ভূমিকম্প কাকে বলে এবং ভূমিকম্পের কারণ কি
ভূমিকম্প সকলের কাছেই পরিচিত শব্দ। ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি এলাকার নকশার পরিবর্তন করে দেয়। পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প।
সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলেও ভূমিকম্পের তেমন কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প কাকে বলে এবং ভূমিকম্পের কারণ কি। এ বিষয়টি প্রায় অনেকেরই অজানা। বর্তমান সময়ে ভূমিকম্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম ভূমিকম্প। এর কারণ হচ্ছে, মানুষ দিন দিন অনেক উঁচু স্থাপনা তৈরি করছে। যার ফলে একই জায়গায় অনেক মানুষ বসবাস করতে পারছে। কিন্তু ভূমিকম্পের ফলে স্থাপনা গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। যার ফলে একসাথে
নেক মানুষের মারা যাচ্ছে। এই কারণে বর্তমান সময় সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম ভূমিকম্প। চলুন জেনে নেই, ভূমিকম্প কাকে বলে এবং ভূমিকম্পের কারণ কি।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকম্প কি?
ভূমিকম্প এই শব্দটি সকলের কাছেই পরিচিত। কিন্তু ভূমিকম্প শব্দের অর্থ অনেকেরই জানা নেই। ভূমিকম্প শব্দের অর্থ মাটির স্পন্দন। ভূমি শব্দের অর্থ মাটি এবং কম্পন শব্দের অর্থ স্পন্দন বা ঝাকুনি। সাধারণভাবে বলতে গেলে মাটির কম্পন বা ঝাকুনি। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূগর্ভ।
ভূমিকম্প কাকে বলে?
কোন কারনে ভূ-অভ্যন্তরের কোন স্থান যদি ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে তখন তাকে ভূমিকম্প বলা হয়। ভূত্বকের উপরে বা নিচে শিলাস্তরের স্থিতিশীলতার বা অভিকর্ষীয় ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটার ফলে ভূপৃষ্ঠের সৃষ্ট আন্দোলনকে ভূমিকম্প বলে, অধ্যাপক স্ট্রেলারের মতে।
ভূমিকম্পের কারণ কি?
- প্রধান কারণ
- অপ্রধান কারণ
প্রধান কারণ:
- প্লেট সঞ্চালন
- অগ্নি উৎপাত
প্লেট সঞ্চালন:
আমরা জানি, পুরো পৃথিবী অনেকগুলো প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। প্লেটের উপর পলি পড়ে পৃথিবীর সৃষ্টি। প্লেটগুলো অনেক সময় সঞ্চালিত হয়। প্লেটগুলো সঞ্চালনের সময় একটি আরেকটির উপর উঠে যায়। একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের উপর ওঠার সময় ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়।
এই ঘর্ষণের সময় প্লেটগুলো কেঁপে ওঠে। এই কম্পন থেকেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও প্লেট অনেক সময় স্থানান্তরিত হয়। স্থানান্তরিত হওয়ার সময় মুখোমুখি ধাক্কা খায়। ধাক্কার ফলে এর দুটিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। কম্পন থেকে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। প্লেট সঞ্চালনের ফলে ভূপৃষ্ঠে ভাজের সৃষ্টি হয় এবং শিলাচ্যুতি হয়।
অগ্নী উৎপাত:
ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ম্যাগমা রয়েছে। লোহা, তামা, স্বর্ণ এ পদার্থগুলো গলিত অবস্থায় ম্যাগমা বলা হয়। এগুলো গলিত অবস্থায় ভূগর্ভে রয়েছে। কোন কারনে যদি ম্যাগমা গুলো ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে তাহলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
কারণ, ম্যাগমা উপরে ওঠার সময় বৃষ্টিতে মাটির উপর চাপের সৃষ্টি হয়। এবং চাপ থেকে কম্পন এর সৃস্টি হয়। এইভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ম্যাগমা গুলো উপরে উঠে আসে ভূ-অভ্যন্তরীন চাপের কারণে।
অপ্রধান কারণ:
- ভূগর্ভস্থ বাষ্প
- ভূগর্ভস্থ চাপ হ্রাস বা বৃদ্ধি
- তাপ বিকিরণ
ভূগর্ভস্থ বাষ্প:
ভূগর্ভস্থ বাষ্পের কারণে অনেক সময় ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে অনেক সময় বাষ্পের সৃষ্টি হয়। কারণ ভূ অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অনেক। ভূ অভ্যন্তরের যদি পানি থাকে। ভূ অভ্যন্তরের পানি অতিরিক্ত তাপের ফলে বাষ্পে পরিণত হয়।
ভূ অভ্যন্তরের বাষ্প থাকতে পারেনা। মাটির চাপে উপরের দিকে উঠে আসে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে ফাটল এবং কম্পোনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পন থেকে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ভূগর্ভস্থ চাপ হ্রাস বা বৃদ্ধি:
ভূগর্ভে যদি বাষ্পের কারণে চাপ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশেপাশের মাটিগুলোকে ধাক্কা দিয়ে থাকে। ধাক্কার ফলে অনেক সময় কম্পন এর সৃষ্টি হয়। কম্পন থেকেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ভূগর্ভে যদি চাপ হ্রাস তাহলে শূন্যস্থান পূরণ করতে পাশের স্থান থেকে চাপ সৃষ্টি করে। এবং অনেক সময় ফাঁকা জায়গায় মাটি গুলো আসে। এভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
তাপ বিকিরণ:
আমরা আগেই জেনেছি ভূ অভ্যন্তরের অনেক তাপমাত্রা থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি কোন স্থানের তাপমাত্রা বিকিরণ বা কমে যায়। তাহলে ওই স্থানের মাটি গুলো সংকোচন হয়ে যায়। যার ফলে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। ফাঁকা জায়গা ভরাট করতে পাশ থেকে চলে আসে। মাটির স্থান পরিবর্তন এর কারণে ভূ অভ্যন্তরের কম্পন এর সৃষ্টি হয়। যার ফলে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র কি?
যখন কোন স্থানের মাটি কেঁপে ওঠে তখন আমরা সেটাকে ভূমিকম্প বলেই জানি। কিন্তু ভূমিকম্পের কিছু কারণ রয়েছে। যার ফলে নির্দিষ্ট জায়গায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূ অভ্যন্তরের। ভূ অভ্যন্তরের যে স্থানে প্রথম কম্পনের সৃষ্টি হয় সেই জায়গায় কে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলা হয়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে চারদিকে তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে একই সাথে অনেকটা জায়গা জুড়ে ভূমিকম্প দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ অভ্যন্তরের ১৬ বো কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রর অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে?
ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ঠিক সোজা ভূপৃষ্ঠে লম্বা রেখা টানলে যে স্থান পাওয়া যায় সেটাই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রে সর্বপ্রথম কোম্পানির সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছে ভুমিকম্পের উপকেন্দ্র হওয়ার ফলে ওই জায়গায় কম্পন বেশি হয়।
যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উপকেন্দ্রে বেশি হয়ে থাকে। উপকেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ঠিক তত ভূমিকম্পের মাত্রা কম হতে থাকে।
ভূমিকম্পের তরঙ্গ কি?
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ কেন্দ্র থেকে উপকেন্দ্র পৌঁছায় এবং উপকেন্দ্র থেকে বৃত্তাকার আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া তরঙ্গ কে ভূমিকম্পের তরঙ্গ বলা হয়। ভূমিকম্পের তরঙ্গ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তরঙ্গ দুটি হলো, ১. দেহ তরঙ্গ ও ২. পৃষ্ঠ তরঙ্গ
১. দেহ তরঙ্গ: ভূমিকম্পের যে তরঙ্গ গুলো কেন্দ্র থেকে উপকেন্দ্র মধ্যে সীমাবদ্ধ তাকে দেহ তরঙ্গ বলা হয়। দেহ তরঙ্গের ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কারণ এটা ভূপৃষ্ঠে কম্পণের সৃষ্টি করে না।
রিখটার স্কেল কি?
যে স্কেল বা মিটারের সাহায্যে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা যায় তাকে রিখটার স্কেল বলা হয়। অর্থাৎ ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের যন্ত্র। এই যন্ত্রটি ১৯৩৫ সালে চালস রিখটার আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারে স্কেল এর নাম করণ করা হয় রিখটার স্কেল।
এই স্কেলের পরিমাপের মাত্রা দশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একমাত্র আছে দুই মাত্রার ব্যবধান দশ গুণ ধরা হয়। এ কারণে একমাত্র ভূমিকম্প হচ্ছে দুই মাত্রার ভূমিকম্প ১০ গুণ বেশি হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টির সমস্যা সমূহ:
- ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে।
- নদীর গতিপথ পাল্টে যায়। যেমন, ১৭৮৭ সালে আসামী ব্যাপক ভূমিকম্প হয়। যার ফলে ব্রাক্ষণ নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যায় যার ফলে পানির স্রোত উল্টোদিকে শুরু হয়।
- ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় সমত্রের তলদেশ উপরে উথিত হয়, যার ফলে পাহাড়-পর্বত বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
- ভূমিকম্পের ফলে অনেক নদীর গতিবোধ পাল্টে যায় এবং নদী শুকিয়ে যায়।
- ভূমিকম্পের ফলে পর্ব থেকে বরফ গলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
- ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্প সৃষ্টির মনুষ্য কারণ:
বর্তমান সময়ে ভূমিকম্পের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এর জন্য দায়ী আমরাই। পুরো পৃথিবীর অনেকগুলো পাতের সমন্বয়ে গঠিত। পাদ গুলো অনেক সময় সঞ্চালন সঞ্চালন হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরগুলোতে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করছে। যার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি কমে যাচ্ছে।
এছাড়াও যেই পাতের উপর বিল্ডিং স্থাপন হচ্ছে সে পাদগুলো ভূগর্ভে বসে পড়ছে। এই বসে পড়ার সময় পাতে পাতে সংঘর্ষণ হচ্ছে। যার ফলে ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এছাড়াও , বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশ পারমাণবিক বোমা পরীক্ষামূলকভাবে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। যার ফলে মাটির উপরে স্তর কেঁপে উঠছে। এইভাবে ভূগর্ভের ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে যার ফলে পরবর্তী সময়ে ভূমিকম্প হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে নদীতে বিভিন্ন ধরনের টানেল তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে পানি প্রবাহের গতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৬৭ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রে কয়না নগরে বাঁধের সঞ্চিত জলের চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায়:
- বাড়ির ভেতরে ও বাহিরে নিরাপদ স্থান চিহ্নিত করে রাখুন। যাতে করে ভূমিকম্পর সময় আশ্রয় নেয়া যায়।
- ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ কারণে হাতের কাছে টর্চ লাইট রাখুন।
- বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি এবং গ্যাস সিলিন্ডার নিরাপদ দূরত্ব রাখুন ।
- জরুলি চিকিৎসার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন।
- ভূমিকম্পের সময় মজবুত কোন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
- ভূমিকম্পের সময় নিচে নামতে কোনোভাবে লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
- বাসার মধ্যে থাকলে ভূমিকম্পের সময় যত দূর সম্ভব বাসার বাহিরে যেতে হবে।
- গ্যাস সংযোগ থেকে দূরে থাকুন।
- বাসায় অবশ্যই শুকনো খাওয়ার রাখতে হবে।
শেষ কথা: ভূমিকম্প কাকে বলে এবং ভূমিকম্পের কারণ কি?
দিন দিন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। যার ফলে সব সময় সতর্ক অবলম্বন করে চলতে হবে। বিশেষ করে বহুতল ভবন থেকে দূরে থাকাই ভালো। বর্তমানে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে ভূমিকম্প থেকে বাঁচার কৌশল গুলো সকলের মেনে চলা উচিত।
ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাস আগে পাওয়া যায় না। এর কারণে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। বাসা বাড়ি তৈরির সময় সব সময় ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।