হরমোন বলতে কী বোঝায় হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়
|

হরমোন বলতে কী বোঝায়? হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

হরমোন এক ধরনের তরল জৈব রাসায়নিক। শরীরের স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা বজায় রাখতে হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের কোন গ্রন্থি বা কোষ থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে হরমোন নিঃসরিত হয়। বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

হরমোনের ক্রিয়া পর ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। হরমোন বলতে কী বোঝায়? হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়। হরমোন সমস্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।

হরমোনের মাধ্যমে শরীরে সব ধরনের কোষের বৃদ্ধি ঘটে এবং গ্রন্থি ডেভলপমেন্ট হয়। হরমোন জনিত সমস্যা হলে মানুষের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। এজন্য হরমোন বলতে কী বোঝায়? ওর মনের সমস্যা বোঝার উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকা সকলের উচিত।

হরমোন কি?

মানব দেহের হরমোন কি হরমোন বেড়ে গেলে কি হয় মানব দেহের হরমোন কি হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়Hormone ইংরেজি শব্দ। যার বাংলা অর্থ প্রাণরস। এই প্রাণরস এক ধরনের জৈব রাসায়নিক তরল। যা শরীরের কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয় রক্তের সাহায্যে। রক্তের সাহায্যে উৎপত্তিস্থল থেকে দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পর হরমোন ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

হরমোন প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ছত্রাক সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হরমোন। হরমোন ছাড়া কোন জীবের বৃদ্ধি ঘটে না। যেসব পদার্থকে হরমোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্টেরয়েড জাতীয় পদার্থ।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হরমোনের নাম:

নারী ও পুরুষ এর হরমোনের পার্থক্য রয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর শরীরে অনেক ধরনের হরমোন থাকে। যেমন ফলিকল-স্টিমুলের্টিং হরমোন, লুটেনাইজিং হরমোন, প্রোজেস্টেরন ও ইসট্রোজেন। পুরুষ শরীরে রয়েছে অ্যান্ড্রোজেন। এছাড়াও নারী ও পুরুষ সকলের দেহে রয়েছে হরমোন।

সেগুলো হল, বৃদ্ধি পোষক হরমোন, থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন, অ্যাান্টডাই-ইউরেটিক হরমোন, ট্রাইআয়োডোথাইরোসিন, থাইরক্সিন, ক্যালসিটোনিন, প্যারাথারমোন ইত্যাদি

হরমোন এর কাজ: 

মানব দেহের সকল কার্য্য পরিচালনা করে হরমোন। ঘুম থেকে ওঠা এবং ক্ষুধা লাগা এই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। এছাড়াও আনন্দের সময় আমাদের শরীর থেকে হরমোন নিঃসরিত হয়। ঘুম থেকে জেগে ওঠার ক্ষেত্রে কাজ করে কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার হরমোন।

এ হরমোন গুলো গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়ে একজন আরেকজনকে তথ্য পাঠায়। হরমোন মানব দেহের যেগুলো কাজ করে নিম্নে তুলে ধরা হলো:

  1. অস্থি ও কমল টিস্যু বৃদ্ধি করে।
  2. থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধির, ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  3. নারী দেহে ডিম্বপাত ও দুগ্ধ ক্ষরণ এবং পুরুষের টেষ্টোষ্টেরণ ক্ষরণ উদ্দীপ্ত করে।
  4. বিপাক হার, হৃৎস্পন্দন ও প্রোটিন সংশ্লেষ নিয়ন্ত্রণ।
  5. বিপাকীয় প্রক্রিয়া ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
  6. ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
  7. রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা কমানো গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখা।
  8. শর্করা ও আমিষ বিপাক নিয়ন্ত্রণ রাখে।
  9. খনিজ লবণ বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
  10. ফসফরাস বিপাক দ্রুত করে।
  11. যৌনাঙ্গের সক্রিয়তা ঘটায়।

হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়:

হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায় হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়হরমোন আমাদের সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করতে সাহায্য করে। মানব দেহের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায় আমাদের অনেকের জানা নেই। চলুন জেনে নিন হরমোন জনিত সমস্যা হলে কি কি পরিবর্তন ঘটতে পারে।
  1. শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটবে।
  2. মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটবে।
  3. কথা বলতে সমস্যা হবে।
  4. যৌন চাহিদা কমে যাওয়া।

এসব ছাড়াও আরো অন্য ধরনের সমস্যা হতে পারে। মানবদেহের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে হরমোন। বেশি কষ্ট পেল হরমোন নিঃসরণ হয়। এবং হাসি পেল হরমোন নিঃসরণ হয়। মানুষ প্রেমে পড়ল শরীরে নতুন হরমোন সৃষ্টি হয়। যার ফলে মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

হরমোন জনিত সমস্যা কি কি?

হরমোন মানব দেহের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু অনেক সময় মানবদেহে হরমোনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে মানব দেহে অনেক প্রভাব পড়ে। যার ফলে মানুষের বাস্তব জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। হরমোন জনিত সমস্যার কি কি সমস্যা হয় নিম্নে তুলে ধরা হলো।

বান্ধ্যাত্ব:

হরমোন সমস্যার গুরুতর একটি রোগ বান্ধ্যাত্ব। এই রোগটি নারী ও পুরুষ উভয়ের হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তিকে বাবা হওয়ার জন্য টেষ্টোষ্টেরন এবং শুক্রাণু দুইটারই প্রয়োজন। হাইপোথািইরয়েডিজম অর্থ হচ্ছে থাইরয়েডের কর্ম ক্ষমতা কমে যাওয়া। আর হাইপার থাইরয়েডিজম অর্থ হচ্ছে থাইরয়েডের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া।

থাইরয়েড হরমোন বান্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বাণুর ওপর প্রভাব ফেলে। হরমোন টি হল প্রোল্যাকটিন। এটি জেনেটিক কাজ করে। বাচ্চা হওয়ার পরে মেয়েদের ব্রেস্ট থেকে দুধ তৈরি করে থাকে।

প্রোল্যাকটিন হরমোন বেড়ে গেলে মেয়েদের ঠিকমতো ডিম্বানু ফুটে না এবং ছেলেদের শুক্রাণু নিঃসরণ হয় না। এই ভাবেই বান্ধ্যাত্ব আসে। এই কারণে বান্ধ্যাত্ব জন্য দায়ী হরমোন।

দেহের বৃদ্ধি:

মানব দেহের নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় দেহের ভিত্তিতে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক বাচ্চা ছোট হয়ে থাকে। অনেকের হাত অথবা ছোট হয়ে থাকে। অনেক সময় কথা বলতে পারে না। এসব হয়ে থাকে হরমোন জনিত সমস্যার কারণে। হরমোন উৎপাদন কমে গেলে দেহের বৃদ্ধি কমে যায়।

প্রতিবন্ধী:

হরমোন মানব দেহের সঠিক বিকাশ। এছাড়াও সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। দেহের সঠিক বৃদ্ধির করে হরমোন। কিন্তু অনেক সময় বৃদ্ধি সঠিক থাকলেও কথা বলতে পারে না। এ সমস্যাটি হয়ে থাকে হরমোন এর কারণে। এছাড়া অনেক সময় মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাটিও হয়ে থাকে হরমোন জনিত সমস্যার কারণে।

মাথার চুল পড়া:

হরমোন সকল কিছু বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল বৃদ্ধি করে থাকে। চুলের গোড়া মজবুত সুন্দর এবং লম্বা করতে প্রয়োজন হর মনের। হরমোন জনিত সমস্যা হলে মাথার চুল পড়ে যায়। হরমোনের অভাবে মাথা থেকে পড়া চুল আর নতুন করে গজায় না। এ কারণে অল্প বয়সেই মাথায় টাক পড়ে যায়।

মানব দেহের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। হরমোন সঠিকভাবে দেহ উৎপাদন না হলে মানুষের সব অঙ্গ কাজ করে না। হরমন মানুষের চালিকা শক্তি। একটি হরমোন আরেকটি হরমোনের সাথে সম্পর্কিত। এক ধরনের সমস্যা থাকলে মানবদেহে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ শারীরিক বৃদ্ধির প্রভাবকসমূহ/বাধা সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ

হরমোন জনিত সমস্যা দূর করার উপায়:

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের মধ্যেই হরমোন জনিত সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে মানুষের সঠিক বিকাশ ঘটতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ। এই সমস্যাটি হয়ে থাকে হরমোন এর কারণে। কিন্তু সঠিকভাবে চলাফেরা করলে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। নিম্নে হরমোন জনিত সমস্যা দূর করার উপায় তুলে ধরা হলো:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস
  2. নিয়মিত শরীর চর্চা
  3. মানসিক চাপ সামলানো
  4. পর্যাপ্ত ঘুম

স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস:

স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে শারীরিকভাবে এখন দুর্বলতা দূর হয়। এবং সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশ করে। যার ফলে দুর্বলতা দূর হওয়ার পাশাপাশি সকল ধরনের হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে যেসব গ্রন্থি রয়েছে সবকিছু থাকে। যার ফলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং সকল ধরনের হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।

নিয়মিত শরীরচর্চা:

নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরে পড়ে। যার ফলে গ্রন্থিগুলো হতে থাকে। এবং কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত চর্বি ঝরে পড়ার হলে উধাও প্রদাহ রোধক হরমোনের এবং ইন্সুলিন এর সংবেদনশীলতা বাড়ে।

মানসিক চাপ সামলানো:

মানুষ অসুস্থ হয়ে থাকে বিশেষ করে মানসিক চাপের কারণে। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে। বর্তমান সময়ে মানসিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক অবস্থা। মানসিক চাপে থাকলে হরমোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।

‘কর্টিসল’ ও ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোন জরুরি পরিস্থিতিতে শারীরিক মোকাবেলা করার শক্তি সরবরাহ করে। এই কারণে মানসিক চাপে থাকলে ও হরমোন গুলো উৎপন্ন হয়ে থাকে। যার ফলে মানসিক অশান্তির পাশাপাশি শারীরিক ভারসাম্য হারানো সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে হলে মানসিক চাপ সামলাতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম:

ঘুম মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিকভাবে অশান্তি হয়। এবং অনেক সময় মেজাজ কেটে হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে হরমোন এর কারণে। ও তার তো ঘুমানোর পরে শরীর থেকে অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করার সুযোগ পায়।

কিন্তু ঘুম না হলে বিষাক্ত পদার্থ শরীরে থেকে যায় এবং হরমোনের সাথে বিক্রিয়া করে শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। এ কারণে হরমোন জনিত সমস্যা দূর করতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

শেষ কথা: হরমোন বলতে কী বোঝায়? হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

হরমোন সকল জীবের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মানুষের দৈহিক ভিত্তি এবং মানসিক বৃদ্ধিতে হরমোনের প্রয়োজন। মানব দেহে হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। শরীরে সঠিকভাবে হরমোন উৎপাদন না হলে দাম্পত্য জীবনে প্রভাব পড়ে।

হরমোন রক্তের সাহায্যে সম্পূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এবং হরমোনের কাজ সম্পন্ন হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। প্রতিদিনের হরমোনের উৎপন্ন হয় এবং ধ্বংস হয়ে যায়। হরমোন বলতে কী বোঝায়? হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়। লেখার মধ্যে ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পন্ন দেখাতে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *