- গুড়
- ভাত
- আটা
এসব খাবার ছাড়াও আরো অনেক ধরনের খাবার খাওয়াচ্ছে বর্তমান সময়ে। কারণ যত কম সময়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায় তত লাভ।
জার্সি গাভী প্রতিদিন কতটুকু দুধ দেয়:
জার্সি গরু মূলত পালন করা হয় দুধের জন্য। একটি পরিপূর্ণ জার্সি জাতের গরু ২০ থেকে ৩০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। বর্তমানে আরো অনেক জাতের গরু রয়েছে সেগুলো অনেক দূর দিয়ে থাকে। বর্তমানে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু অনেক দুধ হচ্ছে। প্রায় ২০ থেকে ৩০ লিটারের মত।
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গরুর জাত কোনটি:
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গরুর জাত দেশি। বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ দেশে জাতের অনেক গরু পালন করে। কারণ দেশি জাতের গরু খাওয়ার কম খায় এবং প্রতিবছর বাচ্চা দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রচলিত গরুর জাত তুলে ধরা হলো:
- দেশি গরু
- জার্সি
- হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান
- আয়ারশায়ার
- শাহিওয়াল
- সিন্ধী
- সংকর
- মিল্কিং শর্টহর্ন
- ব্রাউন সুইস
- গারনেসি
- ব্যবসা
শেষ কথা: গরুর খামারের লাভ কেমন
বর্তমান অনেক মানুষ গরুর খামার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সকলে গরুর খামার করে টিকে থাকতে পারবে না। কারণ এর জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ধৈর্য ধরে কাজ করলে অবশ্যই লাভ করা যাবে।
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে গরুর খাবার। কারণ গরুর দাম কমা সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।