বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা

বিশ্ব অর্থনীতি কি? বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা

বিশ্ব অর্থনীতি বা বৈশ্বিক অর্থনীতি হচ্ছে সমস্ত বিশ্বব্যাপী মানুষের অর্থনীতি। এর মধ্যে রয়েছে সমস্ত অর্থনৈতিক ক্রিয়াকরাপ যা উভয় দেশের মধ্যে পরিচালিত হয়, ব্যয়, উৎপাদন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিনিময়, কাজ সহ আর্থিক মূল্যবোধ ও পণ্য বাণিজ্য।

একটি দেশের উন্নতির সূচক নির্ধারিত হয় ওই দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে কি পরিমান অবদান রাখছে তার ওপর। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিক অবস্থা তেমন ভালো না। কারণ, বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। যার প্রভাব পুরো বিশ্বে পড়ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের কিছুদিন আগে পুরো বিশ্ব ভয়াবহ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।

আরও পড়ুনঃ অর্থনীতি কাকে বলে? অর্থনীতির সংজ্ঞা এবং অর্থনীতি শব্দের অর্থ কি Class 5?

সেই সময় সফল মানুষ ঘরবন্দী ছিল। যার ফলে সফল অফিস আদালত বন্ধ ছিল। এসব কারণে, সকল ধরনের উৎপাদন বন্ধ ছিল। যার ফলে পুরো বিশ্ব এখনো চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। যার প্রভাব বর্তমান সময়ও রয়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতি কি?

অর্থনীতির ইংরেজি অর্থ হলো Economics. Economics শব্দের উৎপত্তি oikonomos শব্দ থেকে। যার অর্থ হলো “যিনি পরিবার পরিচালনা করেন”। সাধারণভাবে বলতে গেলে অর্থনীতি হল পরিবারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব। এর মাধ্যমে সীমিতি পরিমান আয়ে কিভাবে পরিবার বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যায় সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

পরিবার থেকে শুরু করে দেশ এবং পুরো বিশ্ব পরিচালনা করতে অর্থের প্রয়োজন। অর্থনীতি ছাড়া কোন দেশ বা পরিচালনা করা যায় না। একটি দেশ পরিচালনা করতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন অর্থের। অর্থ ছাড়া কোন কিছু করা যায় না।

বিশ্ব অর্থনীতি কি?

অর্থনীতি হচ্ছে একটি পরিবার পরিচালনার মূলমন্ত্রণ। অল্প আয়ের দিয়ে কিভাবে একটি পরিবার পরিচালনা করায় অর্থনীতি। একইভাবে দেশ পরিচালনা করতে অর্থনীতির প্রয়োজন। প্রতিটি দেশ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। কারণ, কোন দেশ নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ না।

দেশ পরিচালনা করতে এক দেশ থেকে অন্য দেশের পণ্য আমদানি রপ্তানি করতে হয়। যার জন্য প্রয়োজন অর্থের। এই অর্থনীতিকে বিশ্ব অর্থনীতি বলা হয়। বিশ্ব অর্থনীতি সংস্থার নাম আই এম এফ। আই এম এফ বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

সকল ধরনের হিসাব তারা প্রকাশ করে। বিশ্ব অর্থনীতি ছাড়া কোন দেশ পরিচালনা করা যায় না। প্রত্যেকটা দেশ পরিচ্ছন্ন করার জন্য প্রয়োজন বেশি অর্থনীতি।

বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিক অবস্থা

কিছুদিন আগে প্রকাশিত আইএমএফের বিশ্বরে অর্থনীতির পূর্বাভাস উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি ২০২২ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃত্তির হার হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ আর ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক হার কমার পর ২০২১ হাড়ের প্রবৃদ্ধির দাঁড়িয়ে ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার কমার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে করোনা মহামারী। কারণ, এই সময়টায় সকল কিছু বন্ধ ছিল। সকল ধরনের উৎপাদন বন্ধ ছিল। যার ফলে অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ধনী দেশ কোনটি?

 

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রভাব পড়েছে। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারী দেশ রাশিয়া। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের তেলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তারা তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কারণে বিশ্বের অনেক কল কারখানা বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সকল দেশেই অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সকল দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। সকল দেশেরই মাথাপিছু আয় কমে গিয়েছে।

এছাড়াও বর্তমান সময়ে প্রতিটা দেশেই জনসংখ্যা কমে গেছে। জনসংখ্যা কমার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে করোনা মহামারি। জনসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে প্রতিটা দেশেই কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। এবং উৎপাদন আগের তুলনায় কমে গিয়েছে। এ কারণে বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। এই সমস্যাটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব

অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব

করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। এই ভাইরাসে প্রায় দুই কোটি লোক মারা যায়। এ ভাইরাসের কারণে আমাদের সাধারণ চলাফেরার ব্যাঘাত ঘটায়। এটা শুধু আমাদের সামাজিক জীবনে না অর্থনীতি তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

কর্ম ভাইরাসের ফলে বিশ্বের প্রতিটা দেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। সকল অফিস আদালত, কল কারখানা, যানবাহন বন্ধ ছিল। অফিস আদালত কলকারখানা বন্ধ থাকার ফলে অর্থনীতির চাকা চাকা ও বন্ধ ছিল। যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান সময়ে এসেও এই সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

করোনা ভাইরাস এর কারণে প্রতিটা দেশেই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে সকল ধরনের বড় বড় প্রজেক্ট এর কাজ বন্ধ ছিল। বড় বড় প্রজেক্ট এর কাজ এর অর্থ লোন নেয়া থাকে বিভিন্ন ব্যাংক বা দেশ থেকে। প্রজেক্টগুলো কমপ্লিট না হওয়ার কারণে সেখান থেকে কোন অর্থ উপার্জন হয়নি।

কিন্তু টাকার সুদ দিতে হচ্ছে। এইভাবে দেশের প্রতিটা দেশেই অর্থনীতি সংকট দেখা দিয়েছে। করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতি পুরোপুরিভাবে অকেজ করে দিয়েছে। অনেক দেশের মাথাপিছু আয় এর চেয়ে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাস অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব ফেলেছে।

অর্থনীতিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। তাদের পরিকল্পনা ইউক্রেন তাদের দখলে আনবে। সে কারণে তাদের সাথে যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল ক্ষেত্র রাশিয়াতে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত?

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল এবং গ্যাস আমদানি করে থাকে। এছাড়াও ভোজ্য তেল আমদানি করে থাকে। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। রাশিয়া তাদের তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

তেল বন্ধ করার সবচেয়ে বড় হচ্ছে ইউক্রেন কে সমর্থন করা। যেসব দেশ ইউক্রেন কে সমর্থন করেছে তাদের কাছে সকল ধরনের রপ্তানি বন্ধ করেছে। যার প্রভাব প্রতিটা দেশেই পড়েছে। জালালীদের অভাবে অনেক কল কারখানা বন্ধ রয়েছে। এই সময় উৎপাদন অনেক কমে গেছে।

বর্তমান সময়ে চাহিদা তুলনায় সকল কিছুর ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির কারণে সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক দেশ রয়েছে তেলের অভাবে বৈদ্যুতির সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। এই সমস্যার সমাধান কারো কাছেই নেই। রাশিয়া হচ্ছে একটি সয়ন সম্পূর্ণ দেশ। তাদের কারো প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এই কারণেও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান করতে অনেক সময় প্রয়োজন। কারণ জ্বালানি তেল প্রাকৃতিক সম্পদ। যা ইচ্ছা করলেই উৎপাদন করা যায় না।

অর্থনীতির সাথে বিশ্ব ব্যাংকের সম্পর্ক:

অর্থনীতির সাথে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক খুব গভীর। বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালনা করে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংক হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি দেশের ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংকের কাজ হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা। একটি দেশ যদি ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে বিশ্ব ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের টাকার সুদের পরিমাণ অন্য ব্যাংক থেকে অনেক কম। কোন দেশ বিশ্ব ব্যাংক এর পারমিশন ছাড়া টাকা ছাপাতে পারবেনা। যদি কোন দেশ টাকা ছাপাতে চাই তাহলে যে পরিমাণ টাকা ছাপাবে ঠিক সেই পরিমাণ মূল্যের সর্ণ বিশ্ব ব্যাংক জমা দিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ আমাদের জিডিপি ছিল পুরো ইউরোপের চেয়েও বেশি

 

বিশ্বের আমদানি রপ্তানির টাকা আদান-প্রদানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। কোন দেশ বছরে কত টাকা আয় করছে সম্পূর্ণ হিসাব বিশ্ব ব্যাংকের কাছে রয়েছে। এ কারণেই বলা হয় অর্থনীতির সাথে বিশ্ব ব্যাংকের খুব গভীর সম্পর্ক। অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলা হয় বিশ্ব ব্যাংকে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা:

বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশও ২০২২ সালে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে মাথাপিছু আয় কমা। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা গুরুতর। তবে এই সমস্যাটি সামলানোর মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের একটি কৃষি প্রধান দেশ।

যার কারনে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্ন। প্রায় সকল ধরনের খাদ্য উপাদান বাংলাদেশি উৎপাদন হয়। তবে দৈনিন্দ্য জীবনে অনেক কিছু আমদানি করতে হয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক মেগা প্রজেক্ট এর কাজ চলছে। এসব মেগা প্রজেক্ট এর কাজ হচ্ছে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে।

যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কমে যাচ্ছে। তবে এসব প্রজেক্ট যদি চালু হয়ে যায় তাহলে দেশের অনেক উন্নতি হবে। তাহলে এসব সমস্যার সমাধান করা খুব সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও করোনা ভাইরাস এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব পড়েছে।

কারণ, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের কোন খনি নেই। যার কারণে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তেল আমদানি পরিমাণ কমে গিয়েছে। যার ফলে সকল ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক প্রভাব পড়েছে।

শেষ কথা: বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা

বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব প্রতিটি দেশে রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি হলে প্রতিটা দেশেরই উন্নতি হয়। বর্তমান সময়ে বেশি অর্থনীতির অবস্থা গুরুতর। এর কারণ হচ্ছে করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস দূর হতে না হতেই আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সেটা হল ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ। এই সমস্যাগুলো দূর হলেই বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতির উন্নতির জন্য প্রতিটা দেশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সকলকে অপচয় কমাতে হবে। অপচয় করার ফলে সকল পণ্যের ঘাটতি দেখা যায়। এই অভ্যাসগুলো সকলকে দূর করতে হবে।

তাহলে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবে। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *