কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার pdf

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার pdf

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার -> কীটনাশক শব্দের সাথে কমবেশি আমরা সকলে পরিচিত। কৃষি কাজে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান কীটনাশক। কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। বর্তমান সময়ে কীটনাশক ছাড়া ফসল উৎপাদন করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমান সময়ে বাজারে অনেক ধরনের কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে।

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার। সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ কীটনাশক হিসেবে নানা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর রাসায়নিক পদার্থগুলো অনেক সময় ফসলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা সকলের প্রয়োজন।

কীটনাশক কি?

কীটনাশক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যা পোকামাকড় মারতে সাহায্য করে। কীটনাশক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়। ফসলের কীটপতঙ্গ নির্মলের জন্য ব্যবহার করা হয়।

কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কীটপতঙ্গের ডিম, লার্ভা বিনাশ ঘটে থাকে। ধারনা কার  হয় বিংশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কীটনাশক ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমান সময়ে কীটনাশক ছাড়া কোনো ফসল উৎপাদন করা প্রায় অসম্ভব।

কীটনাশক কত প্রকার:

বর্তমান সময়ে কৃষিকাজের প্রধান উপাদান হচ্ছে কীটনাশক। কীটনাশক ছাড়া কৃষি কাজের কথা ভাবা অসম্ভব। কারণ, কীটনাশক ছাড়া কোন ফসল জমিতে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। বর্তমান সময়ে কীটপতঙ্গের অত্যাচার অনেক বেড়ে গেছে।

এই কারণে ফসল টিকিয়ে রাখতে কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয়। আমরা কীটনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু কীটনাশক কত প্রকার সেটা জানে না। কীটনাশক কাজের ভিত্তিতে দুই প্রকার। যথা: 

  1. জৈব কীটনাশক।
  2. অজৈব কীটনাশক।

সর্বাধিক ব্যবহৃত কীটনাশক কোনটি?

কৃষি কাজে যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে কীটনাশক বলা হয়। কীটনাশকের মাধ্যমে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কীটপতঙ্গ দমন করে। বর্তমান সময়ে কীটনাশক ছাড়া কোন ধরনের ফসল মাঠে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। বর্তমান সময়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত কীটনাশক হচ্ছে কীটপতঙ্গ নাশক। 

কারণ কীটপতঙ্গের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বীজ বপন করার পর থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এই কারণে, সর্বাধিক পোকামাকড় নাশক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

কীটনাশক ব্যবহারের কনে করেত হয়:

কীটনাশক ছাড়া কৃষিকাজ অসম্ভব। কারণ, বর্তমান সময়ে আবহাওয়া অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যার কারণে ফসল ফলাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। জমিতে বীজ রোপন করার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা যায়। সঠিক সময় কীটনাশক ব্যবহার না করলে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও অনেক ধরনের পোকামাকড়ের অত্যাচার হয়।

ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সঠিক সময় কীটনাশক ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও ফসলের গুণগত মান ঠিক রাখতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে কীটনাশক ছাড়া ফুল ফালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। এই কারণে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

কীটনাশকের ব্যবহারের নিয়ম:

ফসল বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, বালাইনাশক এর হাত থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফসলের রোগ হচ্ছে। এছাড়াও পোকামাকড়তো রয়েছে। এসব কারণে সঠিক সময় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। পোকামাকড় দমন করতে সাধারণত সকাল সন্ধ্যায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এবং বালাইনাশক যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। তবে কীটনাশক ব্যবহার করার সময় সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। মাত্র অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে ফসলের অনেক ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তার প্যাকেটে ব্যবহারের নির্দেশনা বলি দেওয়া থাকে। সেই নির্দেশনা গুলি অনুসরণ করলেই ফসলের কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্যই সঠিক পরিমাণে কীটনাশক ফসলে ব্যবহার করতে হবে।

আধুনিক কৃত্রিম কীটনাশকের সুবিধা কি?

বর্তমান সময়ে সকল কিছু আধুনিক হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও আধুনিকতার ছোঁয়া পড়েছে। যার ফলে কৃষি কাজের অনেক গতি এসেছে। এবং কম সময়ের মধ্যে অনেক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির পাশাপাশি কীটনাশকও আধুনিক হয়েছে।

যার কারনে খুব সহজেই ফসলের সমস্যা গুলোর সমাধান করা যাচ্ছে। আধুনিক কৃত্রিম কীটনাশকের অনেক সুবিধা রয়েছে। কারণ প্রথম অবস্থায় শুধু পোকামাকড় নাশ করার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। সে সময় অন্য কোন ধরনের সমস্যা হলে ফসল নষ্ট হয়ে যেত।

যার কারণে কৃষক অনেক ক্ষতির মুখে পড়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিক কৃত্রিম কীটনাশকের জন্য খুব সহজে ই সকল সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং খুব সহজেই ফসলের সমস্যা নির্ণয় করে কীটনাশক প্রয়োগ করা যাচ্ছে।

এতে করে সময় কম লাগছে এবং টাকা অনেক কম খরচ হচ্ছে। আধুনিক কৃত্রিম কীটনাশকের সুবিধা অনেক হয়েছে।

কীটনাশক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কেন?

