ডুমুর ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
| | |

ডুমুর ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ডুমুর এমন একটি ফল যা বলতে গেলে অযত্নের মধ্যেই বড় হয়ে থাকে। আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় ডুমুরের গাছ দেখা যায়। ডুমুর ফল খুবই উপকারী এবং সুস্থ রাখতে সহায়ক।

যদিও এ ফলটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না,তবে এই ফলটি কতটা উপকারী এ বিষয়ে হয়তো আমাদের ধারণা নেই। চলুন তাহলে আজ এ বিষয় নিয়ে জানা যাক ডুমুর ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি?

(১) ডুমুর ফল কি?

ডুমুর নামটি সচরাচর সবার কাছেই পরিচিত। কিন্তু সকলের কি জানা আছে ডুমুর ফল কি? নিশ্চয়ই তা সকলের জানা নেই। তাহলে জেনে নেই। ডুমুর ফল হল একটি উচ্চ গুণ সমৃদ্ধ ভেষজ উদ্ভিদ। ডুমুর ফলের ভেতরে অংশে ছোট ছোট বীজ থাকে এবং বাইরের আবরণটি অনেক পাতলা হয়ে থাকে।

এটি খুব নরম এবং মিষ্টি জাতীয় ফল। ডুমুর ফলটি কাঁচা, শুকনো অথবা পাকা প্রতিটি ধাপে খাবারের উপযোগী। ডুমুর ফল নামে পরিচিত হলেও এটি সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।

(২) ডুমুরের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম কি?

আমরা বাঙালি,আর ডুমুর ভাষাটি হল বাংলা। সাধারণত এ নামেই এই ফলটিকে আমরা চিনে থাকি। আপনারা কি জানেন এই ফলটির ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নামও রয়েছে?

আরও পড়ুনঃ লাল চিনির উপকারিতা ও অপকারিতা

আজ আমরা আপনাদের জানাবো ডুমুরের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম কি? ডুমুর ফলকে ইংরেজিতে বলা হয় দ্যা ফিগ । আর এ বৈজ্ঞানিক নাম হলো ফিকাস কারিকা।

(৩) ডুমুর গাছের বৈশিষ্ট্য

ডুমুর গাছ একটি উদ্ভিদ।এটি সর্বোচ্চ ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি অসংখ্য শাখাযুক্ত বৃক্ষ। যদিও আমরা জানি এটি একটি ফল তবে জৈবিকভাবে বর্ণনা করতে গেলে ফল নয়। এই উদ্ভিকটির নাম সাইকন। এটি মহিলা ও পুরুষ উভয় সমর্থন হিসেবে কাজ করে থাকে। আমরা এর পরিমিত অংশ এবং বীজ ভক্ষণ করে থাকি।

এটি সম্পূর্ণ ভোজ্য। ডুমুর গাছ উষ্ণ জলবায়ুর অঞ্চলে বেশিরভাগ জন্মে থাকে। প্রায় 900 প্রজাতির গাছ,লতাগুল্ম এবং গুল্ম যার মধ্যে বেশিরভাগ গুলোই ডুমুর নামে পরিচিত।

(৪) ডুমুর রান্না করার পদ্ধতি

ডুমুর যে কেবলমাত্র ফল হিসেবে খাওয়া যায় এমনটি নয়।ডুমুরকে সবজি হিসেবেও গ্রহণ করা হয় । ডুমুর রান্না করার পদ্ধতি অনেক রকম রয়েছে যেমন–

  • (১) ডুমুরের ভর্তা করে খাওয়া যায়
  • (২) ডুমুরের ভাজি রান্না করা হয়
  • (৩) চিংড়ি দিয়ে ডুমুরের ডালনা রান্না করা হয়
  • (৪) ডুমুরের বড়ার কালিয়া খাওয়া যায়
  • (৫) ডুমুর দিয়ে আলুর ডালনা তৈরি করা যায়
  • (৬) ডুমুরের কোপ্তা করা হয়

উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও আরো নানাভাবে ডুমুর রান্না করা যায়।

(৫) ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম

অনেকেই হয়তো বা ডুমুর ফল খেয়েছে আবার অনেকেই অজানা।তাই আজ আমরা জানবো ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

