বারি সীম ৮ চাষাবাদ কৌশল
|

বারি সীম ৮ চাষাবাদ কৌশল

আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা কৃষি কাজ গুলোকে অনেক বেশি পছন্দ করি এবং কৃষিকাজের উপর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছি। তাই কৃষি কাজে আগ্রহী ভাই বোনদের জন্য আজকে আমরা বারি সীম চাষাবাদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো এই পোস্টের মাধ্যমে।

যেকোন বিষয়ে আপনাকে কাজ করতে হলে সেই বিষয় সম্পর্কে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে। তেমনি বারি সীম ৮ চাষাবাদ করার জন্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ফসলের নাম : সীম
জাতের নাম : বারি সীম ৮

বারি সীম ৮ এর বৈশিষ্ট্য:

  • বারি সীম ৮ একটি উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন জাত
  • এটি অন্যান্য চাষযোগ্য সীমের তুলনায় ২০-৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়।
  • সীম নরম, মাংসল ও আঁশ কম।
  • সীম সবুজ লম্বা, কিছুটা বাকানো।
  • বীজ আকারে বড়।
  • পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমন তুলনামূল্ক হারে কম।

আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চান যে এই বারি সীম ৮ চাষাবাদ করার জন্য উপযোগী এলাকা গুলো কোন গুলো? আমরা সকলেই জানি যে বাংলাদেশের মাটি অনেক উর্বর তাই আপনি চাইলে সারা দেশের ভেতরে যেকোন আবাদযোগ্য জায়গাতে এই বারি সীম চাষাবাদ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ শীতকালীন শাক-সবজির উপকারীতা

উপযোগী এলাকাঃ সারাদেশেই বারি সীম চাষ উপযোগী।

বপনের সময়ঃ বারি সীম সাধারণত চাষের উপযোগী সময় হচ্ছে আগষ্ট থেকে সেপ্টেমবর মাস।

মাড়াইয়ের সময়ঃ নভেমবর মাসের প্রথমেই সীম সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ গড় ফলন ২২.৫ টন/হেক্টর।

বারি সীম চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

আমরা অনেকেই রয়েছে যারা কৃষিকাজের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকার কারণে আমরা অনেকেই বেশি দূর আগাতে পারিনা। তাই আপনি যদি এই বারি সীম চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে যেসব সম্পর্কে জানতে হবে সেগুলো দেখে নেওয়া যাকঃ

  • বপনের সময়ঃ আগষ্ট- সেপ্টেমবর মাস
  • মাড়াইয়ের সময়ঃ নভেমবর মাসের প্রথমেই সীম সংগ্রহ করা যায়।
  • সার ব্যবস্থাপনাঃ গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ৩০ কেজি, টিএসপি ৯০ কেজি, এমওপি ৬০ কেজি, জিপসাম ৫ কেজি, বোরিক এসিড ৫ কেজি। শেষ চাষের সময় জমিতে সব গোবর, জিপসাম ও বোরিক এসিড সার ভাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। রোপণের পূর্বে মাদায় সব টিএসপি, ১৫ কেজি ইউরিয়া ও ৩০ কেজি এমওপি; রোপণের ৩০ দিন পর ১৫ কেজি ইউরিয়া ও ৩০ কেজি এমওপি উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা

যেকোন ফসল চাষাবাদ করতে গেলে আপনাকে প্রথমে সেই ফসলের রোগ বালাই সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। কিভাবে রোগবালাই দমন করবেন সেই সম্পর্কে জানতে হবে। তাই চলুন তাহলে এই পর্যায়ে আমরা জেনে নিবো বারি সীমের রোগবালাই ও দমনের ব্যবস্থা গুলো সম্পর্কে।

রোগবালাই: এনথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা।

দমন ব্যবস্থা:

  • রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যাভিষ্টিন/ নোইন বা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে।
  • খাওয়ার শিমে ছত্রাকনাশক না উত্তম।

পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা

আপনাদের বারি সীমের চাষাবাদ করার আগে এই ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। কেননা সঠিক সময়ে পোকামাকড় দমন করতে না পারলে আশা নুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা

তাই চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বারি সীমের পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা সম্পর্কে। যাতে করে কৃষকের কষ্ট বৃথা না যায় এবং চাহিদা অনুযায়ী ফলন পাওয়া যায়।

পোকামাকড়ঃ জাব পোকা, সীমের ফল ছিদ্রকারী পোকা, থ্রিপস পোকা।

বারি সীমের পোকামকড় দমন ব্যবস্থাঃ

জাব পোকাঃ

  • প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
  • নিম বীজের দ্রবন (১ কেজী পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমন অনেকাংশে কমানো যায়।
  • স্বল্পমেয়াদী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি: লি: হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সীমের ফল ছিদ্রকারী পোকা
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা ও ঝরা ফুল, ফল ইত্যাদি সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
  • আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে অমত্মঃবাহী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

থ্রিপস পোকা:

  • পাঁচ গ্রাম পরিমান গুড়া সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
  • ক্ষেতে সাদা রঙের ৩০ সে:মি: ৩০ সে:মি: আকারের বোর্ডে পাতলা করে গ্রীজ বা আঠা লাগিয়ে কাঠির সাহায্যে ৩ মিটার দুরে দুরে ‘‘আঠা’’ ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকা আকৃষ্ট করে মারা যায়।
  • আক্রমনের হার অত্যন্ত বেশী হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২মি: লি: পরিমান) স্প্রে করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা

সারের নাম সারের মোট পরিমাণ শেষ চাষের সময় প্রয়োগ রোপণের পূর্বে মাদায় প্রয়োগ রোপণের ৩০ দিন পর উপরি প্রয়োগ
ইউরিয়া ৩০কেজি ১৫কেজি ১৫কেজি
গোবর/কম্পোস্ট ১০০০০কেজি সব
টিএসপি ৯০কেজি সব
এমপি ৬০কেজি ৩০কেজি ৩০কেজি
জিপসাম ৫কেজি সব
বরিক এসিড ৫কেজি সব

শেষকথাঃ বারি সীম ৮ চাষাবাদ কৌশল

আমরা মোটামুটি বারি সীম ৮ চাষাবাদ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি আপনাদের জন্য। এছাড়াও যদি আপনাদের কাছে আরও কোন তথ্য সংযোজনের প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আপনার কমেন্টের রিপ্লাই করবে আমাদের টিমের পক্ষ থেকে। এছাড়াও আপনি চাইলে এই পোস্ট গুলো আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের এই সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে পারেন।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *