টিন সার্টিফিকেট কি? টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন
টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন বিষয়টি আসলে কি আমরা অনেকে হয়তো এটি জানিনা। আজকে আলোচনার দ্বারা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। প্রতিটি দেশের নাগরিককে অবশ্যই এ বিষয়ে অবগত থাকতে হবে।কথা না বাড়িয়ে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব বা কর। যদি কোন ব্যক্তির জমি,বাড়ি,গাড়ি,টাকা-পয়সা এই পরিমাণ থাকে যে সে ব্যক্তিকে সরকারকে কর প্রদান করতে হবে,তাহলে সরকার কর্তৃক তাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
যার দ্বারা উক্ত ব্যক্তি কর প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।এটি আমাদের একটি সামাজিক দায়িত্ব। টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন করতে হলে বাংলাদেশ কর ও রাজস্ব বোর্ড ওয়েবসাইটে ইন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
আজ আমরা টিন সার্টিফিকেট অনলাইনে কিভাবে আবেদন করব এবং এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানবো ।
(১) টিন নম্বর কি?
TIN এর অর্থ হল (Taxpayer Identification Number)।টিন নম্বর হলো একটি ১০ সংখ্যার বিশেষ নম্বর।যা সংশ্লিষ্ট কর অফিস প্রদান করে থাকে।এর প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার অঞ্চল,মধ্যের তিনটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার পদমর্যাদা এবং শেষ চারটি সংখ্যা দ্বারা করদাতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো
করদাতাকে অবশ্যই টিন নম্বর দ্বারা নিবন্ধিত হতে হয়। কারণ এই নাম্বারের সাহায্যে কর প্রদান করতে হয়। তাই টিন নম্বর অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সকলের জন্য।
(২) ই টিন সার্টিফিকেট কিভাবে পাব?
ই টিন সার্টিফিকেট হল ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নাম্বার।কর প্রদানের পূর্বে ই টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয় । এখন তাহলে প্রশ্ন হলঃ ই টিন সার্টিফিকেট কিভাবে পাব? আসুন তাহলে জেনে নিন।
ই টিন সার্টিফিকেট এর জন্য আপনাকে কোন অফিস আদালতে ঘোরাঘুরি করতে হবে না। বাসায় বসে অনলাইনে করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যাবে রেজিস্ট্রেশন অপশন।সরাসরি www.incometax.govt.bd এই ঠিকানায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন অপশনটিতে ক্লিক করলে এর পরবর্তী সকল ধাপগুলো চলে আসবে।
নির্ধারিত শূন্যস্থান পূরণ করে নিবন্ধিত হতে হবে ইমেইল বা ফোন নাম্বারের মাধ্যমে।ফরম পূরণ করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইমেইল বা ফোন নাম্বারে ই টি আই এন নাম্বার চলে আসবে।এক্ষেত্রে কোন টাকা লাগবে না।
(৩) টিন সার্টিফিকেট থাকলে কি রিটার্ন জমা দিতে হবে?
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে টিন সার্টিফিকেট থাকলে কি রিটার্ন জমা দিতে হবে?হ্যাঁ, অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হবে।
গত অর্থ বছর থেকে সরকার প্রত্যেক করদাতার বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে।যদিও আগে এই নীতিমালাটি ছিল না।কিন্তু এটা ভয়ের কিছু নেই কারণ টিন সার্টিফিকেট থাকলে যে কর দিতে হবে তা নয়। যাদের আয় শূন্য তাদেরকে কর দিতে হবে না।
পরবর্তী বছরে আয় হলে রিটার্ন এ সেটি উল্লেখ করে দিতে হবে। কিন্তু টিন সার্টিফিকেট থাকলে প্রতিবছর রিটার্ন বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে।
(৪) কত টাকা হলে কর দিতে হবে?
কর প্রদানের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে।প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে কর প্রযোজ্য নয়।কারণ সরকারের আদেশে,কোন ব্যবসায়ী ব্যক্তির বাৎসরিক আয় সাত লক্ষ টাকার অধিক তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কর বা রাজস্ব প্রদান করতে হবে।
আবার প্রতিটি নাগরিকের জন্যই এই আদেশ জারি করা হয়েছে যে,কারো আয় যদি তিন লক্ষ টাকার উপরে হয় তাহলে সে কর প্রদান করবে।
অন্যদিকে চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,যদি মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বেশি হয়ে থাকে তাহলে সরকারকে কর দিতে হবে। আশা করি বিষয়টি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
(৫) টিন সার্টিফিকেট লগ ইন
অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার পরে সার্টিফিকেটটি উত্তোলন করতে হয়।এখন কথা হল অনেকেই টিন সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পরও চিন্তিত হয়ে যায়।তাই এটিও জানা জরুরী যে টিন সার্টিফিকেট লগইন কিভাবে করব?
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
টিন নম্বর পাওয়া মানেই বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে লগইন করা যাবে।সার্টিফিকেট এর মধ্যে টিন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দুটোই উল্লেখ করা থাকে।যার মাধ্যমে খুব সহজেই লগইন করে কর প্রদান করা যায়।
কিন্তু সমস্যা হল সার্টিফিকেটটি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী বছর সমপরিমাণ আয় না হলে শূন্য আয়ের জন্য রিটার্ন কর জমা দিতে হয় যার কোন সুযোগ অনলাইনে নেই।আর সার্টিফিকেট থাকার পরও যদি কেউ পরপর তিন বছর সরকারকে কর না দিয়ে থাকে তাহলে এটি আইনত অপরাধ ধরা হয়।
(৬) টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন
টিন সার্টিফিকেট নতুন করে সংস্করণ করে হয়েছে ই-টিন সার্টিফিকেট।আগে এবং নতুন সকল সার্টিফিকেট পুনরায় ইলেকট্রনিক ভাবে করা হচ্ছে।অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করব সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো ।
(১) প্রথমে নিজস্ব একটি ইউজার আইডি তৈরি করে নিতে হবে।এরপর বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
(২) ওয়েবসাইটের হোম পেজ এ গিয়ে রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে রেজিস্ট্রেশন করার অনলাইন ফর্মটি চলে আসবে।
(৩) এ ফরমটিতে প্রতিটি অংশ ইংরেজিতে পূরণ করে নিজের ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
(৪) যে যে বিষয়গুলো প্রদান করতে হবে তা হল –
নিজের সংক্ষিপ্ত নাম
- আট অক্ষরের একটি পাসওয়ার্ড যা অবশ্যই মনে রাখতে হবে
- পুনরায় পাসওয়ার্ডটি লিখতে হবে
- আইডির অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য যেকোনো একটি প্রশ্ন বেছে নিতে হবে
- নির্বাচিত প্রশ্নের জন্য সঠিক উত্তর দিতে হবে।উত্তরটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে ।
- এরপর নাম,দেশ, একটি সচল মোবাইল নম্বর,ইমেইল এড্রেস, ভেরিফিকেশন লেটারের ঘরে ক্যাপচাটি বসিয়ে দেন।
- এখন রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপর মোবাইল নাম্বারে ভেরিফিকেশন কোড আসবে।
- কোডটি টিন এক্টিভেট ঘরে বসিয়ে এক্টিভেট বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপরোক্ত ধাপ গুলো সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
(৭) টিন সার্টিফিকেট ফরম
আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট তৈরী করার জন্য ফর্ম খুজে থাকেন অথবা মনে করেন যে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট ফরম পাবো বা কোথায় পাবো তাহলে আপনার জন্য আমরা নিচে টিন সার্টিফিকেটের ফর্ম সংযুক্ত করে দিলাম। যাতে করে আপনি খুব সহজেই সেটি খুজে পান এবং নিজের কাজে লাগাতে পারেন।
আপনি চাইলে এখান থেকে ক্লিক করেই টিন সার্টিফিকেট ফর্ম ডাউনলোড করে নিতে পারেন। টিন সার্টিফিকেট ফর্ম ডাউনলোড করুন।
(৮) টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি প্রয়োজন?
নিয়মিত কর প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যারা টিন সার্টিফিকেট করতে যাচ্ছেন তাদের অবশ্যই জানা উচিত যে এ বিষয়ে কি কি আপনার প্রয়োজন হতে পারে।তাহলে জেনে নেয়া যাক। টিন সার্টিফিকেট করতে নিম্নের তথ্যগুলো লাগবে।
- (১) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারটি
- (২) আবেদনকারীর নাম যেটি জাতীয় পরিচয় পত্রে উল্লেখ করা রয়েছে
- (৩) আবেদনকারীর পিতা ও মাতার নাম।এটি বাধ্যতামূলক
- (৪) আবেদনকারীর স্বামী বা স্ত্রীর নাম যদি থাকে তাহলে।এটি বাধ্যতামূলক নয়।
- (৫) আবেদনকারীর স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানাউপরোক্ত তথ্যগুলো ছাড়া টিন সার্টিফিকেট তৈরি করা যাবে না।এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট তৈরির ক্ষেত্রে।
(৯) টিন সার্টিফিকেট কি?
টিন সার্টিফিকেট ব্যক্তির পরিচয় পত্রের মতনই কাজ করে থাকে।আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের জন্য টিন সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ হারানো সিম বন্ধ করার উপায় বা সিম বন্ধ করার কোড
টিন সার্টিফিকেট প্রকারভেদ অনুযায়ী পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন–
- SSN: এটি সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড তৈরির জন্য প্রয়োজন।
- EIN: একজন কর্মীর ব্যবসায় বিষয়ক কার্যক্রমে প্রয়োজন
- ITIN: ব্যক্তির বাসস্থান, আবাসিক, অনাবাসিক এবং বৈবাহিক অবস্থার ক্ষেত্রে প্রয়োজন
- ATIN ও PTIN: বাংলাদেশে এ সার্টিফিকেট দুটির কোন প্রয়োগ ক্ষেত্র নেই এবং প্রয়োজনীয়তা নেই
(১০) টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে?
অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে টিন সার্টিফিকেট কি শুধু আয়কর প্রদানের জন্যই কাজে লাগে?না,এই সার্টিফিকেট আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই আমাদের কাজে লেগে থাকে।যেমন-
- ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য এটি প্রয়োজন হয়।
- ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়ার সময় টিন আইডি দিতে হয়
- কোন প্রকার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।
- গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে।
- প্রফেশনাল কোন কাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
- কোম্পানির শেয়ার ক্রয়,কিউরিটি ক্রয় বা নিজে কোন কোম্পানি বিল্ড আপ এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়
ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই প্রয়োজন হয়ে থাকে।
শেষ কথাঃ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি,দেশের নাগরিক হিসেবে,সকল নীতিমালা অনুসরণ করে নিয়মিত আয়কর প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব।সরকার রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।কারণ সরকারের আয়ের সিংহভাগই আসে এই কর থেকে।
উপরে আলোচিত নিয়ম অনুসরণ করে কর প্রদান উপযোগী যেকোনো ব্যক্তি টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন করতে পারবে।
এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।