দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায়
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে আমাদের সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য। যা অনেক সময় আমরা তেমন একটা লক্ষ্য করিনা বা মূল্যায়ন করিনা। দাতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায় অনেকেই খুঁজাখুঁজি করে থাকেন যখন সেই ব্যথা আর সহ্য করতে পারেন না ঠিক সেই সময়ে গিয়ে।
তবে আপনি চাইলে কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন। আর তাই সেগুলো না করার জন্যেই দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে ভুগে থাকেন অনেকেই। দাতে মাড়ি ফোলা সাধারণ সমস্যা হলেও বেশ যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর।
যখন আপনার দাতের মাড়ি ফুলে যায় তখন এটি সাধারণত লাল বা গাঢ় গোলাপি রঙের হয়ে যায়। আপনি যখন ব্রাশ করে থাকেন ঠিক সেই সময় আঘাত লেগেও কিন্তু আপনার ফোলা মাড়ি থেকে রক্ত ঝরতে পারে। জিনজিভাইটিস, সংক্রমণ, অপুষ্টি, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি কারণে মাড়ি ফোলার সমস্যা হয়।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায়
এছাড়া আপনাদের মাঝে যাদের ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ, ভুলভাবে দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অভ্যাস রয়েছে সেসমস্ত কারণেও কিন্তু মাড়ি ফোলার সমস্যা হয়। আর তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো যে কিভাবে আপনি দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে নিজেই সুস্থ্য থাকবেন সেই সম্পর্কে।
তাই চলুন বেশি দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক যে দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায় গুলো কি কি এবং কিভাবে দাতের মাড়ি ফোলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে।
মাড়ি প্রদাহ বা মাড়ি ফোলা কী?
দাতের মাড়ি ফোলা খুবই সাধারন একটি বিষয় এবং আমাদের সকলের কাছেই এটি খুব পরিচিত একটি সমস্যার নাম। মাড়ি প্রদাহ বা মাড়ি ফোলা ব্যাপারটাকে ইনফ্লামেশন বললেই বুঝতে বেশি সুবিধা হয়। আর আমরা জানি যে মাড়ি প্রদাহের মূল লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে দাতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাত ব্রাশ করতে গেলে রক্ত পড়া, কিছু খেতে গেলে রক্ত পড়া এবং মাড়ি থেকে পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি।
উপরের এই কয়েকটি সমস্যা যদি আপনার দাতে মাড়িতে দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মাড়ির প্রদাহ হয়েছে। এবং যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে এর প্রতিকার করতে হবে।
দাতের মাড়ি ফোলার উপসর্গ কী কী?
আপনারা যারা মনে করছেন যে আপনার যদি দাঁতের মাড়ি ফোলার মতো রোগ হয়ে থাকে তাহলে কি কি উপসর্গ দেখা দিবে বা কিভাবে বুঝবেন আপনার মাড়ি ফোলা রোগ হয়েছে? চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক দাতের মাড়ি ফোলার উপসর্গ গুলো কি কি সেই সম্পর্কেঃ
- মাড়ি থেকে রক্ত পড়বে
- মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যাবে
- ধরলেই ব্যথা করবে
- পুঁজ বের হবে
উপরে দেওয়া কয়েকটি বিষয় গুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনি দাতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই গুলোই মূলত দাতের মাড়ি ফোলা রোগের উপসর্গ।
আরও পড়ুনঃ ভাল স্বাস্থ্যের লক্ষণগুলো জেনে নেই
বাচ্চাদের মাড়ি কেন ফোলে?
আমরা সকলেই জানি যে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রাপ্ত বয়ষ্ক একজন মানুষের চাইতে তুলনা মূলক হারে কম থাকে। আর তাই তো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাড়ি থেকে দাঁতের প্রদাহ বেশি দেখা যায়। যাকে বলে পালপাইটিজ।
আর যখন বাচ্চাদের দাতের মাড়ি ফুলে যায় সেই ক্ষেত্রে বাচ্চার মাকে বেশি সচেতন হতে হবে। প্রেগনেন্সির নয় মাস পর্যন্ত গর্ভবতি মাকে ভালো ভালো পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বাচ্চার মায়ের মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং এমনকি বাচ্চাকে খাওয়ার আগে ও পরে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কারন আপনার বাচ্চা কিন্তু আপনার থেকেই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা থেকে শুরু করে আচার ব্যবহার বংশানুক্রমে পেয়ে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মাড়ি ফোলা রোধে টুথপেস্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা সকলেই জানি যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমাদের সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করতে হবে। এখন আপনাদের যদি বলি যে মাড়ি ফোলা রোধের জন্য টুথপেস্ট কতোটা ভূমিকা পালন করে থাকে?
আপনাদের সুবিধার জন্য বলে রাখছি যে মাড়ি ফোলা রোধে টুথপেস্ট অবশ্যই অনেক গুরুত্ব বহন করে। টুটপেস্ট বা মাউথওয়াশ ১০-১৫ ভাগই সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। তাই আপনাকে নিয়মিত ভাল মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে আপনার দাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।
দাতের মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধে করণীয় কী কী?
আমরা যদি নিজেরাই একটু সতর্ক থাকি তাহলেই দাতের মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধ করতে পারি অনেকাংশেই। এছাড়াও নিজে সতর্ক থাকার পরেও যদি মাড়ি ফোলার মতো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে সমাধান করতে হবে।
আমাদের সকলেই উচিত প্রতিদিন রাতে শোবার আগে ও সকালে নাশতার পর, দিনে দুবার ব্রাশ করতে হবে। মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং মুখে দন্ত পাথর জমলে স্কেলিং করতে হবে। আপনাকে ভাল মানের মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে তাহলে মাড়ি ফোলা রোধ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুনঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ
দাঁতের মাড়ি ফোলা ঘরোয়া উপায়
মাঝে মাঝে আমাদের দাতের মাড়ি ফোলা এবং ব্যথার পরিমান এতো বেশি পরিমানে হয়ে যায় যে ঔ মুহূর্তে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এমন মুহূর্তে দাতের মাড়ি ফোলা রোধে ঘরোয়া কিছু উপায় ফলো করতে পারেন।
দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায় হিসাবে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে আপনাদের জন্য তলে ধরলাম। আপনারা চাইলে এই সমস্ত উপায় অবলম্বন করে ঘরোয়া উপায় দাঁতের মাড়ি ফোলা কমাতে পারেন।
হলুদের মাধ্যমে দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়
আমরা জানি যে হলুদ হচ্ছে ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক ভাবে চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকরী মাধ্যম। তেমনি দাতের মাড়ির ফোলা দূর করতে হলুদও একটি ভালো ঘরোয়া উপাদান হতে পারে আপনার জন্য। কেননা হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন।
- এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে কাজ করে।
- এক চা চামচের এক-চতুর্থাংশ হলুদের গুঁড়া নিন। গুঁড়ার মধ্যে সামান্য হালকা গরম পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- পরিষ্কার আঙুল দিয়ে এই পেস্ট মাড়িতে মাখুন।
- পাঁচ মিনিট রাখার পর আলতোভাবে এক মিনিট ম্যাসাজ করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন দুবার করে এক থেকে দুই সপ্তাহ ব্যবহার করুন।
আপনি যদি নিয়ম করে সঠিক পরিমানে হলুদের ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আশা করি দাতের মাড়ি ফোলা রোগ থেকে মুক্তি পেতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এই হলুদ।
লবণ পানির মাধ্যমে দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়
দাতের মাড়ির ফোলা দূর করতে লবণ হতে পারে একটি চমৎকার ঘরোয়া উপাদান। কেননা লবণ পানি মুখের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে প্রতিরোধ করে এবং সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে। নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লবণ লাগিয়ে ঘষুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ কুলি করে নিন।
প্রতিদিন একবার যদি আপনি এই পদ্ধতি নিয়ম করে মেনে চলেন তাহলে অনেক উপকারিতা পাবেন। আধা অথবা এক চা চমচ লবণ হালকা গরম পানিতে মেশান। মাড়ির ফোলা কমাতে দিনে দুবার এই পানি দিয়ে মুখ কুলি করুন। এতে করে দেখবেন আপনার দাতের মাড়ি ফোল অনেকাংশেই কমে গেছে এবং আপনি সুস্থ্যতা লাভ করবেন।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারীতা ও গুণাগুণ
আদার মাধ্যমে দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়
আদা অনেক ভাবেই আমাদের কাজে লাগে এবং আদার ঔষধি গুনের কথা অনেকেই জানেন। বহুদিন ধরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এড়ানোর জন্য আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। নতুন করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও এড়ানোর জন্যও আদা খুব ভাল কাজ করে থাকে।
আপনি যদি সঠিক নিয়মে আদার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি ঘরোয়া ভাবেই দাতের মাড়ি ফোলা কমাতে পারেন ঘরে বসেই। তবে আপনাকে সবকিছুই পরিমান মতো এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা জানতে হবে।
শেষকথাঃ দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায়
আপনারা যারা আমাদের আজকের আলোচনা মনযোগ সহকারে পড়েছেন আশা করছি তারা বুঝতেই পেরেছেন যে দাতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি এবং কিভাবে আপনি দাতের পরিচর্চা করলে এই ধরনের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাবেন সেই সম্পর্কে।
আপনি চাইলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, এতে করে তারাও আপনার মাধ্যমে উপকারিত হবে। আর এই ধরনের নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটারে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।