সিজারের পর পেট কমানোর উপায়
মা হওয়ার পর প্রতিটি নারীর শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। কারণ এই সময় শরীরে প্রচুর পরিমাণ মেদ জমে। যার কারণে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। শরীরের ওজন বৃদ্ধির কারণে ফিগার নষ্ট হয়ে যায়। পছন্দের কাপড় শরীরে ফিট হয় না। এসব নিয়ে অনেক নারী হতাশায় ভোগে।
সিজারের পর পেট কমানোর উপায় রয়েছে। সিজার করার পর নারীদের পেটে মেদ জমে। সিজার করার পর ঠিকমতো কাজ করা বা চলাফেরা করা যায় না। এসব কারণে পেটে মেদ জমে এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। সিজারের পর পেট কমানোর উপায় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পেটের মেদ কমে কি?
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের পেটে মেদ রয়েছে। এসব হয় অনিয়মিত চলাফেরা এবং খাবার খাওয়ার কারণে। অনেকেই আছে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খায়। এবং ঠিকমতো শরীরচর্চা বা শারীরিক পরিশ্রম করে না। এসব কারণে আস্তে আস্তে পেটের মেদ জমে এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুনঃ প্যারালাইসিস কেন হয়? প্যারালাইসিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
অনেকেই জানতে চায়, পেটের মেদ কমে কি? পেটের মেদ কমে। তবে তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী চলাফেরা করতে হয়। বিশেষ করে খাবার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত খাবার খাওয়া না পড়ে। এবং প্রতিদিন সকাল বিকাল ব্যায়াম করতে হবে। তাহলে পেটের মেদ কমবে।
পেটের মেদ কমানোর উপায়:
পেটে মেদ হলে আমাদের দেখতে খুব খারাপ লাগে। আমাদের শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও পছন্দের কাপড় আমাদের শরীরে ফিট হয় না। চলুন জেনে নেই পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে:
- দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
- কোন বেলার খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।
- আনমনে খাওয়া পরিহার করতে হবে।
- সঠিক সময় ঘুমাতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- মানসিক চাপ পরিহার করতে হবে।
- রাতের খাবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে খেতে হবে।
সিজারের পর পেট বড় হয় কেন?
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ডেলিভারি হয় সিজারের মাধ্যমে। সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হওয়ার কারণে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়। বিশেষ করে সিজারের পর পেট বড় হয়। আমরা অনেকেই জানিনা, সিজারের পর পেট বড় হয় কেন? সিজার করার পর শারীরিক কোন পরিশ্রম করা যায় না।
যার কারণে সারাদিন বসে থাকতে হয়। এবং ডেলিভারির পর বাচ্চা যেন সঠিকভাবে দুধ পায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। এসব খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে মেদ জমতে শুরু করে। এইভাবে শুয়ে থাকা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ফলে সিজারের পর পেট বড় হয়।
সিজারের পর পেট ফোলার কারণ:
বর্তমান সময়ে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হয়ানো সাধারণ বিষয়। প্রসব ব্যথা শুরু হলে সাথে সাথে মেডিকেলে নেওয়া হয়। তারপর একটু সমস্যা দেখা দিলে সিজার করে ফেলে। এসব কারণে গর্ভবতী মায়েদের অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে সিজারের পর পেট ফুলে যায়।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চা নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি
সিজার করার ফলে পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যার কারণে পেটে সেলাই করতে হয়। পেটে সেলাই করার ফলে কিছুদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। ঠিকমতো হাটাহাটি করা যায় না। কোন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা যায় না। এসব কারণে শরীরে মেদ জমতে শুরু করে। সিজারের পর পেট ফোলার কারণ এটাই।
সিজারের পরে পেট কমানোর উপায়:
সিজার করার পর নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সাথে পেট বড় হয়ে যায়। এসব কারণে নারীরা অনেক চিন্তায় থাকে। কারণ তাদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এবং ইচ্ছা করলেও পছন্দের কাপড় চোপড় পরতে পারেনা। সিজারের পর পেট কামানোর উপায় নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করাতে হবে।
- ছয় সপ্তাহ পর থেকে শরীরচর্চা শুরু করতে হবে।
- হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে।
- পেটে বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।।
- সঠিক পরিমাণ খাবার সঠিক সময় খেতে হবে।
- মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
- চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায়:
সিজারের পর পেটের মেদ কমানোর উপায় অনেকে জানতে চাই। কারণ সিজার করার ফলে নারীদের পেটে মেদ জমে। এবং পেট বড় হয়ে যায়। যার কারণে নারীদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে সিজারের পর পেট কমানো যায়। নিম্নে উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:
- ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে ওজন কমে।
- বাচ্চা জন্মে তিন মাস পর থেকে ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
- সঠিক মাপে পেটে বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
- শসা এবং লেবু খেতে হবে।
সিজারের পর পেট কমানোর ব্যায়াম:
বাচ্চা হওয়ার পর নারীদের ওজন বাড়ে। এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কারণ এই সময় গর্ভের বাচ্চার পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা লাগে। এসব কারণে প্রাকৃতিক ভাবেই নারীদের ওজন এবং পেট বৃদ্ধি পায়। তবে সিজার করার পর অনেকের পেট বড় হয়ে যায়। সিজারের পর পেট কমানোর ব্যায়াম করলে ওজন কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ ব্যায়ামের উপকারিতা কি কি
তবে বাচ্চা হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ব্যায়াম করা যাবে না। সিজারের ৬ মাস পর থেকে সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে পারবেন। সিজারের পর পেট কমানোর ব্যায়াম নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- প্রথম অবস্থায় সকাল বিকাল হাঁটতে হবে।
- সাতার কাটতে হবে। যেনো পেটে টান না লাগে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- হস্তপদাসন ব্যায়াম করতে হবে।
- ত্রিকোণাসন ব্যায়াম করতে হবে।
- অর্ধচন্দাসন করতে হবে।
- ভদ্রাসন ব্যায়াম করতে হবে।
পেটের অপারেশনের পর ব্যায়াম কিভাবে শুরু করব:
আামাদের বিভিন্ন কারনে পেটের অপারেশন করতে হয়। বর্তমান সময়ে বাচ্চা হওয়ানোর কারণে পেটে অপারেশন করা হচ্ছে। পেটে অপারেশন করার ফলে পেটে মেদ জমে। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে পেটের অপারেশনর পর ব্যায়াম করলে শরীর ঠিক হয়ে যায়।
পেটের অপারেশন করলে পেটে শিলাই করা হয়। যার জন্য কিছু হলেই পেটে টান লাগে। এই করণে অপারেশন করা ৬ মাস পর থেকে ব্যায়াম করতে হবে। প্রথমে হাটা শুরু করতে হবে। তার পরে মেডিটেশন করতে হবে। ভার তোলা ছাড়া সকল ব্যায়াম করা যাবে। ব্যায়াম করা সময় লক্ষ রাখতে হবে যেনো পেটে আঘাত না লাগে।
ব্যায়াম ও ডায়েট করার পরও কেন পেটের চর্বি কমছে না:
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষে অতিরিক্ত ওজনের জন্য ভুগছেন। অনেক সময় ব্যায়াম ও ডায়েট করার পরও অনেকের পেটের চর্বি কমছে না। ব্যায়াম ও ডায়েট করার পরও চর্বি না কমার কারণ রয়েছে। নিম্নে কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
- ডায়েট চার্টে পুষ্টির উপাদান ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা যাচাই করতে হবে।
- ব্যায়াম করার সময় সঠিক ব্যায়াম করতে হবে।
- ওজন কমানোর জন্য দৌড়ানো প্রয়োজন। অনেকেই ভার উত্তোলন করে। এতে করে চর্বি কমে না।
- ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই পুশআপ দিতে হবে।
