বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। যথা: ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। ইসলামে যাকাতের মূল্য অনেক। তবে যাকাত সকলের উপর ফরজ না। কারণ, যাকাত ফরজ হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। এই সত্য গুলোর মধ্যে না পড়লে তাকে যাকাত দিতে হবে না।
ইসলামে উল্লেখ রয়েছে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক বলে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝানো হয় সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তুলা রুপার পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে।
আপনার কাছে নগদ টাকা থাকলে বর্তমান বাজারে সোনা এবং রুপার দামের সাথে হিসাব করে যদি আপনার সম্পদ সেই পরিমান থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে। সোনার দাম হিসাব করলে বর্তমানে ছয় লাখ টাকার পরিমান সম্পদ থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে।
আর যদি কেউ রুপোর দাম হিসাব করে যাকাত দিতে চাই তাহলে তার কাছে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা রাখতে হবে। তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকাত কি?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাকাত। ধনী ব্যক্তিদের ওপর যাকাত ফরজ। যদি কোন ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। তবে নিসাব পরিবার সম্পদ ওই ব্যক্তির কাছে এক বছর থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ঈদ অর্থ কি? ঈদের দিনের সুন্নত কাজ গুলো কি কি?
তাহলে সেই ব্যাক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে। হিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার সমমূল্য অর্থ থাকা। তাহলে সেই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকাতের গুরুত্ব
ধনী ব্যক্তিদের ওপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। যাকাত ছাড়া ইসলামের দিন পরিপূর্ণতা লাভ করে না। কারণ, ইসলাম হচ্ছে সামঞ্জস্য এবং পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। একজন ব্যক্তির কাছে অঢেল সম্পদ রয়েছে কিন্তু প্রতিবেশী অনাহারে রয়েছে এটাই ইসলাম মেনে নেয় না।
এই কারণে, ইসলামের যাকাতের বিধান রয়েছে। একজন ব্যক্তির কাছে ধন সম্পদ থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে এবং হজ্জ পালন করতে হবে। সূরা বাকারার ৪৩ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, “তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে”।
মহানবী (সা.) বলেন, তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে সম্পদ গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের মধ্যে সম্পদ বন্টন করতে হবে। (বুখারী ১৪০১) একজন ব্যক্তির হাতে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ জমা হওয়া ইসলাম পছন্দ করে না।
ইসলাম ধর্ম চাই ধনী ও গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দে এবং সুন্দরভাবে জীবন যাপন করুক। এর জন্য সফল ব্যক্তিকে সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করতে হবে। এই কারণে ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিসাব পরিমাণ কি?
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয় সেই পরিমাণই হচ্ছে হিসাব পরিমান। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ব্যক্তির কাছে যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপা থাকে অথবা সেই পরিমাণ অর্থ থাকে তাহলে সেটা নিসাব পরিমান। হিসাব পরিমান সম্পদ যদি একটি ব্যক্তির কাছে এক বছর থাকে তাহলেই তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে।
যাকাত ফরজের শর্ত কয়টি?
ইসলামে যাকাতের তাৎপর্য অনেক। তবে যাকাত সকলের উপর ফরজ না। যাকাত ফরজ হওয়ার পাঁচটি শর্ত রয়েছে। নিম্নে শর্তগুলো তুলে ধরা হলো:
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে।
- নিসাব পরিমান সম্পদ ১ বছর নিজের কাছে থাকা। সেটা চন্দ্র বছর হতে হবে।
- সম্পদের মালিক নিজে হওয়া।
- সেই সম্পত্তি হতে হবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
- বেশি পরিমাণ ঋণ না থাকে।
এই পাঁচটি সত্যের মধ্যে যদি আপনার কোন ধরনের সমস্যা হয়। তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ না।
কত টাকার কত যাকাত?
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। তবে যাকাত দেওয়ার কিছু নিয়ম এবং পরিমাণ রয়েছে। যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে শতকরা ২.৫ টাকা। আর আপনার কাছে যদি এক লক্ষ টাকা থাকে তাহলে আপনাকে ২৫০০ টাকা যাকাত প্রদান করতে হবে। এই অনুপাতে যাকাত প্রদান করতে হয়।
কোন হিজরীতে যাকাত ফরজ করা হয়:
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কোন নারী অথবা পুরুষ যদি এক বছর নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক থাকে তাহলে তার সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিবার ওপর গরিব রোগীদের মধ্যে বন্টন করতে হয়। এই বিধানকে যাকাত বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস / রমজানের করনীয় কি কি
তবে সেই সম্পদ হিজরির এক বছর সময় তার কাছে সম্ভব থাকতে হবে এবং সম্পদের মালিক নিজেই হতে হবে। দ্বিতীয় হিজরী থেকে যাকাত ফরজ করা হয়।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
বর্তমান সময়ে অনেকেই যাকাতের বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। কারণ সম্পদের যাকাত প্রদান না করলে সম্পদ হারাম হয়ে যায়। এবং যাকাত প্রদান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সেটা আমরা অনেকেই জানিনা।
ইসলামের যাকাতের সম্পূর্ণ বিধান রয়েছে। এবং কত পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হবে সেটাও উল্লেখ রয়েছে। যদি একজন ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
নিসাব পরিমান সম্পদ হলো সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রূপ। যদি কোন ব্যক্তির কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ। বর্তমান সময়ে সোনার হিসাব করে যাকাত প্রদান করা হয় তাহলে ৬ লাখ টাকার মালিক হতে হবে।
আর কেউ যদি বর্তমানে রুপর দাম হিসেবে যাকাত প্রদান করে তাহলে ৬০ হাজার টাকা মালিক হলে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। তবে সেই টাকার মালিক সে নিজে হতে হবে। তার কাছে সেই টাকা হিজরীরা এক বছর থাকতে হবে। এবং সেই টাকা তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তাহলে সেই সম্পদ এর যাকাত ফরজ হবে।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
ইসলামিক একটি সামঞ্জস্য জীবন ব্যবস্থা। এখানে সকল কিছুর সুষ্ঠ দিক নির্দেশন রয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ। কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- সোনা ও রুপার অলংকার
- নগদ অর্থ
- মূল্যবান ধাতু
- বাণিজ্যিক পণ্য
- উৎপাদিত কৃষি ফসল
- পশু সম্পর্কে। ৪০টি ওপর ছাগল বা ভেড়া এবং ৩০টির উপর গরু মহিষ থাকলে যাকাত দিতে হবে।
সাধারণত এসব জিনিসের যাকাত প্রদান করতে হয়। তবে যাকাতের পরিমাণ উপরে আলোচনা করা হয়েছে। সেই হিসাবে যদি আপনার সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত ২০২৩?
