টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
|

টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়

টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় রয়েছে। আজ আমি আলোচনা করবো টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের মাথাতেই টাক রয়েছে। টাক পড়ে সাধারণত নিজের ভুলে। প্রতিদিন 1 থেকে 2 টি চুলপড়া সাধারণ ব্যাপার। এভাবে চুল পড়লে মাথায় টাক পড়বে না।

যদি এর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যায় তাহলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় মাথায় শ্যাম্পু দিলে হাতে অনেক চুল আসে। প্রতিদিন এইভাবে চুল পড়ে তাহলে আস্তে আস্তে মাথায় টাক পড়ে যায়। টাক পড়া বন্ধের জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়।

পুষ্টির অভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে চুল পড়ে এবং আস্তে আস্তে মাথায় টাক পড়ে। সঠিকভাবে চুলের যত্ন নিলে টাক মাথায় চুল গজানো সম্ভব। টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আপনার যদি চুল পড়া মাথায় টাক থাকে তাহলে এই কোনটি আপনার জন্য। সূচিপত্রঃ

মাথা ম্যাসেজ করা: | টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়

প্রথমে মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে হবে। চুল পড়া বন্ধ না করলে নতুন চুল গজাবে সেটা পড়ে যাবে। এজন্য সর্বপ্রথম চুল পড়া বন্ধ করতে হবে। চুল পড়া বন্ধ করার প্রথম উপায় হচ্ছে নিয়মিত মাথা ম্যাসাজ করা। মাথা ম্যাসেজ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুনঃ ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

এতে করে স্ক্যাল্পে  রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং স্ক্যাল্পে উদ্দীপিত হবে। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেলে চুল পড়া কমবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এর কারণে অবশ্যই নিয়মিত মাথা ম্যাসাজ করতে হবে।

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ই ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং তার সাথে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই চুলের যত্নে ব্যাবহার করা সবচেয়ে ভালো। ভিটামিন ই চুল মজবুত ও ও শক্তিশালী করে। তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি করতে ভিটামিন ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মেথি ও  তেল:

মেথি সাধারণত চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়। মেথির ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মেথি ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে ভালোভাবে মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজিয়ে রাখা মেথি ভালো ভাবে বেটে নিতে হবে এবং তার সাথে তেল মিশ্রিত করে মাথা দিতে হবে।

মাথায় দিয়ে সর্বনিম্ন আধাঘন্টা রাখতে হবে। যেন ভালোভাবে মাথা শুকিয়ে যায়।। তারপর গোসল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন এই ভাবে ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার মাথার অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবে। নতুন চুল গজাতে শুরু করবে এবংচুল পড়া বন্ধ হবে।

মেহেদি পাতা:

মেহেদি পাতা চুল পড়া বন্ধ, রং করা, চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। মেহেদি পাতা একসাথে অনেক ধরনের কাজ করে। নিয়মিত মেহেদি পাতা ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা থাকে। মেহেদি পাতার ব্যবহারের নিয়ম।

প্রথমে ভালোভাবে মেহেদি পাতা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শিলনোড়া বেটে নিতে হবে। মেহেদি পাতা বাটা সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেটা ভালো মসৃণ হয়। ভালোভাবে মসৃণ করে না বাটলে মাথায় দিতে সমস্যা হয়।

মেহেদি পাতা মাথায় দেওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে মাথায় রাখতে হবে। মাথায় মেহেদি পাতা শুকিয়ে গেলে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত সপ্তাহে 2 দিন করে ব্যবহার করতে হবে। দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার  করলে আপনার চুলের অনেক পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

মধু ও অলিভ অয়েল

মধু  ও অলিভ অয়েল চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মধু ও অলিভ অয়েল ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে মধু ও অলিভ অয়েল সমপরিমাণ নিতে হবে। আস্তে আস্তে ভালোভাবে মিশ্রিত করতে হবে। 

এরপর পুরো মাথা ভালোভাবে দিতে হবে। এই মিশ্রণ 20 থেকে 25 মিনিট মাথায় দিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একটি করে তিন থেকে চার মাস ব্যবহার করলে এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়

কিন্তু ব্যবহার করার আগে খেয়াল রাখতে হবে মধু  ও অলিভ অয়েল এর মধ্যে ভেজাল না থাকে। ভেজাল জিনিস ব্যবহার করলে চুল পড়া বেড়ে যাবে। এইজন্য সব সময় অরিজিনাল জিনিস ব্যবহার করতে হবে।

পেঁয়াজ

নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে টাক মাথায় নতুন করে চুল গজায়। ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর ভালো করে বেটে  নিতে হবে।

বাটা পেঁয়াজ থেকে রস বের করতে হবে। পেঁয়াজের রস সকাল-বিকাল পুরো মাথা ব্যবহার করতে হবে। এটা ব্যবহার করতে হবে তেলের মতো করে। এইভাবে এক মাস ব্যবহার করলে বুঝতে পারবে মাথায় নতুন করে চুল গজাতে শুরু করেছে।

আমলকি

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন-সি চুল পড়া বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে বা ব্যবহার করলে মাথায় নতুন চুল গজায়। আমলকি হচ্ছে ভিটামিন সি এর বড় উৎস। আমলকি সাধারণ চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়।

আমলকি ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, এটা ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। তারপর আমলকির রস ভালো  ভাবে মাথায় দিতে হবে। আমলকির রস শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে মাথায় ধুতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজায়।

ডিম

চুল পড়া বন্ধে এবং নতুন চুল গজাতে ডিম খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ডিম ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে ডিম ভাঙতে হবে। তারপর ডিম থেকে সাদা অংশ বের করে নিতে হবে।

সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর  পুরো  মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন করে কয়েক মাস ব্যবহার করলে মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করে।

নতুন চুল গজাতে খাদ্য তালিকা:

ভিটামিনের অভাবে মাথার চুল পড়ে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সমস্যা করে। একারণে নতুন চুল গজাতে হলে প্রথমে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টির অভাবে মাথার চুল পড়ে যায়। যেসব খাবার খেলে মাথার চুল নতুন করে গজায় তার তালিকা করা হলো।

  •  প্রোটিন
  •  আয়রন এবং জিস্ক
  •  ভিটামিন সি
  • ভিটামিন ই

উপরে যে কয়টি ভিটামিন এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সবগুলোই চুল পড়া বন্ধ এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নিচের ভিটামিন গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

প্রোটিন

নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। চুল মূলত কেরাটিন দিয়ে গঠিত। অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরনের প্রোটিন। এই জন্য নতুন চুল গজানোর জন্য শরীরের অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে।

প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে শরীরে অ্যামিনো এসিড তৈরি করে। চুল পড়া বন্ধ করতে অবশ্যই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। প্রোটিনযুক্ত খাবার খাচ্ছে, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম। খাদ্যতালিকায় অবশ্যই এসব খাবার রাখতে হবে।

আয়রন এবং জিস্ক

আয়রন এবং জিস্ক চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।  মাথার কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে  আয়রন এবং জিস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিমাণমতো আয়রন যদি শরীরে না থাকে তাহলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

পরিমিত পরিমাণ আয়রন এবং জিস্ক নতুন এবং দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে। এসব উপাদান পাওয়া যায় মটরশুটি, বাদাম, কালোজিরা, মাংস, কচু পাতা ইত্যাদি।

ভিটামিন সি

ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তার সাথে চুল পড়া বন্ধ করে। ভিটামিন সি পাওয়া যায় লেবু, পেয়ারা, কমলা, আনারস ইত্যাদি। তাই সকল ধরনের সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। নতুন চুল গজাতে ভিটামিন সি সাহায্য করে।

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই সাধারণত চুলে ব্যবহার করা হয়। ভিটামিন ই চুলের জন্য খুব ভালো কাজ করে। ভিটামিন-ই চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই রূপচর্চা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চুলের সমস্যা হলে ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল মাথা দিতে হবে। তাহলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।

সাধারণ কিছু যত্ন

চুলের যত্নের অভাবে অনেক সময় মাথার চুল পড়ে যায়। চুলের যত্ন বলতে সাধারণত আমরা বুঝি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। চুল পড়া বন্ধ করতে নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয়। গোসল করার পর ধীরে ধীরে চুল মুছতে হবে। চুল

পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে চুল ছোট করে রাখতে হবে। ছোট চুল সাধারণত ঝরে কম পড়ে। নিয়মিত মাথায় তেল ব্যবহার করতে হবে। চুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে চুলের গোড়ায় কোন সমস্যা হয় না যার ফলে চুল পড়া কমে যায় এবং নতুন চুল গজানো শুরু করে।

শেষ কথাঃ টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়

টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে উপরে যে সব আলোচনা করলাম আমার বিশ্বাস আপনারা যদি সেগুলো মেনে চলেন অবশ্যই আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করবে। এবং যাদের মাথার চুল পড়ে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।

চুল পড়ে যায় সাধারণত নিজের কারণে। নিজে সচেতন হোন তাহলে আর পড়বে না। চুল পড়া বন্ধ করতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এবং মাথা ম্যাসেজ করার সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি  এসব ব্যবহার করতে হবে। সম্পূর্ন পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *