বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা ও বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা
বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা ও বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা
বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা (Needs of Adolescence):
১. যৌন চাহিদা:
২.মর্যাদার চাহিদা:
৩.স্বীকৃতির চাহিদা:
৪. সামাজিক চাহিদা:
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের পরিচিতির গণ্ডী অনেকদূর বিস্তৃত হয়। বৃহত্তর সমাজ জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে তারা জীবন যাপন করতে চায়; সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে চায়। এই সময় দলে অংশগ্রহণ করে এবং দলের সাথে নিজেদের অভিন্ন কল্পনা করে তারা নিরাপদ বােধ করে।
তারা সেবামূলক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, সমাজ কল্যাণমূলক দল ইত্যাদি গঠন করে সমাজের মূলস্রোতে মিশে যেতে চায় এবং এর মধ্যে জীবনের নিরাপত্তা খুঁজে পায়।
৫. স্বাধীনতার চাহিদা:
এ বয়সে ছেলেমেয়েরা নিজেদের সমাজের অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির মতাে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়। বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীন মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং অন্যের কর্তৃত্ব মানতে চায় না।
বয়স্করা তাদের এই মনােভাবকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাল চোখে দেখে না বলে দমন করার চেষ্টা করেন।
৬. নতুনত্বের চাহিদা:
বয়ঃসন্ধিকালে নিত্যনতুন চাহিদা ছেলেমেয়েদের ব্যাকুল করে তােলে। হাল ফ্যাশনের পােশাক, জুতা, চুলের ছাঁট ইত্যাদির প্রতি যেমন তাদের আগ্রহ বাড়ে, তেমনি নতুন বই, কলম, নতুন জায়গায় ভ্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় । অজানাকে জানার চিরন্তন বাসনা ও অনুসন্ধিৎসা তাদের নতুন নতুন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
৭. জ্ঞানের চাহিদা:
এ সময়ে বুদ্ধি বিকাশের ফলে ছেলেমেয়েরা যে কোন বিষয়কে বিস্তারিতভাবে জানবার জন্য প্রবল তাগিদ অনুভব করে। মেয়েরা এই বয়সে কাব্য, সাহিত্য, নাটক, উপন্যাস, ইতিহাস ইত্যাদির প্রতি কৌতুহলী হয়। আর ছেলেদের মধ্যে আবিষ্কারের বই, বিজ্ঞানের বই, দর্শন, ইতিহাস এই জাতীয় পুস্তকের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়।
৮. দুঃসাহসিক অভিযানের চাহিদা:
বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের ফলে বিশ্ব প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় জানবার এক দুর্নিবার কৌতুহল ও আগ্রহ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে এই বয়সের ছেলেদের মধ্যে দুঃসাহসিক অভিযানের চাহিদা লক্ষ্য করা যায়।
বয়স ও বুদ্ধি বাড়লেও সেই অনুপাতে মানসিক পরিপক্কতা আসে না বলে তারা এমনসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে চায় বা অনেক সময় করে বসে, যা সাধারণ মানুষ চিন্ত ও করতে পারে না। আত্মপ্রকাশের চাহিদাই ব্যক্তিকে দুঃসাহসিক কাজে প্ররােচিত করে।
৯. স্নেহ ভালবাসার চাহিদা:
স্নেহভালবাসার চাহিদা মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। কিশাের-কিশােরীরা পিতামাতা, ভাইবােনের ভালবাসা যেমন পেলে চায়, তেমনি অন্যকেও ভালবাসতে চায়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক খুব আ- রিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হলে, সহপাঠীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে এর ভিতর দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভালবাসার চাহিদা তৃপ্ত হয়।
শিশু কিশােরদের মানসিক স্বাস্থ্য তাদের বিভিন্ন চাহিদার পরিতৃপ্তির উপর নির্ভর করে। শিশুর জীবনের অস্তিত্বের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রয়ােজন। খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে দেহের স্বাস্থ্য বজায় থাকে না। একইভাবে সামাজিক চাহিদার পরিতৃপ্তির অভাবে শিশু ও কিশােরদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষুন্ন হয়।
আরও দেখুনঃ বয়:সন্ধিকাল কি, কেন এবং বয়:সন্ধিকালের বৈশিষ্ট্য
ফলে তাদের মনােজগতে প্রাক্ষোভিক বিশৃংখলা দেখা দেয় এবং পরিবেশের সাথে সুষ্ঠুভাবে খাপ খাওয়ানাে তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদার অতৃপ্তির ফলে যে সব সমস্যা কিশাের কিশােরীদের মধ্যে দেখা যায়, সেগুলাে নিচে আলােচনা করা হলাে-
১. শৃঙ্খলা ভঙ্গ:
২. স্কুল পালানাে:
৩. অসামাজিক আচরণ:
৪. আক্রমণাত্মক মনােভাব:
৫. যৌন অপরাধ:
৬. প্রাক্ষোভিক চাহিদা:
৭. অবাঞ্ছিত আচরণ:
ছেলেমেয়েদের আত্মপ্রকাশের চাহিদা যদি অপূর্ণ থাকে, বাবা-মা যদি ছেলেমেয়েদের সবসময় নজরের মধ্যে রাখেন বা বাড়িতে আটকে রাখেন, তবে ছেলেমেয়েরা নিজেদের প্রকাশের অপেক্ষায় থাকে এবং অনেক সময় তারা এমন সব হীন কাজ করে বসে যা মােটেও বাঞ্ছনীয় নয়।
৮. নীতিবােধের অভাব:
কৈশােরে ছেলেমেয়েরা নীতিবােধের ব্যাপারে সজাগ থাকে। কিন্তু যখন তারা বড়দের কথা ও কাজে সঙ্গতি খুঁজে পায় না, তখন তাদের চিন্ত ধারার সাথে বড়দের আচরণের সংঘর্ষ ঘটে এবং এর প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে তারাও নীতিবােধ হারিয়ে ফেলে।
৯. হতাশা:
এ বয়সের ছেলেমেয়েদের আত্মপ্রকাশের চাহিদা বার বার বাধাপ্রাপ্ত হলে তার মধ্যে হতাশা দেখা যায়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তার আগ্রহের অভাব দেখা যায় এবং পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
১০. অপরাধ প্রবণতা:
নতুনত্বের চাহিদা বা দুঃসাহসিক অভিযানের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তারা অনেক সময় অশ্লীল বই পড়ে, সিনেমা দেখে, অনেক ধ্বংসাত্মক আচরণে লিপ্ত হয়। এ ধরনের আচরণ পরবর্তীতে অপরাধমূলক আচরণে রূপ নেয়।
উপরােক্ত আলােচনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, বয়ঃসন্ধিকালে চাহিদা অতৃপ্তির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই তাদের চাহিদা যাতে যথাযথভাবে পূরণ হতে পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা কিশাের কিশােরীদের বিকাশ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতা, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রত্যেকের উচিত।
এই চাহিদাগুলো যদি পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হয় তাহলে সে পরিবেশের সাথে সুষ্ঠুভাবে উপযোজন করতে পারে। আর যদি চাহিদাগুলো তৃপ্ত না হয় তবে চাহিদার অতৃপ্তি তার মনোজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এর বহিঃপ্রকাশ তার আচরনের মধ্য দিয়ে ঘটে।