বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায়
|

বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায়

আমরা নরমালী বাচ্চাদের নিয়ে একটু বেশি পরিমানেই চিন্তায় থাকি, তাঁর উপরে যখন আবার কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি আমাদের চিন্তার শেষ থাকেনা। তেমনি যখন আমাদের নবজাতক বা বাচ্চাদের হেঁচকি উঠে তখন খুব চিন্তায় পড়ে যায় এবং বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায় খুজে বেড়ায়।

হেঁচকি উঠা যে শুধুমাত্র যে বাচ্চাদের এমনটা কিন্তু না, বয়স্ক থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মানুষেরই এই সমস্যা হতে পারে এবং এটি অতি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তারপরেও বাবা মায়ের চিন্তার শেষ থাকেনা তাদের আদরের বাচ্চাদের হেঁচকি উঠার মতো সমস্যা দেখা দিলে।

আরও পড়ুন বিস্তারিতঃ  একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ

আর তাই আজকে আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য হেঁচকি বন্ধ করার উপায় হিসাবে কিছু টিপস নিয়ে চলে এসেছি এই পোস্টের মাধ্যেমে। তাই চলুন দেরি না করে মুল আলোচনায় যাওয়া যাক।

শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি কেন উঠে?

এই পর্যায়ে আমরা জেনে নিবো যে একটি শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা কি কারণে হতে পারে এবং হেঁচকি উঠার কি কারন হতে পারে। আমরা জানি যে সাধারণত হেঁচকি ওঠার কারণ হচ্ছে শিশুর ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদায় অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

আপনারা যারা জানেনা তাদের উদ্দেশ্য বলছি যে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিচে থাকে। শিশু খাবার খেতে খেতে যদি কোন কারণে ডায়াফ্রামের উপর চাপ পড়ে ঠিক তখনই শিশুর হেঁচকি উঠতে থাকে। আশা করি এখন বাচ্চাদের হেঁচকি উঠার কারন কি সেটা বুঝে গিয়েছেন।

বাচ্চাদের বা শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা বন্ধের টিপস

১. আপনার শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ খেয়ে থাকে তাহলে হেঁচকি ওঠার সাথে সাথে শিশুকে খানিকটা বুকের দুধ খাওয়ান। এতে করে বাচ্চার খাবারের পথ নরম ও মসৃণ করবে এবং ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

২. ধরুন আপনার শিশু যদি মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খেয়ে থাকে, তাহলে হেঁচকি উঠলে শিশুকে নরম খাবার খেতে দিন। নরম খাবারের ভেতরে দিতে পারেন আপেলের সস, রাইস সিরিয়াল, চটকানো কলা এগুলা বেশ ভালো সমাধান হতে পারে আপনার বাচ্চার হেঁচকি বন্ধ করার উপায় হিসাবে।

৩. এছাড়াও যদি আপনার শিশুর বয়স ১ বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সাধারণ তরল পানি খেতে দিন। পানি পান করার ফলে ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে এই বয়সে আপনার শিশুকে গ্লাসে করে পানি না খাওয়ানোই শ্রেয়। যতটুকু সম্ভব আপনি চাইলে এই বয়সের শিশুর জন্য নিপলযুক্ত ওয়াটার বটল ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে আপনার শিশু অনেকটাই সেভ থাকবে।

৪. আমাদের সকলকেই একটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে যে শিশুকে তাড়াহুড়া করে কোন কিছু খাওয়ানো যাবে না। তাই শিশুকে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে অল্প অল্প করে খাবার খাওয়াতে হবে। আপনার শিশু যদি খেতে না চায় তাহলে জোর করে খাওয়াবেন না।

৫. আপনার বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর সময় যদি পজিশন ঠিক না করে খাওয়ান তাহলে সেটির কারণেও হেঁচকি উঠতে পারে। তাই বাচ্চাকে যখন খাওয়াবেন, চেষ্টা করবেন বাচ্চা যাতে করে সোজা হয়ে বসে থাকে। এতে করে ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক জায়গায় থাকে এবং খাবার চলাচলে কোন সমস্যা হয় না।

৬. যদি শিশুর অনেক বেশি হেঁচকি উঠতে থাকে, তাহলে শিশুর খাওয়া বন্ধ করুন। তাকে চিত করে শোয়ান এবং পিঠে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এতে ডায়াফ্রাম এর অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

৭. যদি শিশুর হেঁচকি নিয়মিত হয়, তাহলে ফার্মেসি থেকে Gripe Water এনে রাখতে পারেন। Gripe Water হচ্ছে আদা, ইথার, ফেনল এবং আরো কিছু ক্যামিক্যালের মিশ্রণ। Gripe Water দুই ফোঁটা পানির সাথে মিশিয়ে ড্রপারে করে শিশুকে খাওয়ালে হেঁচকি কমে যাবে।

৮. হেচকি উঠলে মাঝে মাঝে বাচ্চার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিলেও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। যেমন শিশুর হেঁচকি উঠলে তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন অথবা ঝুনঝুনি জাতীয় কোন খেলনা এনে দিন, বা এমন কিছু দেখান যা শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এতে হেঁচকি অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়।

আরও পড়ুন বিস্তারিতঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ

হেঁচকি বন্ধ করতে যেসব থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।

আমাদের মাঝে অনেকে রয়েছেন যারা না জেনেই নিচের জিনিসগুলো হেঁচকি বন্ধ করার জন্য করে থাকেন যা অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে ব্যথা দিতে পারে। যেমন –

  • আপনার শিশুকে চমকে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হয়তো অনেক সময় কাজ করে কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে।
  • শিশু মুখের ভেতর আঙ্গুল ঢুকাবেন না।
  • শিশুকে ঝাঁকাবেন না। এতে শিশুর বমি হতে পারে।
  • মাথায় বা গলায় অযথা চাপড় দেবেন না।
  • পিঠে ম্যাসাজের বদলে চাপড় মারবেন না।
  • আগেই বলেছি হেঁচকি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে শিশুর বেশি অস্বস্তি হলে উপরের টিপস গুলো মেনে চলে শিশুর হেঁচকি কমানো সম্ভব।

হেঁচকি থামানোর উপায় । বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায়

আপনারা যদি ঘরোয়াভাবে হেঁচকি থামানোর চেষ্টা করে থাকেন তাহলে আপনাকে সেক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রথম নীতিটি হচ্ছে রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া যেন শ্বাসনালীতে খিঁচুনি বন্ধ হয়।

এবং দ্বিতীয়টি হলো শ্বাসপ্রশ্বাস ও গলধকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা ‘ভ্যাগাস’ স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানো যায়।

  1. কাগজের ব্যাগে নিশ্বাস ফেলা (ব্যাগ মাথা দিয়ে ঢুকাবেন না)
  2. দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া
  3. বরফ ঠাণ্ডা পানি খাওয়া
  4. কিছু দানাদার চিনি খাওয়া
  5. লেবুতে কামড় দেয়া বা একটু ভিনেগারের স্বাদ নেয়া
  6. স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা

আরও পড়ুন বিস্তারিতঃ শারীরিক বৃদ্ধির প্রভাবকসমূহ/বাধা সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ

আপনারা যদি সতর্কতার সহিত উপরের দেওয়া উপায় গুলো ফলো করে থাকেন তাহলে খুব সহজেই আপনি বাচ্চাদের হেঁচকি বন্ধ করার উপায় হিসাবে এগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন। বড়দের ক্ষেত্রেও উপরের কিছু কিছু জিনিস কাজে লাগবে হেঁচকি বন্ধ করার জন্য।

আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। আপনি চাইলে আমাদের এই পোস্ট গুলো আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানার সুযোগ করে দিতে পারেন। আপনার শেয়ারের মাধ্যেমে অনেকেই উপকারিত হতে পারে।

আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। এতে করে নতুন নতুন টপিক গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজের কাজে সেগুলোকে প্রপারলি কাজে লাগাতে পারবেন।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধের নাম বা ১০ টি ঔষধ আপনারা সবাই বাসায় রাখবেন

    প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধের নাম বা ১০ টি ঔষধ আপনারা সবাই বাসায় রাখবেন=> আজকে আমরা কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ সম্পর্কে জেনে নিবো যেগুলো প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনেক কার্যকরী। হাতের কাছে এই সমস্ত ঔষধ রাখলে অনেক সময় ছোট খাটো সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। তাই আপনার চাইলে এই ১০টি ঔষধ সবাই নিজেদের বাসায় রাখতে পারেন।  চলুন তাহলে জেনে নেওয়া…

    শেয়ার করুন
  • ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত

    ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত => ডায়াবেটিস প্রতিটা মানুষের শরীরের রয়েছে। তবে ডায়াবেটিসের নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। মাত্র অতিরিক্ত ডায়াবেটিস সেটাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি। ডায়াবেটিসের মাত্রা নির্ণয় করতে হয়। ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের সাহায্যে। ডায়াবেটিসের মাত্রা সঠিক না থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত? অনেকেই জানতে চাই। কারণ, বর্তমান সময়ে প্রতিটি ঘরে…

    শেয়ার করুন
  • মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা

    মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা দরকার। কেননা আমাদের সারাদিনের খাবার তালিকায় মসুর ডাল থাকেই। এই কারণে আমাদের জানা দরকার ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা। মসুর ডাল একটি পুষ্টিকর খাবার। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে যা মাংসের চাহিদা পূরণ করে। মসুর ডালের অনেক ধরনের খাদ্যের উপাদান থাকে। মসুর ডাল শরীরের কলেজ কলেস্টেরলের…

    শেয়ার করুন
  • ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে

    দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫৩৭ মিলিয়ন মানুষ, দাঁতের বয়স ২০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে তারা সকলেই ডাইবেটিস রোগে ভুগছেন। বর্তমানে বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কিনা অনেকেই জানতে চায়। ডায়াবেটিক চলে সাধারণত রক্তের মিষ্টির উপাদান বৃদ্ধি পায়। এবং শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন…

    শেয়ার করুন
  • গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা / ৩ মাসের গর্ভবতী লক্ষণ

    গর্ভধারণ একজন মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় আনন্দ, উদ্বেগ, শঙ্কা ইত্যাদি নানা অনুভূতি মিলে আচ্ছন্ন থাকে গর্ভবতী মায়ের মন। প্রথমদিকে কিছু বোঝা না গেলেও প্রথম তিন মাস সকল  গর্ভবতী মায়ের কাছে ভীষণ অন্যরকম বলে মনে হয়। নতুন প্রাণীর আগমনের সংবাদ আনন্দিত করে তুলে নতুন মায়ের জীবন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা / ৩…

    শেয়ার করুন
  • মধুর উপকারীতা ও পুষ্টিগুণ

    মধুর উপকারীতা ও পুষ্টিগুণ আরবি পরিভাষায় মধুপোকা বা মৌমাছিকে ‘নাহল’(نحل) বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এই নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা বিদ্যমান আছে। সূরা নাহল এর আয়াত-৬৯ এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- “তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। “মধু হচ্ছে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই। মধুকে বলা হয়- বিররে এলাহি…

    শেয়ার করুন