  • ডুমুর ফল কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া যায়
  • ডুমুর দ্বারা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তৈরি করা যায়
  • কাঁচা ডুমুর চিবিয়ে খাওয়া যায়
  • ডুমুরের সাথে মধু মিশ্রণ করে খাওয়া যায়
  • ডুমুরের প্রতিটি অংশই খাদ্য উপযোগী।
  • ডুমুর কেটে সালাত করে খাওয়া যায়

এক কথায় বলতে গেলে ডুমুর ফল খাওয়ার ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই। কারণ এটি এমন একটি কার্যকরী উদ্ভিদ যা সবজি,ফল এবং ঔষধি হিসেবে গ্রহণ করা যায় ।

(৬) ইসলামে ডুমুর ফল কে কি বলা হয়েছে?

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।আল্লাহ প্রেরিত প্রতিটি বস্তু নিয়ে আল কুরআন বর্ণনা দিয়ে থাকে। ঠিক তেমনি ভাবে ডুমুর ফল নিয়েও কুরআনে বর্ণিত রয়েছে।আমরা কি জানি ইসলামে ডুমুর ফল কে কি বলা হয়েছে?

আরও পড়ুনঃ তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ইসলামে ডুমুর ফলকে বলা হয় তিন। কোরআনে ডুমুরের নামে একটি বিশেষ সূরা রয়েছে। সূরাটির নাম হল “সূরা তিন”। এটি আঞ্জির নামেও পরিচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা তিনের শুরুর আয়াতেই ডুমুরের নামে শপথ করেছেন। ইসলামে নানা ফল উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে ডুমুরো একটি অন্যতম ফল।

(৭) ডুমুর ফলের উপকারিতা

পুষ্টিগুণে ভরপুর ডুমুর ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। ডুমুর ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

ডুমুর ফলের উপকারিতা তুলে ধরা হলো–

  • ডুমুর ফল ক্যান্সারের সম্ভাবনা ঝুঁকি কমিয়ে থাকে
  • ডুমুর ফল খেলে চুল ও নখ ভালো থাকে
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত ডুমুর হাড়ের সংগঠন ভালো রাখে
  • এই ফলটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে
  • মানবদেহে হিমোগ্লোবিন নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে
  • ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে

(৮) ডুমুর ফলের অপকারিতা

ডুমুর ফলের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে,ঠিক তেমনি ভাবে এর মধ্যে কিছু অপকারিতাও বিদ্যমান। কারণ প্রতিটি জিনিসের যেমন সুবিধে রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।

ডুমুর ফলের অপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো–

  • ডুমুরের আঠা শরীরে লাগলে এলার্জি হতে পারে। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ।
  • অতিরিক্ত ডুমুর খেলে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • অতিরিক্ত ডুমুর ফেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা থাকে
  • বেশি পরিমাণ ডুমুর ওজন বৃদ্ধি করে থাকে,যা শারীরিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে

(৯) শুকনো ডুমুর খাওয়ার নিয়ম

ডুমুরএকটি শুকনো ফল।এটি বিভিন্ন অবস্থাতেই পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করা যায়। শুকনো ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শুকনো ডুমুর কেটে খাওয়া যায়। এছাড়াও এতে অন্য কোন খাবার যোগ করে খেতে পারেন।

আর বেশি উপকার পেতে হলে দুই একটা শুকনো ডুমুরকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরদিন সকালে খেতে পারেন। এতে সমস্ত পুষ্টিগুণ আপনি গ্রহণ করতে পারবেন।

(১০) পাকা ডুমুর খেলে কি হয়

পাকা ডুমুর দিয়ে বিভিন্ন রকম রেসিপি তৈরি করে খাওয়া যায়। এছাড়াও পাকা ডুমুর খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও রয়েছে যেমন-

  • পাকা ডুমুর শরীরের হরমোন গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • পাকা ডুমুর খেলে শরীরে শক্তি সঞ্চালন হয়।
  • পাকা ডুমুর দিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ প্রতিরোধে এটি অনেক সহায়তা করে থাকে।
  • পাকা ডুমুর খেলে ত্বক ভালো থাকে।

(১১) শুকনো ডুমুর খাওয়া কি ক্ষতিকর?

