বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা
পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। পাটের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Jute (জুট)। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পাট শিল্প স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ হল সোনালী আঁশের দেশ। বাংলাদেশের প্রথম জুট মিল এর নাম হল বাওয়া জুট মিল। এই জুট মিল স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পাট শিল্পের সূচনা হয়। পরবর্তীতে আবার একই এলাকায় আরও বিভিন্ন পাটকল স্থাপিত হয়। তার মধ্যে এশিয়ার বিখ্যাত পাটশিল্প আদমজী পাট শিল্প।
কিন্তু পাট শিল্পের এখন বেহাল দশা। পাট শিল্প এখন বিলূপ্তপ্রায়। এক সময় পাট শিল্প ছিল বাংলাদেশের একমাত্র মেরুদন্ড। বাংলাদেশের মোট রপ্তানী আয়ের প্রায় ৮৭ শতাংশ আসত পাট থেকে। বাংলাদেশের কৃষকের উপার্জনের একমাত্র উৎস ছিল সোনালী আশ পাট। এখন বাংলাদেশের কৃষক সম্প্রদায় পাট উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের পাটকলের আজ বেহাল দশা।
নিম্নে বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হল:
বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা:
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬৭টি ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিত্যক্ত পাট শিল্প তদারকির এবং পরিচালনার জন্য গড়ে তোলেন “বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পেরেশন”। তিনি পাট শিল্পকে অনেক ভালবাসতেন এবং পাট শিল্পের উন্নয়নে জোড়ালো ভাবে কাজ করে গেছেন।
তিনি পাট শিল্পকে অনেক গুরুত্ব দিতেন। কারন তিনি জানতেন বাংলাদেশের আয়ের একমাত্র উৎস হল পাট। কারন সে সময় পাট বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই তিনি পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক জোড়ালো ভাবে কাজ করে গেছেন।
আরও দেখুনঃ বাংলাদেশের গার্মেন্টস্ শিল্প কারখানার বর্তমান পরিস্থিতি
কিন্তু সেই পাট শিল্পের আজ ভয়াবহ অবস্থা। পাটের অভাবে পাট শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায়। আগের তুলনায় বাংলাদেশের পাট উৎপাদন কমে গেছে বহুলাংশে। পাট উৎপাদনে কৃষক এখন আগের মত এতটা তৎপর নয়। পাট উৎপাদনে কৃষক আজ উদাসীনতা প্রকাশ করতেছে। পাটের অভাবে পাট শিল্পগুলো প্রায় বন্ধের উপক্রম।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের শেষদিকে রাষ্ট্রপতির ৫৭ নং অধ্যাদেশে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এর মাধ্যমেই পাট রপ্তানি ও ব্যবসায় বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু এতে পাটচাষী বা পাটকল শ্রমিকদের কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো বছরের পর বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সোপান পাট বিশ্বরাজনীতির শিকার হয়।
সোনালী আশের বাংলাদেশ:
বিজেএমসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রনাধীন পাটকলের সংখ্যা ৩২টি। ২০০২ সালের ৩০ জুন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলবন্ধ করে দেয়। সুতরাং আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার দায় পাশ কাটিয়ে বেসরকারি মালিকানাকে উৎসাহিত করার ফলাফল সব সময় ভালো হয় না।
বাংলাদেশের অসংখ্য পাট শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায়। এর একমাত্র কারন হল পাটের উৎপাদন কমে গেছে। পাটচাষী আজ পাট উৎপাদনে উদাসীন। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে আমাদের দেশের পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। পাটচাষীদের আমাদের উৎসাহিত করতে হবে এবং পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাংলাদেশকে পুনরায় সোনালী আশের দেশে পরিনত করতে হবে।