যদি আপনার কাছে ৭.৫ ভরি বা তার থেকে বেশি পরিমাণ স্বর্ণ থাকে তাহলে আপনাকে টাকার প্রদান করতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন করে এক ভরি স্বর্ণের যাকাত কত। এটা সঠিক করে বলার সম্ভাবনা। কারণ, স্বর্ণের বিভিন্ন প্রকারভে রয়েছে বাংলাদেশ তিন রকমের সোনা পাওয়া যায়। নিম্নে ১ ভরি স্বর্ণের যাকাতের পরিমান তুলে ধরা হলো:
স্বর্ণের ধরন |
বাজার মূল্য |
১ ভরি স্বর্ণের যাকাত |
২২ ক্যারেট |
৯৭০০০ |
২৪২৫ |
২১ ক্যারেট |
৯৩০০০ |
২৩২৫ |
১৮ ক্যারেট |
৭৯০০০ |
১৯৭৫ |
গড় |
৮৯৬৬৭ প্রায় |
২২২৫ প্রায় |
বর্তমানে ১ ভরি স্বর্ণের যাকাত প্রায় ২২২৫ টাকা। তবে অন্যের বাজার সব সময় এক থাকেনা। এই কারণে যাকাতের পরিমাণও কম বেশি হয়ে থাকে।
যাকাতের বিবরণ কবে প্রকাশিত হয়
ইসলাম ধর্মের একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এখানে একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিভাবে জীবন যাপন করবে সম্পন্ন কিছুর আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামের বিধান সম্পূর্ণভাবে কায়েম করলে কোন দেশে কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাকাত।
হিজড়ের দ্বিতীয় সনে যাকাতের বিবরণী প্রকাশ করা হয়। সেখানে যাকাত সম্পর্কে সম্পন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদের বৃদ্ধি হয়। এলাকার ফকির মিসকিন যারা রয়েছে তারা উপকৃত হয়।
যাকাত কাকে দিতে হবে স্বামী নাকি স্ত্রী?
আমাদের সমাজে যাকাত নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। যাকাত কাকে দিতে হবে স্বামী নাকি স্ত্রী? এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সম্পদের মালিকানার উপর। যদি স্বামী সম্পদের মালিক হয় তাহলে সে সম্পদের যাকাত দিবে।
আরও পড়ুনঃ ওযু নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
আর যদি সম্পদের মালিক স্ত্রী হয় তাহলে তার সম্পদের যাকাত তাকে দিতে হবে। এখানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি যাকাত দেওয়ার মত সম্পদের মালিক তাকেই যাকাত প্রদান করতে হবে।
কারা যাকাত নিতে পারবে কারা?
যাদের সম্পদ রয়েছে তাদের উপর যাকাত ফরজ। তবে যাকাত দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। সকল ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না। যেসব ব্যাক্তিরা যাকাত পাবার যোগ্য তাদেরকেই যাকাত প্রদান করতে হবে। কোন কোন শ্রেণীর লোক জাকাত পাবে নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- ফকির
- অভাবগ্রস্ত মিসকিন
- ঋণগ্রস্ত ব্যাক্তি
- দাস মুক্তির জন্য
- বিপদগ্রস্ত মুসাফির
- নও মুসলিম
- যাকাত আদায়কারী
সাধারণত এইসব ব্যক্তিদেরকে যাকাত প্রদান করা হয়। তারাই যাকাতের সঠিক ব্যাক্তি। এছাড়াও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যদি কেউ ঋণগ্রস্ত থাকে তাহলে তাকেও প্রদান করতে পারেন।
শেষ কথা: বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যদি কোন ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরে যাকাত প্রদান না করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। কারণ, ইসলামের পাচর্টি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। এই কারনে যাকাত দেওয়ার মতো অর্থ সম্পদ থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
যাকাত প্রদান করলে সম্পদ পবিত্র এবং বৃদ্ধি পায়। যাকাত প্রদান করলেন সম্পদ কমে না। ইসলামের বিধান মেনে চললে অবশ্যই যাকাত প্রদান করতে হবে। বর্তমান সময় যদি সোনার হিসাবে কোন ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে তাহলে তার কাছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার মত থাকতে হবে।
এবং সেই টাকা হিজরি এক বছর তার কাছে থাকতে হবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।