ফসলের কীটনাশক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে। কীটনাশক পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কারণ, কীটনাশক ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পায়। এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংসের পাশাপাশি ফসলের উপকারী পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যায়।

কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে দেশী জাতীয় মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে ফসলের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। জমিতে ব্যবহার করা কীটনাশক সম্পূর্ণ ব্যবহার হয় না। যা বৃষ্টির মাধ্যমে বিল, নদীর পানির সাথে মিশ্রিত হচ্ছে।

যা পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। কীটনাশক যুক্ত ফসল খাওয়ার ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষ খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এছাড়াও আরো অনেক ভাবে কীটনাশক পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে। বর্তমান সময় আমরা কীটনাশকের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি চাইলে সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।

ফসলের উপর রাসায়নিক ব্যবহারের প্রভাব:

ফসলের উপর রাসায়নিক ব্যবহারের প্রভাব অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। রাসায়নিক বলতে বলতে বুঝি সার ও কীটনাশক। বর্তমান সময়ে সার ছাড়া কোন ফসল ফলানোর কথা ভাবা সম্ভব। কারণ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে করতে জমির উর্বলতা ক্ষমতা কমে গেছে।

যার কারণে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। ফসলের রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ যেই ফসল জমি থেকে আমরা উৎপাদন করি সেগুলো আমরাই খাই। যার ফলে রাসায়নিক এর প্রভাব সরাসরি মানুষের উপর পড়ছে।

এ কারণে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এবং অল্প বয়সেই মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে ভুগছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রাসায়নিক ব্যবহার কমাতে হবে।

কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব:

কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ফসলে। ফসল গ্রহণ করে থাকে মানুষ। যার কারণে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি মানুষের উপর পড়ে। এছাড়াও পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছে। চলুন জেনে নেই কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো সম্পর্কে:

  1. কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে পানি দূষিত হচ্ছে।
  2. যে ফসলের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় সেই ফসলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
  3. কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
  4. জমির উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
  5. কীটনাশক ব্যবহার করা ফসল খেলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
  6. বন্য পশু পাখির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

কীটনাশক ব্যবহার করলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রাণী জগতের বেশি ক্ষতি হয়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে।

কীটনাশকের নামের তালিকা:

কীটনাশকের নামের তালিকা সকলের জানা প্রয়োজন। তবে বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায়। কারণ বিভিন্ন কীটনাশকের কোম্পানি স্থাপিত হয়েছে। যার ফলে বাজারে অনেক ধরনের কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোম্পানি অনুযায়ী কীটনাশকের নাম আলাদা হলেও কার্যক্রম প্রায় সকলের একই।

বর্তমান সময়ে কীটনাশক পোকামাকড় দমনের পাশাপাশি অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন:

ছত্রাক নাশক, মড়ক নাশক। বিশেষ করে পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকের নাম সহ কি কাজে ব্যবহার করা হয় উল্লেখ করা হলো:

বায়ো ও বটানিক্যল কীটনাশক  কীটপতঙ্গের / রোগের নাম
ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিসল্যাদা পোকা
ফেরোমোন ট্র্যাপফলের মাছি নিয়ন্ত্রন
এন.পি.ভিল্যাদা পোকা
সামুদ্রিক শৈবাল শোষক পোকা নিয়ন্ত্রন
অ্যাজাডিরেক্টিননিমজাত পোকা
অ্যাসিফেটশোষক পোকা
স্পিনোস্যাডছিদ্রকারী পোকা
বুপ্রোফেজিনঅন্তর্বাহী-সকল শোষক পোকা

অজৈব কীটনাশকের নাম:

কীটনাশক উৎপত্তি অনুসারে দুই প্রকার। যথা: জৈব কীটনাশক ও অজৈব কীটনাশক। অজৈব কীটনাশকের উপাদান রয়েছে। নিম্নে অজৈব কীটনাশকের নাম তুলে ধরা হলো:

  1. আর্সেনিক
  2. Lead
  3. ক্লোরিন
  4. সালফার

সাধারণত অজৈব কীটনাশকের নাম এগুলোই। এগুলো উপাদান থেকেই অজৈব কীটনাশক তৈরি করা হয়। এগুলো অজৈব কীটনাশকের মূল উপাদান।

কীটনাশকের গ্রুপের নাম:

বর্তমান বাজারে অনেক ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায়। কীটনাশকের অনেক গ্রুপ রয়েছে। নিম্নে কৃষ্ণাশকের গ্রুপের নাম তুলে ধরা হলো:

  1. সাইপারমেথ্রিন ও ক্লোরোপাইরিফস।
  2. এমামেকটিন বেনজয়েট।
  3. কার্বোফুরান।
  4. এসিটামিপ্রিড।
  5. ডায়মেথয়েট।
  6. এবামেকটিন।
  7. ইমিডাক্লোরপ্রিড।
  8. ফেনভেলারেট।

কীটনাশকের ইসি কি?

সাধারণত ওষুধের ক্ষমতার পরিমাপ করা হয় মিলিগ্রাম এর মাধ্যমে। কিন্তু কীটনাশক ওষুধের ক্ষমতা নির্ণয় করা হয় ইসি দিয়ে। যে কীটনাশকের ইসি যত বেশি তার ক্ষমতা তত বেশি। এই কারণে ইসিকে কীটনাশকের ক্ষমতা পরিমাপের একক বলা হয়। প্রায় কীটনাশকের ইসির পরিমাণ ৫ থেকে ১০ মধ্যে হয়।

শেষ কথা: কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার pdf

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় কীটনাশক ছাড়া ফসল উৎপাদন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ বর্তমান সময়ের আবহাওয়া অনেক দূষিত। যার কারণে ফসলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফসল  পোকামাকড় ও রোগ জীবাণুর হাত থেকে কীটনাশক ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী।

বর্তমানে কীটনাশক ছাড়া ফসল ফলানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার কারণে কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা আমাদের উচিত। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *