ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ধনী দেশ কোনটি? / ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কোনটি?
দেশের মানুষ ধনী না গরিব, সে অবস্থা বোঝা যায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা দেখে। এবং একটি দেশ ধনী না দরিদ্র সেটা জানা যায় সেই দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দিয়ে। মাথাপিছু আয় যে দেশের যত বেশি সেই দেশ তত ধনী। ইউরোপ মহাদেশে মোট ৫০ টি দেশ রয়েছে।
তবে ২৭ টি দেশ ইউরোপ মহাদেশের সাথে সংযুক্ত। বাকি ২৩ টি দেশ ইউরোপ মহাদেশের সাথে সংযোগ নিয়ে। আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে, ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কোনটি? ইউরোপ মহাদেশের ধনী রাষ্ট্র লুক্সেমবার্গ।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?
এই দেশ আয়তনে ইউরোপের সবচেয়ে ছোট দেশ। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশের মধ্যে এটি একটি। এই দেশটি গঠিত পাহাড়, ছোট ছোট নদী আর বনাঞ্চল নিয়ে। লুক্সেমবার্গ ইউরোপের রাজধানী বলা হয়। কারণ, লুক্সেমবার্গ দেশটি ইউরোপ মহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত।
ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কোনটি?
ইউরোপ মহাদেশ আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। কিন্তু অর্থনীতি দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কোনটি? সেই সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র লুক্সেমবার্গ। এই দেশটি ইউরোপ মহাদেশের সবথেকে ছোট।
এই দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ১৮ হাজার মার্কিন ডলার। এই দেশটি পাহাড়, ছোট ছোট নদী আর বনাঞ্চল নিয়ে গঠিত। যা প্রকৃতি প্রেমিকার কাছে অনেক জনপ্রিয়। লুক্সেমবার্গ ইউরোপের রাজধানী বলা হয়। কারণ, এই দেশটি ইউরোপ মহাদেশের কেন্দ্র অবস্থিত।
লুক্সেমবার্গ পশ্চিমে এবং উত্তরের বেলজিয়াম, পূর্ব দিকে জার্মানি এবং দক্ষিণে ফ্রান্সের সীমান্ত। এই দেশটিতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট অবস্থিত। লুক্সেমবার্গ ছোট দেশ হওয়ায় ইউরোপের অন্য সকল দেশের তুলনায় এখানে প্রবাসী বাংলাদেশ সংখ্যা অনেক কম।
এখানে, মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ বাংলাদেশি বসবাস করে। এখানে যারা কাজ করে তারা সকলে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
লুক্সেমবার্গ ধনী দেশ হওয়ার কারণ:
লুক্সেমবার্গ ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ। এ দেশের অর্থনীতি পূর্বে ইস্পাত এবং শিল্পঘাতের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং নির্ভর। বর্তমান সময়ে লুক্সেমবার্গ মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ১৮ হাজার মার্কিন ডলার।
বিশ্বের প্রায় অন্যতম সব বড় বড় কোম্পানির হেড অফিস লুক্সেমবার্গ অবস্থিত। এদেশে প্রবাসী নাগরিকের চাকরি হলে সরকারিভাবে ভাতা দেওয়া হয়। কর্নার সময় সরকার চার মাসের বেতন দিয়েছিল।
এদেশের প্রধান আয়ের উৎস ব্যাংক। বিশ্বের সকল দেশের মানুষের এ দেশের ব্যাংকে টাকা রয়েছে। যার ফলে সরকার ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণ ট্যাক্স পায়। এছাড়াও বিশ্বের সকল দেশের বড় বড় কোম্পানির হেড অফিস লুক্সেমবার্গ । এর কারণে, পণ্য আমদানি রপ্তানি করতে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়।
এভাবে এই দেশ উন্নত হয়েছে। এদেশের সরকারি আয়ের জিডিপির ৪.১ বিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হয়। শুধুমাত্র৬.৩ মানুষের চিকিৎসার জন্য। সকল দেশের তুলনায় উন্নতি অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করল লুক্সেমবার্গ অদ্বিতীয়।
আরও পড়ুনঃ আমাদের জিডিপি ছিল পুরো ইউরোপের চেয়েও বেশি
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ কোনটি:
২০২০ সালের করনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের সকল দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটেছে। এই মহামারীতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই সময় প্রায় সকল অফিস, আদালত, কল-কারখানা বন্ধ ছিল।
যার ফলে উৎপাদন কমে গিয়েছিল। তবে ২০২৩ সালের তথ্য মতে বিশ্বের ১০ টি দেশের উল্লেখ করা হলো। এবং কোন দেশের মাথাপিছু হয় তুলে ধরা হলো।
- লুক্সেমবার্গ। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ডলার।
- সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের মানুষের মাথাপিছু আয় ৯৭ হাজার ৫৭ ডলার।
- আয়ারল্যান্ড। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৯৪ হাজার ৩৯২ ডলার।
- কাতার। বর্তমানে দেশের মানুষের জিডিপির পরিমাণ ৯৩ হাজার ৫০৮ ডলার।
- সুইজারল্যান্ড। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৭২ হাজার ৮৭৪ ডলার।
- নরওয়ে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৬৫ হাজার ৮০০ ডলার।
- যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মাথাপিছু আয় ৬৩ হাজার ৪১৬ ডলার।
- ব্রুনেই দারুসসালাম। মানুষের মাথাপিছু আয় ৬২ হাজার ৩৭১ ডলার।
- হংকং। এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৯ হাজার ৯৩২ ডলার।
- ডেনমার্ক। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৮ হাজার ৯৩২ ডলার।
ধনী দেশ হওয়ার সত্য কি?
বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে কম সময়ে অনেক উৎপাদন করা যাচ্ছে। এসব কারণে, দেশের চাহিদার পাশাপাশি অন্য দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে।
আমরা অনেকেই, ধনী দেশ হওয়ার সত্য কি? জানিনা। যখন কোন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় তখন সে দেশ কে উন্নয়নশীল বলা হয়। ধনী দেশ হওয়ার শর্তগুলো তুলে ধরা হলো:
- খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
- মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- অতিরিক্ত বিলাসিতা।
- দেশের জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি।
- মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি।
যখন কোন দেশের এসব বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে দেশটির উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন দেশের যদি এসব উন্নতি আগের থেকেই হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন দেশটি ধনী। ধনী দেশগুলো অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। কোন কাজের জন্য অন্য দেশের কাছ থেকে ঋণের প্রয়োজন পড়ে না।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় । সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
বিশ্বের গরীব ১০ টি দেশ:
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশ গরিব রয়েছে। কিছু কিছু দেশে এখনো মানুষ ঠিকমতো খাদ্য পায় না। তারা দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। যখন কোন দেশ জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম তখন সে দেশকে গরিব দেশ বলা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশগুলো হলো আফ্রিকা মহাদেশে।
এসব দেশের মানুষ এখনো অনাহারে দিন কাটায়। বিশ্বের গরীব দশটি দেশের নাম উল্লেখ করা হলো:
- টুভালু
- নাউরু
- কিরিবাতি
- পালাউ
- মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ
- মাইক্রোনেশিয়া
- টাঙ্গা
- সাঁউতুমি অ্যান্ড প্রিন্সিপি
- ডোমিসিকা
- সামোয়া
উপরে যে সব দেশের উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ। সে সব দেশের মানুষের মাথাপিছু অন্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এসব দেশের সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম। এসব দেশের নাগরিকেরা সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থা:
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ নির্ণয়ের দেশ ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কৃষিতে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। এছাড়াও শিক্ষার প্রসারের ফলে বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ তম। বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। বা ৪৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের আগে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরা এবং মিশর। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে।
শেষ কথা: ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কোনটি?
বিশ্বের অন্যতম ধনী মহাদেশ ইউরোপ। এ মহাদেশের প্রায় সকল দেশী ধনী। তবে এ মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ হচ্ছে লুক্সেমবার্গ। এই দেশ ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে ছোট। তবুও অর্থনীতিতে সবচেয়ে উন্নত। এ দেশ সকলের ব্যবসায়ের জন্য আকর্ষণের মূল কেন্দ্র। কারণ, এই দেশে ব্যবসা করতে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। যার ফলে ব্যবসার অনেক লাভ হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল মহাদেশ হচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকার পরের স্থান ইউরোপ মহাদেশের। আমেরিকা মহাদেশের তুলনায় ইউরোপ মহাদেশ অনেক ধনী। বর্তমান সময়ের বিশেষ সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র মহাদেশে অবস্থিত। যার নাম লুক্সেমবার্গ। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।