- সঠিক সময় ঘুমাতে হবে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ দূর করতে হবে।
সাধারণত ব্যায়াম ও ডায়েট করার পরও এসব কারণে পেটের চর্বি কমে না। তাই উপরের নির্দেশনা গুলো অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে। তাহলেই পেটের চর্বি কমবে।
সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর উপায়:
বর্তমান সময়ে সিজারের মাধ্যমে বেশিরভাগ বাচ্চা হচ্ছে। সিজার করে বাচ্চা হওয়ার ফলে পেটে কাটা দাগ পড়ে। অনেকেই সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর উপায় জানে না। তবে বর্তমানে সিজারের দাগ দূর করা যায়। সিজার করার পর সিলাই না করে আঠা ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম রয়েছে যেগুলো কাটা দাগ দূর করে। সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে সিজারের দাগ দূর করা যায়। সিজার করার পর ঘা শুকিয়ে গেলে সেখানে, লেবুর রস, এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে খুব সহজে দূর হয়ে যায়।
মহিলাদের পেটের দাগ দূর করার ক্রিম এর নাম:
মহিলাদের গর্ভধারণের সময় পেটে দাগ পড়ে। এছাড়াও সিজার করার ফলে পেটে দাগ পরে। এসব দাগ থাকলে দেখতে খুব খারাপ লাগে। তবে বর্তমানে মহিলাদের পেটের দাগ দূর করার ক্রিম রয়েছে। নিম্নে, মহিলাদের পেটের দাগ দূর করার ক্রিম এর নাম তুলে ধরা হলো:
- Stretch Marks
- Efero Breast Enhncement Cream
- Ignite Mather Crean
- Mango Remove Pregnancy Scars Cream
সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম:
সিজার করার পর পেটে সেলাই করতে হয়। যার কারণে চলাফেরা করতে অনেক সমস্যা হয়। তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য পেটে বেল্ট ব্যবহার করতে হয়। সিজারের পর বেল পরার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে পেটের কাপড় সঠিকভাবে রাখতে হবে। তারপর বেল্ট লাগাতে হবে।
বেল্ট এমনভাবে লাগাতে হবে যেন খুব সহজে বেল্টের মধ্যে দুই আঙ্গুল ঢোকানো যায়। তা না হলে পেটের উপর চাপ পড়ে। চাপ অবস্থায় চলাফেরা করলে পেটে ব্যথা লাগতে পারে। এই কারণে একটু ঢিল করে বেল্ট পরতে হবে। তবে অতিরিক্ত ঢিল করা যাবে না।
সিজারের পর পেট শক্ত:
সিজার করার পর অনেক ধরেন সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে পেট ফুলে যাওয়া বা পেট শক্ত হওয়া। এসব হয় নিজেদের চলাফেরার ভুলের কারণে। যদি সিজারের পর পেট শক্ত হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং যেসব খাবার খেলে পেটে গ্যাস হয় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডেলিভারির পর পেট কমানোর উপায়:
অনেক সময় ডেলিভারির পর পেট বড় হয়ে থাকে। এসব হয় গর্ভবতী অবস্থায় শারীরিক পরিবর্তন এর কারণে। তবে সব সমস্যা কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ঠিক হয়ে যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে হয় না। যদি অতিরিক্ত পেট বড় হয় তাহলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
এবং খাবার খাওয়ার সময় চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। সঠিক সময় ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত মানসিক টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং বাচ্চাকে গর্বের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে খুব সহজে পেট কমে যাবে।
শেষ কথা: সিজারের পর পেট কমানোর উপায়
বর্তমান সময়ে সিজার করে বাচ্চা হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কেউ কিছু মনেই করে না সিজার করে বাচ্চা হলে। সিজার করে বাচ্চা হলে মায়ের অনেক শারীরিক সমস্যা হয়। বিশেষ করে পেট ফুলে থাকে এবং ভারী কোন কাজ করতে পারে না। তবে বর্তমানে সিজারের পর পেট কমানোর উপায় রয়েছে।
সিজার করার পর অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে চলাফেরা করতে হবে। কারণ একটু ভুলের কারণে শারীরিক অনেক সমস্যা হতে পারে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।