ডুমুর নিঃসন্দেহে একটি কার্যকরী ফল। শুকনো ডুমুর অনেক উপকারী। তবে শুকনো ডুমুর খাওয়া কি ক্ষতিকর না ভালো এ বিষয়ে আজ আমরা জেনে নেব।

যেসব ব্যক্তি কিডনির সমস্যা ও পিত্তথলির রোগ রয়েছে সেসব ব্যক্তির শুকনো ডুমুর না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ আক্রান্ত অঙ্গটিতে শুকনো ডুমুর ক্ষতি করতে পারে। শুকনো ডুমুর একটি উষ্ণ ফল। তাই অতিরিক্ত গরম কালে শুকনো ডুমুর না খাওয়াই ভালো।

এক কথায় আমরা বলতে পারি, সকল ক্ষেত্রে শুকনো ডুমুর খাওয়া ক্ষতিকর নয়। আবার কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ও ফেলতে পারে।

(১২) ডুমুর ফলের দাম কত?

ডুমুর বা তিন ফলের দাম হলো দেড় হাজার টাকা কেজি। অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম শুকনো ডুমুরের দাম ৭৫০ টাকা। আর ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ ১ কেজি পনেরশ টাকা।

(১৩) ডুমুর ফল কোন কোন দেশে বেশি উৎপন্ন হয় ?

ডুমুর ফল উষ্ণ এলাকায় বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও ডুমুর ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে। কারণ এর চাহিদাও সারা বিশ্বে অনেক বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মরক্কো ও আফগানিস্তান সহ মিশর,পর্তুগাল,কাতার , তুরস্ক, গ্রিস, ক্যালিফোর্নিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে ডুমুর ফল বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডুমুর আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে ।

(১৪) দিনে কয়টা ডুমুর খাওয়া উচিত?

ডুমুর অনেকেই খুব পছন্দ করে থাকে।তাই বলে এই নয় যে অতিরিক্ত খাওয়া ভালো। আদর্শ মান হিসেবে দিনে তিন থেকে পাঁচটি ডুমুর খাওয়া ভালো। কারণ এর ফলে কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবার সম্ভাবনা নেই। তবে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা সবকিছু বিবেচনা করে খেতে হবে। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

(১৫) ডুমুরের কি ওষুধি গুণ আছে?

ডুমুর কে বলা হয় ঔষধি ফল। কারণ এটি শুধু পুষ্টিগুণে ভরপুর নয় বরং এর মানুষের শরীরে এর ঔষধি কার্যকারিতার গুণও অনেক বেশি। ডুমুরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২,সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ সহ আরো অনেক জরুরী পুষ্টিগণের উপস্থিতি যা মানব দেহে ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।

এসব গুণের উপস্থিতির কারণে ডুমুরের চাহিদাও অনেক বেশি। তাই আমরা বলতে পারি ডুমুর ফলটি ওষুধে গুণে ভরপুর।

(১৬) তাজা ডুমুরে কি চিনির পরিমাণ বেশি?

ডুমুর বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।শুকনো ও তাজা। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন তাজা ডুমুরে কি চিনির পরিমাণ বেশি থাকে? উত্তরটি হল–

হ্যাঁ। তাজা ডুমুরে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ যেকোনো শুকনো ও তাজা ফলে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই তাজা ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বা যে সকল ব্যক্তির চিনি খাওয়া নিষিদ্ধ, তাদের না খাওয়াই উত্তম। চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে তারা ডুমুর খেলে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শেষ কথাঃ ডুমুর ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকের আর্টিকেল টি বিশ্লেষণ করলে আমরা বলতে পারি ,ডুমুর এমন একটি ফল যার ভেষজ গুণ ও পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করে শেষ করা যাবে না। এই ফলটি বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন অবস্থাতেই খাওয়ার উপযোগী। তবে ব্যক্তি ভেদে ও শারীরিক সমস্যার দিকে লক্ষ্য রেখে ডুমুর ফলটি আমরা আহার করব।

যেন অতিরিক্ত খাবারের ফলে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখা দেয়।আপনাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে লক্ষ্য রেখে আমরা আর্টিকেলটি লিখেছি। ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *